সিলেটটুডে ডেস্ক

২৮ ফেব্রুয়ারি , ২০২১ ২৩:১০

আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে চুনাপাথর উত্তোলনে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ

সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন

উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিলুর রহমান চুনাপাথর উত্তোলনে বাধা সৃষ্টি, রাতের আধারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা আদায় এবং কোম্পানির স্টাফদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন মেসার্স জালালাবাদ লাইম মেনুফ্যাকচারার্স এন্ড ট্রেডিং এসোসিয়েশনের ব্যবস্থাপনা অংশীদার মো. আফছার উদ্দিন।

রবিবার দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, খনিজ সম্পদ উত্তোলনের জন্য ১৯৭২ সালে গোয়াইনঘাট উপজেলাধীন চৈলাখেল মৌজার ৩য় খন্ডে ৬ দশমিক ৭৫ একর ভূমি মেসার্স জালালাবাদ লাইম মেনুফ্যাকচারার্স এন্ড ট্রেডিং এসোসিয়েশনের নামে অধিগ্রহণ করা হয়। এছাড়া খনিজ সম্পদ উত্তোলনের জন্য জাফলং পাথর কোয়ারিতে ৭৮ দশমিক ২৭ একর ভূমি সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষ থেকে লিজ প্রদান করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে মো. আফছার উদ্দিন বলেন, মাইনিং প্রজেক্ট হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে এখানে চুনাপাথর উত্তোলন করা হলেও প্রশাসনের একটি দুর্নীতিবাজ চক্র চুনাপাথর উত্তোলনে বাধা প্রদান করতে থাকে। বাধ্য হয়ে আমরা ২০০৭ সালে হাইকোর্টের শরণাপন্ন (রিট আবেদন ৯৯৬১/২০০৭) হই। হাইকোর্ট পাথর উত্তোলনে বাধা না দেওয়ার নির্দেশনা দেন। এ সময় উক্ত এসোসিয়েশনের লিজ বাতিল হয়ে গেছে বলে খনিজ সম্পদ ব্যুরো থেকে জানানো হয়। এ ব্যাপারে হাইকোর্টে রিট পিটিশন (রিট নং-৩২১৮/২০২০) দাখিল করলে হাইকোর্ট লিজ বাতিলের চিঠিকে অবৈধ এবং আমাদেরকে ভোগ দখল বজায় রাখার আদেশ প্রদান করেন।

মো. আফছার উদ্দিন আরও বলেন, উক্ত জায়গা ইসিএ ভুক্ত নয়। এর দালিলিক প্রমাণও রয়েছে। ইতোমধ্যে বারবার জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবগতিপত্রও প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসন সহযোগিতা না করে পুলিশ দিয়ে আমাদের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। ইতিপূর্বে আমরা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে চুনাপাথর উত্তোলনে বাধা প্রদান না করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি।

চুন তৈরির প্রধান কাচামাল চুনাপাথর সরবরাহের অভাবে ইতোমধ্যে ছাতক চুন ফ্যাক্টরিসহ দেশের চুন শিল্প এখন ধ্বংসের পথে। অথচ শিল্প কারখার অন্যতম র’ মেটেরিয়ালস হচ্ছে চুন।

উপজেলা প্রশাসনের অভিযানের সমালোচনা করে এসোসিয়েশনটির ব্যবস্থাপনা অংশীদার মো. আফছার উদ্দিন বলেন, ‘বিগত ২২ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টায় গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টাস্কফোর্সের নামে সাইটে গিয়ে পে-লোডারে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি ড্রাইভারসহ কোম্পানির স্টাফদের ডেকে নিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন এবং আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। আমার হাতে হাতকড়া পরানোর নির্দেশ দেন এবং পানি চলাচলের রাস্তা বন্ধের অভিযোগ করে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করেন। উপস্থিত সময়ে টাকা পরিশোধ না করলে কারাগারে প্রেরণের কথাও বলেন।

আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দেওয়ায় আমরা হতভম্ব হই। বিনীতভাবে মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ এবং কাগজপত্রের কথা বললেও তিনি আদালতের রায় নিয়ে দম্ভোক্তি করেন।’ এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আচরণের ভিডিও ফুটেজ এসোসিয়েশনে সংরক্ষিত আছে বলে তিনি জানান।  
তিনি বলেন, ‘জলাধার বন্ধ করার অজুহাতে যে জরিমানা করা হয়েছে, সেটিও ইউএনওর মনগড়া। পানি চলাচলের জন্য আগের দিন আমরা বড় পাইপ স্থাপন করেছি। এর প্রমাণও রেকর্ড করা ভিডিওতে রয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আফসার উদ্দিন জানান, চুনাপাথর, পাথর ও বালু সিলেট বিভাগের অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ। পাথর যে পদ্ধতিতে উত্তোলন হয়, একইভাবে বালুও উত্তোলন করা হয়। বালুর ক্ষেত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, কিন্তু চুনাপাথর ও পাথর নিয়েই যত বিধি-নিষেধ।

চুনাপাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় কাঁচামালের অভাবে অনেকগুলো কারাখনা বন্ধ রয়েছে বলে তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানান।

আফসার উদ্দিন বলেন, ‘পাথর কোয়ারিগুলো বন্ধের নেপথ্যে রয়েছে বিদেশ থেকে পাথর আমদানির সিন্ডিকেট। আর এই চক্রের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে আমাদের প্রশাসন। তা না হলে শত অভিযোগ করা সত্ত্বেও যেখানে প্রশাসনের টনক নড়ানো যায় না, সেখানে রাতের বেলা টাস্কফোর্সের অভিযান অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ। নিশ্চয় এখানে তৃতীয় কোনো পক্ষকে তুষ্ট করার প্রবণতা লুকায়িত আছে।’ হাইকোর্টের আদেশ থাকা সত্ত্বেও বিনা নোটিশে রাতের আঁধারে পরিচালিত অভিযানের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন তিনি। কোর্টের আদেশ বাস্তবায়ন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রতিষ্ঠানটির অংশীদার মো. আব্দুল মমিন চৌধুরী, শিবলী চৌধুরী। প্রষ্ঠিানের কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী, ইমন আহমদ আবিদ, মো. সোহেল আহমদ ও মাসুম আহমদ মুসা প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত