নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ জানুয়ারি, ২০২১ ১৪:৫৬

ফুল আর পতাকায় নিজাম উদ্দিন লস্করকে শেষ শ্রদ্ধা

শহিদ মিনারে মানুষের ঢল

অশ্রুসিক্ত নয়নে সিলেটের সর্বস্থরের মানুষ শেষ বিদায় জানালো যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযুদ্ধা সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অন্যতম অভিভাবক নিজামউদ্দিন লস্কর ময়নাকে। সোমবার  সকাল সাড়ে ১১ টা থেকে লোকে লোকারণ্য ছিল সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গন। তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ নাট্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সকলের উপস্থিতি ছিল শহিদমিনারে।

সকাল সাড়ে ১১টায় সিলেটের অতিরিক্ত জেলা মাজিষ্টেট এর নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে বীর এই যোদ্ধাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। বিউ-গুলের বাসির সুরে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মেয়র সিলেট সিটি কর্পোরেশন, মহানগর কমান্ডের বীর মুক্তিযুদ্দাবৃন্দ, সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, জেলা পরিষদ সিলেট,জাসদ সিলেট জেলা ও মহানগর। বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টি, বাংলাদেশ জাসদ, বাসদ, সিলেট জেলা প্রেসক্লাব, বাংলাদেশ বেতার সিলেট কেন্দ্র, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী সিলেট জেলা,বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সিলেট, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেট, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট, সিলেট স্টেশন ক্লাব লিঃ, সিলেট ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার সিলেট বিভাগ, বাংলাদেশ আবৃত্তি সংসদ, সিলেট জেলা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন সহ প্রায় পঞ্চাশ টি সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান তার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পন করেন।

সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট এর ব্যবস্থাপনায় বেলা সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত শদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময়ে সহকর্মী, শুভানুধ্যায়ী অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। নিজামউদ্দিন লস্কর ছিলেন একজন লেখক, নাট্যকার, নির্দেশক, অনুবাদক। এছাড়াও তিনি ফটোগ্রাফিতে ছিলেন দক্ষ। বিশ্বের প্রায় আটটি ভাষা তিনি জানতেন, দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের মার্চে তার নিজের লেখা ‘রক্ত পলাশ"’ নাটকে তিনি নির্দেশনা দেন। ১৯৬৪ সালে ‘পরাজয়’ নাটকের মধ্য দিয়ে তাঁর নাটকে যাত্রা শুরু।

১৯৫২ সালের ৯ এপ্রিল জন্ম নেওয়া নিজামউদ্দিন লস্কর ৫ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে সবার বড়। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ভারতের মেঘালয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৫নং সেক্টরের অধীনে বালাট সাব-সেক্টরে যোগদান করে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ৭১’র ১৬ আগষ্ট সিলেট সুনামগঞ্জ সড়কের জয়কলশ যুদ্ধে সম্মুখ সমরে গুলিবিদ্ধ হয়ে যুদ্ধের মাঠ থেকে বিদায় নিয়ে ভারতের মেঘালয়ে শিলং মিলিটারি হসপিটালে ভর্তি হন। অপারেশনে সুস্থ হয়ে তিনি সেক্টর হেড কোয়ার্টারে যোগদান করেন।

সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার বহুমাত্রিক গুণাবলী সকলকে প্রাণিত করত। তিনি সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট’র সভাপতি ও পরবর্তীতে প্রধান পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন নাটক অনুবাদ-রূপান্তর ছাড়াও তিনি লেখালেখিতে ছিলেন খুবই মনোযোগী ও সুলেখক। বাংলাদেশ বেতার সিলেট কেন্দ্রের নাট্যশিল্পী ছাড়াও বহুনাটক প্রযোজনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন। জেলা শিল্পকলা একাডেমী, সিলেট মিরর সম্মাননা সহ বহু সংগঠন থেকে সম্মানিত ও সংবর্ধিত হয়েছেন।

সোমবার বাদ যোহর হযরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহ মসজিদে তাঁর জানাযার নামাজ শেষে দরগাহ গোরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত