রায়হান উদ্দিন সুমন, বানিয়াচং:

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১২:৪৭

প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আশ্বাস দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি বানিয়াচংবাসীর

সাগরদীঘি পর্যটন কেন্দ্র

হবিগঞ্জ জেলার অন্যতম উপজেলা বানিয়াচংয়ের নাম অনেকেই জানেন। বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম শিকাগো শহরে পরিণত হওয়ায় বানিয়াচং বর্তমানে বৃহত্তম গ্রামের খ্যাতি লাভ করেছে। এখানে রয়েছে প্রাচীন দর্শনীয় অনেক নিদর্শন। এর মধ্যে বানিয়াচংয়ের সাগরদীঘি বা কমলারানীর দীঘি অন্যতম। এই দীঘিকে পর্যটনে রূপান্তরিত করতে এলাকাবাসীসহ ভ্রমণ পিপাসুরা দীর্ঘদিন দাবি জানিয়ে আসছেন।

বিগত ১৯৯৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  স্থানীয় এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় বানিয়াচংয়ের এই সাগরদীঘিকে পর্যটন কেন্দ্র করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বানিয়াচংবাসীর একমাত্র দাবি ছিল কমলারাণীর দিঘীকে পর্যটনকেন্দ্র করার।

এ দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী জনসভায় কমলারাণীর দিঘীটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন। কিন্তু এরপরও এর কোন বাস্তবায়ন দেখতে পায়নি বানিয়াচংবাসী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা দীর্ঘ ২৫ বছর পেরিয়ে গেলেও অদ্যাবধি পর্যন্ত সেই ঘোষণার কোন বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে পর্যটন কেন্দ্র হওয়ার বিষয়টি হিমাগারে চলে গেছে বলে মনে করছেন বানিয়াচংবাসী ও ভ্রমণ পিপাসুরা।


পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট মাহবুব আলী এমপি গত ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর এই সাগরদীঘি পরিদর্শনে আসেন। সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আশ্বাস দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু তার এই আশ্বাসও আজ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।  প্রায় দ্বাদশ শতাব্দীতে রাজা পদ্মনাভ প্রজাদের পানি সমস্যা নিরসনের জন্য মধ্যভাগে এ দীঘিটি খনন করেন।

এ দীঘি খননের পর পানি না উঠায় স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে রাজা পদ্মনাভের স্ত্রী কমলাবতী আত্মবিসর্জন দেন বলে একটি উপাখ্যান এ অঞ্চলে প্রচলিত আছে। এ জন্য এ দীঘিকে কমলারানীর দীঘিও বলা হয়ে থাকে। এ দীঘি নিয়ে বাংলা সিনেমাসহ মঞ্চনাটক রচিত হয়েছে। এর পাড়ে বসে পল্লীকবি জসীম উদ্দীন 'রানী কমলাবতীর দীঘি' নামে একটি কবিতা রচনা করেছিলেন। সে কবিতাটি তার 'সূচয়নী' কাব্য গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এ দীঘিটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বলে খ্যাতি রয়েছে। ১৯৮৬ সালে দীঘিটি পুনঃখনন করান তৎকালীন মৎস্য ও পশুপালন মন্ত্রী সিরাজুল হোসেন খান। বর্তমানে ৬৬.০০ একর জায়গা নিয়ে দীঘিটি বিস্তৃত। তন্মধ্যে জলসীমা রয়েছে ৪০.০০ একর। এর চার পাড়ে দিনাজপুরের রামসাগরের আদলে পর্যটন পার্ক তৈরি করা হলে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে বলে অনেক দর্শনার্থী বা পর্যটকই মতামত রেখে থাকেন।

বানিয়াচংয়ের এই সাগরদীঘি নতুন প্রজন্মের কাছেও ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। প্রায় সারা বছরই সাগরদীঘি পরিদর্শনে দেশী-বিদেশী পর্যটকরা আসেন। বর্তমান সরকারের সময়েই যাতে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আশ্বাস বাস্তবায়ন হয় সেই আশা ই করছেন বানিয়াচংবাসী তথা ভ্রমণ পিপাসুরা।

বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ এই বিষয়ে জানান,সাগরদীঘির চার পাশের বাসিন্দাদের সাথে এটা নিয়ে হাইকোর্টে মামলা চলমান থাকায় সামনের দিকে আগানো যাচ্ছেনা। একটা সময় তাদেরকে শুধুমাত্র পানি ব্যবহার করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে এটা লীজ দিতে গেলে বাসিন্দারা তাদের সমস্যা হবে বলে আদালতের মাধ্যমে রিট করে আটকিয়ে দেয়। চার পাড়ের বাসিন্দারা যদি মামলা তোলে এক হয়ে এসে আমাদের কাছে বলে তাহলে তো সেটা দুই দিনের ব্যাপার ঘোষণা বাস্তবায়ন করার।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত