জৈন্তাপুর প্রতিনিধি

২৮ মার্চ, ২০২১ ১২:২৪

গোয়াইনঘাটে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড়

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন বাংলার গ্রামীণ জনপদের অন্যতম বিনোদন ঐতিহ্যবাহী খেলা পুনরুদ্ধার করতে এবং মাদকের থাবা থেকে যুবসমাজকে দূরে রাখতে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার আলীরগাও ইউনিয়নের খাসমৌজায় ২ দিনব্যাপী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হয়েছে। হারিয়ে যেতেবসা গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলা দেখতে পেয়ে খুশি স্থানীয়রা। এই খেলাকে ঘিরে পুরো গ্রাম জুড়ে তৈরি হয়েছে উৎসবের আমেজ।

উপজেলার আলীরগাও ইউনিয়নের খাসমৌজা গ্রামবাসীর আয়োজনে স্থানীয় খাসমৌজা মাঠে শুক্রবার (২৬ মার্চ) বিকালে ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করা হয়।
শনিবার (২৭ মার্চ) বিকাল ৪ টায় ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলা সম্পন্ন হয়। জৈন্তাপুর গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, কোম্পানিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, হবিগঞ্জ সহ দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রতিযোগীরা খেলায় অংশ নেয়। তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে মোট ৩৯টি ঘোড়া এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

স্থানীয় বারোহাল গ্রামের কামাল আহমদ বলেন, আগে বিভিন্ন স্থানে এই খেলাগুলো দেখা যেতো। কিন্তু এখন সচরাচর আর এসব খেলা দেখা যায় না। প্রায় হারিয়েই যেতে বসেছে এই খেলা। তাই আমরা এই খেলাটি দরে রাখতে প্রতি বছর আমরা আমাদের গ্রামে এমন খেলার আয়োজন করি যাহাতে মানুষ আনন্দ উপভোগ করতে পারে।

খেলা দেখতে আসা হোসেন মিয়া বলেন, ঘোড় দৌড় খেলা গ্রাম বাংলার একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা। কিন্তু এই ঐতিহ্যবাহী খেলাটি কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে। এখানে প্রতি বছর ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা হয় তাই আমি একজন ফটোগ্রাফার হিসেবে প্রতি বছর এখানে ছবি তুলতে আসি। একটা সময় আসবে ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা হারিয়ে যাবে তাই পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমার তুলা এই ছবি ডকুমেন্ট হয়ে থাকবে। বর্তমান সময়ে যুবসমাজকে মাদক থেকে দ‚রে রাখতে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করায় ধন্যবাদ জানাই।

সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান বলেন, আমি যখন ছোট তখন আমাদের এলাকার বাজারের পাশে বিশাল মাঠে ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা হতো আমি আমার বাবার কাঁধে চড়ে খেলা দেখতে যেতাম। দীর্ঘদিন পর আজ আবার এই খেলা দেখে আমি অনেক আনন্দিত।

তিনি আরও বলেন,স্বাধীনতার ৫০ বৎসর পূর্তিতে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা আয়োজন করায় আমি ধন্যবাদ জানাই আপনাদের। এরকম প্রতিযোগিতা সাধারণত বিভিন্ন উপজেলায় নানা কারণে হয় না এবং প্রশাসনের অনুমতি মিলে না। সুন্দর ঘোড়া দৌড় উপহার দিতে গিয়ে মারামারি, জুয়াখেলা, মদ্যপান সহ নানা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় মর্মে অভিযোগ উঠে আসছে। তবে আমি যতদূর খোঁজ খবর নিয়ে জেনেছি দীর্ঘ দিন ধরে প্রায় ৩০ বৎসর হতে আপনারা এই দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছেন এবং শান্তিপূর্ণ ভাবে এ প্রতিযোগিতা সম্পন্ন করেছেন।

এ রকম আয়োজনের জন্য আমি খাসমৌজা, বারহাল সহ সাত মৌজাবাসীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে আয়োজকদের কাছে আমি অনুরোধ দৌড়ে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি ঘোড়ার মালিকের নাম ঠিকানা এবং মোবাইল নাম্বার সহ আয়োজক কমিটির তালিকা আমার দপ্তরে জমা দিবেন। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী দৌড়টিকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কিভাবে আরও শক্তিশালী করা যায় সে বিষয়ে আমার পক্ষ হতে আপ্রাণ চেষ্টা করব। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।

এছাড়া সমাপনী অনুষ্ঠানে আয়োজক কমিটির সভাপতি শফিক আহমদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমদের পরিচালনায় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল আহাদ, গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মনজুর আহমদ, উপজেলা স্বেচ্ছসেবক লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম, বিলাল আহমদ, ফারুক আহমদ, গোলাম করিম শামীম প্রমুখ।

খেলা শেষে ১ম স্থান বিজয়ী শাপলা ঘোড়া ও ২য় স্থান বিজয়ী দোয়েল বাচ্চা ও ৩য় স্থান বিজয়ী মাইকেল ঘোড়ার মালিকের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এছাড়া ঘোড়া দৌড় উপলক্ষে পার্শ্ববর্তী জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলার ক্রীড়ামোদী জনতার ব্যাপক উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত