ইয়াকুব শাহরিয়ার, শান্তিগঞ্জ:

২০ নভেম্বর, ২০২১ ০২:০৪

শান্তিগঞ্জে আ.লীগের গলার কাঁটা ‘বিদ্রোহী’

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার ৮ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা। এই ‘বিদ্রোহী কাঁটা’ এখন আওয়ামী লীগের মাথাব্যাথার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দলীয় সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে আসা ৮ নৌকার মাঝির। দলের প্রার্থীর বিজয় ঠেকাতে বিদ্রোহী প্রার্থীরাই শেষ পর্যন্ত দেয়াল হয়ে দাঁড়াতে পারেন বলে মনে করছেন ভোটাররা।

অন্যদিকে বিএনপি দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ না নিলেও স্বতন্ত্রের মোড়কে বিএনপি নেতারা বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নেমেছেন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদের পাশাপাশি বিএনপি’র (স্বতন্ত্র) প্রার্থীরাও জয় ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের।

জানা গেছে, পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জগলুল হায়দারের (নৌকা) প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী শ্রমিক লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. নূরুল হক (আনরস)।

জয়কলস ইউনিয়নেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মো. মাসুদ মিয়া (নৌকা) লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্বতন্ত্রপ্রার্থী আবদুল বাছিত সুজন (ঘোড়া), আওয়ামী লীগপন্থী নেতা রাজা মিয়া (টেবিলফ্যান) ও আওয়ামী লীগ নেতা হাছান মাহমুদ তারেকের (মোটরসাইকেল) সাথে। এছাড়াও এ ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় রয়েছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. ফরিদুর রহমান ফরিদ (আনারস)।

পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ (নৌকা) সমর্থিত প্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম রাইজুলের প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন বিএনপিপন্থী নেতা প্রবাসী মো. মসফিকুর রহমান মসিক মিয়া (ঘোড়া) ও সাবেক চেয়ারম্যান ছালেক উদ্দিন (মোটরসাইকেল)।

পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট দেবাংশু শেখর দাশ লড়বেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম (মোটর সাইকেল) ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা লুৎফুর রহমান জায়গীরদার খোকনের (চশমা) সাথে।

পূর্ব পাগলা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের রাশিকুল ইসলামের (নৌকা) বিপরীতে মাঠে আছেন প্রবাসী মাসুক মিয়া (আনারস), বিএনপিপন্থী নেতা আক্কাস খান অপু (ঘোড়া), সাবেক যুবদল নেতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন (চশমা), পূর্ব পাগলা ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল হোসেন (মোটর সাইকেল)।

দরগাপাশায়ও আওয়ামী লীগের বিপরীতে মাঠে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। মনির উদ্দিনের নৌকার বিপরীতে নিয়ে মাঠে প্রচারণা করছেন অপর আওয়ামী লীগপন্থী নেতা মাছুদুল হাসান দোলন (আনারস)। এদিকে এ ইউনিয়নে বিএনপি নেতা সুফি মিয়ার (চশমা) সাথে আছেন আরেক বিএনপি নেতা নেছার আলম শামীম (ঘোড়া)।

শিমুলবাকেও এক নৌকার বিপক্ষ দুই আওয়ামী লীগ। মিজানুর রহমান জিতুর (নৌকা) বিপরীতে আওয়ামী লীগপন্থী নেতা শাহীনুর রহমান শাহীন (আনারস) ও আব্দুল্লাহ মিয়া (চশমা) নির্বাচন করছেন। শুধুমাত্র পাথারিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শামছুল ইসলাম রাজা (নৌকা) লড়বেন স্বতন্ত্রের মোড়কে থাকা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান আমিনুর রশীদ আমিনের (চশমা) সাথে।

স্থানীয়দের ধারণা, এ ইউনিয়নে আরও প্রার্থী থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে নৌকা-চশমায়। অন্য ইউনিয়নগুলোয় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আরও অনেকে থাকলেও মূল আলোচনায় বিদ্রোহী প্রার্থীরাই রয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলার ইউনিয়নগুলোর একাধিক সূত্র।

এ ব্যাপারে পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম রাইজুল, দরগাপাশা ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী মো. মনির উদ্দিন ও শিমুলবাক ইউনিয়নের নৌকার মাঝি মিজানুর রহমান জিতু বলেন, আওয়ামী লীগ সমর্থন করেন অথচ বিদ্রোহী হয়েছেন তাদের নিয়ে আমরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। তাদের কারণে নৌকার অনেকটাই ক্ষতি হবে। তারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নৌকা ডুবাতে সক্রিয়।

জিতু বলেন, আবদুল্লাহ মিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি। তিনি আনারস প্রতীকে নির্বাচন করে নৌকা ডুবাতে সক্রিয়।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বলেন, দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে আমরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। তাদের দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়া উচিত হয়নি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত