নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ মার্চ, ২০২১ ০০:৩৭

শাল্লার তাণ্ডবের পরও এলাকায় নেই সাংসদ জয়া

শাল্লায় হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করছেন। তবে এলাকায় অনুপস্থিত দিরাই-শাল্লার সসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্ত।

এরকম বর্বোরিচত ঘটনার ৫ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এলাকায় আসেননি তিনি। এ ব্যাপারে শনিবার ও রোববার জয়া সেনগুপ্তের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল ধরেননি।

শাল্লার ঘটনার ব্যাপারে এতদিন কোনো মন্তব্যও করতে দেখা যায়নি জয়াকে। তবে চারদিন পর শনিবার নীরবতা ভেঙে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠিয়েছেন তিনি। বিবৃতিতে শাল্লার হামলার সাথে জড়িত সকলকে বিচারের আওতায় আনা হবে বলেও জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে নিজে অসুস্থ উল্লেখ করে জয়া সেনগুপ্ত লিখেন, অসুস্থতাজনিত কারণে এলাকার দুঃসময়েও সশরীরে পাশে দাঁড়াতে না পেরে আমি অত্যন্ত দুঃখিত ও মর্মাহত। আমি আশা করছি সৃষ্টিকর্তার কৃপায় দ্রুত সুস্থ হয়ে আপনাদের কাছে ফিরে আসতে পারব।

জয়া সেনগুপ্ত প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। ২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান সুরঞ্জিত। এরপর উপনির্বাচনে স্বামীর আসনে সাংসদ হন জয়া। পরের জাতীয় নির্বাচনেও দিরাই-শাল্লা আসন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাংসদ নির্বাচিত হলেও জয়া সেনগুপ্ত বেশিরভাগ সময়ই ঢাকায় থাকেন। তার অনুসারী নেতারাই দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। সুরঞ্জিত সেনের মৃত্যুর পর দিরাই-শাল্লার আওয়ামী লীগেও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। সাংসদের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই এই বিভক্তি প্রবল হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় নেতাদের। অসুস্থ জয়া বর্তমানে ঢাকায় আছেন বলে জানিয়েছেন তারা।

রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্ত বলেন, সম্প্রতি দিরাইয়ে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি সংগঠনের এক কেন্দ্রীয় নেতাকে কটূক্তি করে ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসে এলাকায় ক্ষোভ তৈরি হলে তাৎক্ষণিকভাবে স্ট্যাটাস প্রদানকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কাউকে কটূক্তি করা নিঃসন্দেহে কুরুচিপূর্ণ মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। তবে ব্যক্তি কারও অন্যায়ের দায়ভার কোন গোষ্ঠী, সম্প্রদায়কে যেন নিতে না হয়। অন্যায়কারী যে দলেরই হোক তাকে শাস্তি পেতেই হবে।

তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা দিরাই ও শাল্লা উপজেলার জনসাধারণ অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করে বসবাস করে আসছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এখনও এ এলাকায় ধর্ম, বর্ণ ও জাতি গোষ্ঠীর সুন্দর সম্মিলন ও চলাফেরা রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি এই ঐক্য ও সম্প্রীতির সেতুবন্ধনে কিছু অসাধু, ক্ষমতাপিপাসু, ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাসী ও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলকারীরা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে। শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে হিন্দু বসতবাড়িতে অতর্কিতভাবে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা এরই একটি অংশ। আমি এই ঘৃণ্য অপকর্মের তীব্র নিন্দা জানাই।

জয়া বলেন, আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, ইতোমধ্যে পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ঐকান্তিক চেষ্টায় ও আপনাদের সার্বিক সহযোগিতায় অপরাধীদের অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনার অপরাধী ও মদদদাতাদের চিহ্নিত করে দ্রুত সময়ে শাস্তি নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই অমানবিক ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। আমিও ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গেই জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনওদ্বয় ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদ্বয়কে বিষয়টি অবগত করেছি ও অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছি। যারা গ্রামবাসীর দুঃসময়ে তাৎক্ষণিক পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত