তাহিরপুর প্রতিনিধি

০৫ মার্চ, ২০২১ ২০:৪০

নদী ভাঙনে হুমকিতে সাতটি গ্রাম

নদী ভাঙনের কবলে হুমকিতে পড়েছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরী, বাদাঘাট ও তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম। নদী ভাঙন আতংকে রয়েছে এসব গ্রামের অন্তত ৫শতাধিক পরিবার।  ইতোমধ্যে আবাদি জমি, ফলের বাগান, বাঁশ ঝাড়, ঘর-বাড়িসহ অনেক স্থাপনা চলে গেছে যাদুকাটা ও বৌলাই নদীর গর্ভে।

ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া না হলে আসছে আগামী বর্ষাকালে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে এসব গ্রামের বাসিন্দারা।
 
ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদী ও শাখা বৌলাই নদী থেকে অপরিকল্পিত বালু ও পাথর উত্তোলন করার ফলে ও ঢলে ২০০৪সাল থেকে যাদুকাটা-বৌলাই নদীতে ভাঙন দেখা দেয়। ভঙন ক্রমেই গ্রাস করছে দক্ষিণকুল, মাহতাবপুর, পিরিজপুর, ফাজিলপুর, ধুতমা, সোহালা, মিয়ারচরসহ সাতটি গ্রাম নদী ভাঙনের কবলে পড়ে।

অব্যাহত নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি ও কৃষির উপর নির্ভশীল মানুষগুলোর আবাদি জমি। ফলে নদীর পাড়ের প্রায় ২ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ভাঙনে হুমকিতে রয়েছে অনেকের আবাদি জমি ও বসতভিটা। ইতোমধ্যে গ্রামগুলোর তিনশত বিঘার বেশি আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে বলে ওই এলাকার ভুক্তভোগী লোকজন জানিয়েছেন। ফলে ঘর বাড়ি হারা মানুষ গুলো যাদের টাকা আছেন তারা হাওরে গিয়ে ঘর তৈরি করছে আর যাদের টাকা নেই তারা আত্নীয় স্বজন ও আশপাশের বাড়িতে বসবাস করছে।

ধুতমা গ্রামের কালাম মিয়া, জাহান মিয়া জানান, নদী ভাঙ্গনে আমার বাড়িটি এখন ভাঙ্গনের পথে। নদীতে বাড়িটি বিলীন হলে আমার আর যাওয়ার জায়গা তাখবে না। আর ভাঙনে আবাদি জমি, ফলের বাগান, বাঁশ ঝাড়, জমিজমা হারিয়ে অনেকে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। এছাড়া পাহাড়ি ঢলের তোড়ে আসা বালু ফসলি জমিতে পড়ছে। ফলে চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে পড়ছে জমি।

দক্ষিণকুল গ্রামের বাসিন্দা খালেদা বেগম বলেন, ২০০৪ সাল হতে নদী ভাঙন শুরু হয়। গত কয়েক বছরে বৌলাই নদীর অব্যাহত ভাঙনে আকারে অর্ধেক হয়ে গেছে। এই ভাঙনের কবল থেকে কিছুই বাদ যাচ্ছে না। আমার বাড়িটিও এখন ভাঙতে শুরু করেছে। কিন্তু সরকারি ভাবে এই দুর্ভোগ লাগবে কোন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নি।

নদী ভাঙ্গনের শিকার নজির হোসেন বলেন, এই নদী ছোট ছিল ভাঙতে ভাঙতে এখন নদী বিশাল আকার ধারণ করেছে। নদী ভাঙ্গনে মসজিদ, বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। আমরা এলাকাবাসী বেশ কয়েকবার ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন মহলের কাছে পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু কোন প্রকার সুফল আজও পাইনি।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদ্মাসন সিংহ বলেন, নদী ভাঙন প্রতিরোধে ভাঙ্গকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, সুনামগঞ্জ জেলার ভাঙন কবলিত যে সকল জায়গাগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ছিল সেসব এলাকার জন্য একটি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছি। এছাড়াও অন্যান্য ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় একটি নতুন প্রকল্প তৈরির জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি পরিদর্শনে আসলে তখন আমরা ভাঙন নিয়ে একটি রিপোর্ট করবো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত