নিজস্ব প্রতিবেদক

০৯ নভেম্বর, ২০১৫ ১৭:০৯

আক্ষেপ নিয়েই চলে গেলেন আসমা কিবরিয়া

আক্ষেপ নিয়েই চলে গেলেন আসমা কিবরিয়া। পথে পথে ঘুরেও স্বামী হত্যার বিচার পাননি তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন তাঁর স্বামী শাহ এএমএস কিবরিয়া। সেই আওয়ামী লীগ পুণরায় ক্ষমতায় আসলে আশায় বুক বেঁধেছিলেন আসমা কিবরিয়া। কিন্তু সে আশারও গুড়েবালি। টানা দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। তবু এখনো শেষ হয়নি কবরিয়া হত্যা মামলার বিচার কাজ। স্বামী হত্যার বিচার না দেখেই চলে যেতে হলো আসমা কিবরিয়াকে।

আজ সোমবার সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এই চিত্রশিল্পী। তিনি হৃদরোগে ভূগছিলেন।

২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদরের বৈদ্যের বাজারে এক জনসভায় গ্রেণেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়মী লীগ নেতা শাহ এএমএস কিবরিয়া। স্বামীর মৃত্যুর পর বিচারের দাবিতে আন্দোলনে রাস্তায় নেমে আসেন চিত্রশিল্পী স্ত্রী।

হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ‘শান্তির স্বপক্ষে নীলিমা’ ও ‘রক্তের অক্ষরে শপথের স্বাক্ষর’ নামক অভিনব ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করেন তিনি। দেশজুড়ে এসব কর্মসূচীতে ব্যাপক সাড়া পড়ে। শিক্ষিত ও সচেতন জনগোষ্ঠি আসমা কিবরিয়া কর্মসুচীতে সম্পৃক্ত হয়ে কিবরিয়া হত্যার বিচারের দাবি তোলে। তবে নানা টালবাহানায় পিছিয়ে যায় বিচার। প্রথমে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে রাজনৈতিক মদদে আটকে থাকে বিচার কাজ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরও অজ্ঞাত কারণে কিবরিয়া হত্যা মামলা বারবার পিছিয়ে যায়। কয়েক দফা অভিযোগপত্র প্রদান আর বাদীপক্ষের নারাজি আবেদনের মধ্যদিয়েই চলে যায় আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদকাল।

সম্প্রতি সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক প্রধামন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সিলেট সিটির সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জিকে গৌছ, হুজি নেতা মুফতি হান্নানদের আসামী করে সম্পূরক চার্জশীট প্রদান করে সিআইডি। এই চার্জশীট আদালতে গৃহিত হয়ে সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যালে বিচার কাজ শুরু হয়েছে। তবে আসামীদের অনুপস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে এ আদালতেও মামলার তারিখ বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে। ফলে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে কিবরিয়া হত্যা মামলাটি স্থানান্তর হলেও আদৌ বিচার কাজ দ্রুত সম্পন্ন হবে কী না এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

তবে আসমা কিবরিয়া আর বিচারের অপেক্ষায় থাকেননি। ১০ বছরের নিসঙ্গতা আর বিচারের দাবি জানাতে জানাতে ক্লান্ত এই শিল্পী আজ চলে গেছেন না ফেরার দেশে। স্বামী হত্যার বিচার না দেখেই চলে যেতে হলো তাকে।

মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। গতবছর সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার একটি টিউমার অপসারণ করা হয়।

তিনি ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া, মেয়ে নাজলী কিবরিয়াসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত