নিজস্ব প্রতিবেদক

৩১ মার্চ, ২০২১ ২০:০৬

সরকারের নতজানু নীতির কারণে বেপরোয়া হেফাজত

সিলেটে সমাবেশে বক্তারা

দেশের বিভিন্ন স্থানে হেফাজতে ইসলামের হামলা-লুটপাট-অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে সিলেটে সমাবেশ করেছে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী ও চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। বুধবার বিকাল ৪টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী সিলেট জেলা সংসদের সভাপতি এনায়েত হাসান মানিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে পরিচালনা করেন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র সিলেট জেলার আহ্বায়ক নাজিকুল ইসলাম রানা।

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন কবি ও গবেষক এ কে শেরাম, সিপিবি সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক কমরেড আনোয়ার হোসেন সুমন, বাসদ সিলেট জেলার সমন্বয়ক কমরেড আবু জাফর, উদীচী সিলেট জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক রতন দেব, গণজাগরণ মঞ্চ সিলেটের মুখপাত্র দেবাশীষ দেবু, বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ সিলেট জেলার সমন্বয়কারি প্রণব জ্যোতি পাল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সিলেট মহানগর আহ্বায়ক সঞ্জয় শর্মা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলার মনীষা ওয়াহিদ।

এছাড়াও সংহতি জানান, কবি ও লেখক আবিদ ফায়সাল, সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম, বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী অনিমেষ বিজয় চৌধুরী, উদীচী সিলেট জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডাঃ অভিজিৎ দাশ, যুব ইউনিয়ন সিলেট জেলার সন্দীপ দেব, চারণ সিলেট জেলার আরিফুর রহমান, ঊষা'র পরিচালক নিগাত সাদিয়া, কবি মেঘদাদ মেঘ, গানের দল ভাবুক এর সাজ্জাদ হাসাইন, পল্লবী দাস, সাংস্কৃতিক ইউনিয়নের প্রদ্যুত, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের শফিকুল ইসলাম কাজল প্রমুখ।

বক্তাগণ বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনকালে স্বাধীনতা বিরোধী উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুড়িয়ে দেয়া হলো ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সংগীত বিদ্যালয়, গণগ্রন্থাগার, ভূমি অফিস, রেল ষ্টেশন, পুলিশ ফাড়ি, মন্দির, প্রেসক্লাব, মিলনায়তন সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিবর্গের বাসাবাড়িতে হামলা-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে গোটা উৎসবকে বিভীষিকাময় করে তোলা হয়। বেশ কয়েক বছর ধরেই এই অপশক্তির আস্ফালন বার বার জাতির সামনে উপস্থাপন হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক এই গোষ্ঠীর মায়াজাল ছিন্ন করেই এদেশ স্বাধীন হয়েছিল। সেদিন এদেশের সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। আজও তারা আমাদের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এই একই চক্র এই ধ্বংসযজ্ঞ সাধনের মাধ্যমে তাদের প্রকৃত স্বরূপ জাতির সামনে উপস্থাপন করেছে। এই আস্ফালন কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

বক্তারা বলেন, সরকারের নতজানু ও ভুল নীতির ফলে এই গোষ্ঠী আজ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সরকার একদিকে নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে দাবি করে, অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলার হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয় না। অথচ সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার লেখক-বুদ্ধিজীবি-বাউল-সংস্কৃতি কর্মীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে গ্রেপ্তার-নির্যাতনের মাধ্যমে প্রকারান্তরে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে নানাভাবে উৎসাহিত করতে দেখেছি।

বক্তারা সরকারকে এই রাষ্ট্রের চেতনা বিরোধী ভয়ংকর পথ থেকে সরে আসতে জোর দাবি জানান। সেইসাথে স্বাধীনতা দিবসকে কেন্দ্র করে যারা বিভিন্নস্থানে পরিকল্পিত হামলা লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে জনগণের জানমালের ক্ষতি সাধন করেছে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সাথে দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে যাতে সাম্প্রদায়িক শক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হতে না পারে এবং স্বাধীনতার চেতনার বিপরীতে নয় বরং মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে সরকারকে জোর দাবি জানানো হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত