নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ জানুয়ারি, ২০২১ ১৭:২৮

অনন্ত বিজয় হত্যা : ফের অনুপস্থিত সাক্ষী

বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ আবার পিছিয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) সাক্ষ্যগ্রহণের নির্ধারিত তারিখে কোনো সাক্ষী হাজির না হওয়ায় সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে দেন সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল আমিন বিপ্লব।

এদিকে নানা অজুহাতে বারবার মামলার তারিখ পিছিয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকা্শ করেছেন অনন্ত বিজয় দাশের স্বজনরা। ৫ বছরেও এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ না হওয়ায় হতাশা তাদের কণ্ঠে।

অনন্ত বিজয় দাশের ভগ্নিপতি সমর বিজয় শী শেখর বলেন, কখনো আসামী অনুপস্থিত আবার কখনো সাক্ষী অনুপস্থিত থাকার কারণে বারবার মামলার কার্যক্রম পিছিয়ে যাচ্ছে। এতে করে বিচার প্রাপ্তি নিয়েই শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, ছেলে হত্যার বিচার না দেখেই মারা গেছেন অনন্ত বিজয়ের বাবা। তার মাও শয্যাশায়ী।

জানা যায়, ২০১৮ সালের ৭ মে সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে এই মামলার সর্বশেষ সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। এরপর সাক্ষীদের অনুপস্থিতির কারণে বারবার বারবার পিছিয়ে যায় সাক্ষ্যগ্রহণ। দীর্ঘদিন সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলার পর দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গতবছর মামলাটি সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে। তবে করোনার কারণে গতবছর দীর্ঘদিন আদালতের কার্যক্রম বন্ধ ছিলো।

এরআগে গত ৩ জানুয়ারি এই মামলায় একজনের সাক্ষ্যগহণ করা হয়েছিলো। এ পর্যন্ত চাঞ্চল্যকর এই মামলার ১৬ জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম বলেন, এই মামলায় মোট ২৯ জন সাক্ষী রয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচ বছরে মাত্র ১৬ জন সাক্ষ্য প্রদান করলেন। নানা কারণে বারবার সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে যাওয়ায় বিচার প্রকিয়া বিলম্বিত হচ্ছে।

প্রসঙ্গত,  ২০১৫ সালের ১২ মে সকালে সিলেট নগরীর সুবিদবাজারে নিজ বাসার সামনে খুন হন বিজ্ঞান লেখক ও গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক অনন্ত বিজয় দাশ। কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হলে উগ্রবাদীরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে।

সুবিদবাজারের রবীন্দ্র কুমার দাশ ও পীযূষ রানী দাশের দুই মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে অনন্ত ছিলেন সবার ছোট। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে মাস্টার্স করার পর সুনামগঞ্জের জাউয়াবাজারে পূবালী ব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসেবে যোগ দেন তিনি।

হত্যাকাণ্ডের দিনই অনন্তের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাত চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে এতে অভিযোগ করা হয়।

মামলাটি পুলিশ থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর হয়। সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী তদন্ত করে ২০১৭ সালের ৯ মে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে সন্দেহভাজন আটক ১০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।

অভিযুক্ত ৬ জন হলেন- সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন (২৫), খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ (২৭), সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বীরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ (২৫), কানাইঘাটের পূর্ব ফালজুর গ্রামের মান্নান ইয়াইয়া ওরফে মান্নান রাহী ওরফে এবি মান্নান ইয়াইয়া ওরফে ইবনে মঈন (২৪), কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ (২৫) ও সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকায় বসবাসকারী সাফিউর রহমান ফারাবী ওরফে ফারাবী সাফিউর রহমান (৩০)।

এর মধ্যে আবুল, ফয়সাল ও হারুন পলাতক। ফারাবী ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলারও আসামি। অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে মান্নান রাহী আদালতে অনন্ত হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর মান্নান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত