নিজস্ব প্রতিবেদক:

০৩ আগস্ট, ২০২১ ২০:০৬

বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকার নিবন্ধন করছে ছাত্রলীগ

আগামী ৭ আগস্ট থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে করোনার টিকাদান শুরু হবে। টিকা গ্রহণ করতে হলে ‘সুরক্ষা অ্যাপের’ মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হয়। কিন্তু এই পদ্ধতির সাথে পরিচিত নন গ্রামের অধিকাংশ মানুষ। আবার যারা জানেন লকডাউনের মধ্যে নিবন্ধন শেষে টিকা কার্ড ছাপা করানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। তবে তাদের এই চিন্তা দূর করতে উদ্যোগ নিয়েছে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা ছাত্রলীগ।

ছাত্র সংগঠনটির কর্মীরা গত তিনদিন থেকে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ‘সুরক্ষা অ্যাপের’ মাধ্যমে বিনামূল্যে নিবন্ধন করে দিচ্ছেন। এরপর তারা নিবন্ধন কার্ড ছাপা করে প্রত্যেকের বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন। গত ১ আগস্ট থেকে তারা এই কার্যক্রম শুরু করেছে। মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) পর্যন্ত তিনদিনে তারা বড়লেখা উপজেলার দশটি ইউনিয়নের প্রায় ৪ হাজার ৪৮২ মানুষের টিকার নিবন্ধন করে দিয়েছেন।

এরইমধ্যে বর্ণি ইউনিয়নে ৩০৭ জন, দাসেরবাজার ইউনিয়নে ২৯৭ জন, নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়নে ৪৮০ জন, উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নে ৪০৫ জন, দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নে ৬৯২, বড়লেখা সদর ইউনিয়নে ২৫৯ জন, তালিমপুর ইউনিয়নে ৬৩০ জন, দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নে ৫৩২ জন, সুজানগর ইউনিয়নে ২৯০ জন ও দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নে ৫৯০ জনকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়েছে।

ছাত্রলীগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৭ আগস্ট থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে করোনার টিকাদান শুরু হবে। এতে ইউনিয়ন পরিষদের টিকাকেন্দ্রে মানুষের ভিড় বাড়বে। দীর্ঘক্ষণ মানুষকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। এতে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা ও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই প্রান্তিক মানুষের ভোগান্তি দূর করতে আগে টিকার নিবন্ধন করার উদ্যোগ নেয় বড়লেখা উপজেলা ছাত্রলীগ। এরপর গত ১ আগস্ট থেকে সংগঠনের সদস্যরা নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করেন। প্রথম দিন ২০ জনের দল বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে তালিমপুর ইউনিয়নে নিবন্ধন কাজ করে। এতে কারিগরি সহায়তা করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘দ্যুতি’। পরদিন থেকে ছাত্রলীগের দশ ইউনিয়ন কমিটির নেতাকর্মীরা এই কাজ শুরু করেন। নিবন্ধনের পাশাপাশি মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে পরামর্শও দিচ্ছেন তারা। এতে মানুষের মধ্যেও নিবন্ধনের আগ্রহ বেড়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটি সমন্বয় করছেন বড়লেখা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক জুনেদ আহমদ।

দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের শিমুলিয়া গ্রামের আব্দুল হামিদ বলেন, ‘ইউনিয়নে টিকা দেওয়া হবে শুনেছি। কিন্তু রেজিষ্ট্রি (রেজিস্ট্রেশন) কিভাবে হবে এটা নিয়ে খুব চিন্তায় আছলাম (ছিলাম)। কিন্তু ছাত্রলীগের ছেলেরা আমার বাড়ি আইয়া (এসে) রেজিষ্ট্রি (রেজিস্ট্রেশন) করে দিছে। কাগজও প্রিন্ট করে দিছে। এখন আর চিন্তা নাই। টিকা দ্রুত দিলাইমু।’

তালিমপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের তালিমপুর গ্রামের শজনা বেগম বলেন, ‘ভ্যাকসিনের রেজিস্ট্রেশন কিলা করইন (কিভাবে করতে হয়) আমরা তো জানি না। গ্রামের মানুষ। ভালা মোবাইলও নাই বাড়িত (ভালো মোবাইল নেই)। ইনিওনো (ইউনিয়নে) গিয়াও কিলা করতাম অতা চিন্তাত আছলাম। একদিন দুপুরে কয়েকজন ছেলে আইয়া রেজিস্ট্রেশন করিয়া দিছন। তারা কার্ডও বাড়িত আনিয়া দিছন। আমরার আর কষ্ট করতে অইছে না।’  

বড়লেখা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হোসেন সিলেটটুডেকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়েও করোনার টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। টিকা নিতে হলে আগে নিবন্ধন করতে হয়। কিন্তু গ্রামের অনেক মানুষ কীভাবে নিবন্ধন করতে হয় তা জানে না। এছাড়া স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনেক দূরবর্তী গ্রামও আছে। এসব গ্রামের মানুষ ইউনিয়ন পরিষদে এসে নিবন্ধন করতে আগ্রহ দেখান না। তাই আমরা মানুষকে সচেতন করতে ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিবন্ধন করানোর উদ্যোগ নেই। এই ঊদ্যোগে ব্যাপক মানুষের টিকার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। এতে আমরাও কাজে উৎসাহ পাচ্ছি। প্রত্যেক ইউনিয়নের বাড়ি বাড়ি গিয়ে একটি দল নিবন্ধন করছে। আরেকটি দল পরদিন নিবন্ধন কার্ড প্রিন্ট করে পৌঁছে দিচ্ছে। যাতে মানুষ ভোগান্তি ছাড়া টিকা গ্রহণ করতে পারেন। আমাদের এই কাজ চলমান আছে।’

উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আহমদ জুবায়ের লিটন সিলেটটুডেকে বলেন, ‘অনেকে রেজিষ্ট্রেশন কিভাবে করতে হয় জানেন না। ছাত্রলীগ নিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়ায় মানুষের অনেক উপকার হচ্ছে। মানুষ উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন টিকা নেওয়ার প্রতি। এতে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকাদান শুরু হলে নিবন্ধন করার চাপ কম থাকবে। মানুষ কার্ড নিয়ে এসে টিকা দিয়ে চলে যাবেন।’

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী সিলেটটুডেকে বলেন, ‘বড়লেখায় সামাজিক সংগঠন ‘দ্যুতি’ এবং রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন ‘ছাত্রলীগ’ স্বেচ্ছাসেবীর মাধ্যমে যে কাজ করতেছে এটা খুবই প্রসংশনীয়। ইতিমধ্যে তাদের উদ্যোগে সর্বোচ্চ সংখ্যক টিকার নিবন্ধন করা হয়েছে। এরফলে আমাদের সরকারি ব্যবস্থাপনার ওপর অনেকটা চাপ কমেছে এবং অনেক বেশি সাপোর্ট হয়েছে। আমরা উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে নিবন্ধন কাজ চালু রেখেছিলাম। কিন্তু মানুষ উদ্যোক্তাদের কাছে যতটুকু আসছে তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি সামাজিক ও রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে নিবন্ধন করে দিচ্ছে। এতে ৭ আগস্ট থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে যে টিকাদান শুরু হবে তাতে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে আর কোনো শঙ্কা নেই।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত