নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ জানুয়ারি, ২০২১ ১৪:৫০

তারাপুর চা বাগানের দায়িত্ব নিলো ব্যবস্থাপনা কমিটি

অবশেষে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বহুল আলোচিত সিলেট নগরীর তারাপুর চা বাগানের দেবোত্তর সম্পত্তি হস্তান্তর ও পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত ১৪ জানুয়ারি শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ জিউ দেবোত্তর সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত শন্তুর কাছে দেবোত্তর সম্পত্তি হস্তান্তর করেন সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্ত।

এর আগে গত বছরের ৬ অক্টোবর দেবোত্তর সম্পত্তি ঘোষিত এই বাগান পরিচালনার লক্ষ্যে ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেন হাই কোর্ট। তাতে বলা হয়, সভাপতি এই কমিটির নির্বাহী প্রধান হিসেবে থাকবেন। সভাপতির নির্দেশে সচিব/সেক্রেটারী সার্বিক দায়িত্ব পালন করবেন। এই ব্যবস্থাপনা কমিটিই শ্রী শ্রী রাধা কৃষ্ণ জিউ দেবতার পূজারীসহ অন্যান্য সেবায়েত নিয়োগ করবেন। ব্যবস্থাপনা কমিটিম সচিব/সম্পাদক তারাপুরের দেবোত্তর সকল স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব ও দলিলাদি সংরক্ষণ করবেন এবং অপদখলীয় সম্পত্তির তালিকা প্রস্তুত করবেন এবং দেবোত্তর সম্পত্তির একটি পূণাঙ্গ তালিকা সিলেটের জেলা জজ এর কাছে জমা দেবেন। ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমোদন ছাড়া তারাপুরের দেবোত্তর সম্পত্তির বিক্রয়, লিজ বা হন্তান্তর করা যাবে না। ওই রায়ে তারাপুর চা বাগান থেকে জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সব স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়।

এই নির্দেশনার প্রেক্ষিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নারায়ণ চন্দ্র সাহাকে সভাপতি করে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। যার সাধারণ সম্পাদক সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত শন্তু।

গত ১১ জানুয়ারি সিলেটের জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল ইসলামের কার্যালয়ে শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ জিউ দেবোত্তর সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা কমিটির ৮ সদস্যের উপস্থিতে এই হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ সময়  জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল ইসলাম ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের সাথে কথা বলেন। পরে গত ১৪ জানুয়ারি কমিটির সদস্যরা সরেজমিনে সিলেট নগরীর তারাপুর চা বাগানের শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ জিউ দেবোত্তর সম্পত্তি ঘুরে দেখেন এবং হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এ সময় তৎকালীন সেবায়েত পংকজ কুমার গুপ্তও উপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ জিউ দেবোত্তর সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শান্তনু দত্ত শন্তু সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, বৃহস্পতিবার বৈঠক শেষে কমিটির ৮ সদস্য তারাপুর চা বাগান পরিদর্শন করেছেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। কমিটির তৃতীয় সভা আগামী ২৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান তিনি।

১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সদস্যরা হলেন, সভাপতি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. নারায়ণ চন্দ্র সাহা, সহ সভাপতি এডভোকেট নিলেন্দ্র দে, সাধারণ সম্পাদক সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত শন্তু, সহ-সাধারণ সম্পাদক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জকিগঞ্জ সার্কেল) সুদীপ্ত রায়, কোষাধ্যক্ষ শ্রী শ্রী জগবন্ধু সুন্দর ধামের অধ্যক্ষ বন্ধুপ্রীতম ব্রহ্মচারী, সদস্য সিলেট যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র সহকারি জজ নির্জন কুমার মিত্র, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের সাবেক পরিচালক ডা. বনদ্বীপ লাল দাস, চৈতন্য কালচারাল সোসাইটির অধ্যক্ষ শ্রীমদ ভক্তি অদ্বৈত নবদ্বীপ স্বামী মহারাজ, সিলেট মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অধ্যাপক নন্দলাল শর্মা। এছাড়া প্রয়াত বৈকুন্ঠ চন্দ্র গুপ্তের একজন উত্তরাধিকারী (এখনো নাম জানা যায়নি) ও সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের কারণে তাদের সদস্য এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।

দেবোত্তর সম্পত্তি হস্তান্তরের ব্যাপারে তারাপুর চা বাগানের তৎকালীন সেবাইত পঙ্কজ কান্তি গুপ্ত জানান, ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তাকে সেবায়েত হিসেবে তার কাছে দেবোত্তর সম্পত্তি হস্তান্তর করা হয়েছিলো। রিভিউ পিটিশন রায়ে অনেক কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। এ রায়ে হঠাৎ করে পারিবারিক দেবোত্তর সম্পত্তিকে পাবলিক দেবোত্তর দেবোত্তর সম্পত্তি বলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তাকে সেবায়েত হিসেবে বলা হলেও সম্প্রতি গঠিত ১১ সদস্য বিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা কমিটিতে তাকে রাখা হয়নি। এবিষয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় লড়ে যাওয়ার কথাও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, তারাপুর চা বাগানের মালিক বৈকুণ্ঠ চন্দ্র গুপ্ত ১৯১৫ সালের ২ জুলাই তারাপুর চা বাগানসহ তার সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ জিউর দেবতার নামে রেজিস্ট্রি দানপত্র করে দলিল করে দেন। বৈকুণ্ঠ গুপ্তর ছেলে রাজেন্দ্র গুপ্ত ও তার তিন ছেলে শহীদ হন। তার তিন মেয়েকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে পাক সেনারা। ১৯৮২ সালে রাজেন্দ্র গুপ্তর ছেলে পঙ্কজ গুপ্ত ভারতে চলে যান। এ সময় পার্শ্ববর্তী মালনীছড়া চা বাগানের স্বত্বাধিকারী রাগীব আলীকে তারাপুর চা বাগান দেখভালের দায়িত্ব দিয়ে যান। এরপর পাওয়ার অব অ্যাটর্নি মূলে দেবোত্তর সম্পত্তির সেবায়েত বনে যান দেওয়ান মেস্তাক মজিদ। তিনি রাগীব আলীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। তিনি রাগীব আলীকে ৯৯ বছরের জন্য বাগানটি লিজ প্রদান করেন। ১৯৯০ সালে বাগানটির দখল নেন শিল্পপতি রাগীব আলী। আদালতের রায়ে ওই দখলকে প্রতারণামূলক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত