নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ মার্চ, ২০২৩ ২০:২৮

প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফাঁসলেন!

বিল্ডিং কোড ভঙ্গ করে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখায় এমন অভিযোগ নিয়ে প্রায় দেড় বছর ধরে তৎপর ছিলেন তিনি। প্রথমে দুই দফা মৌখিক অভিযোগ জানান। এরপর লিখিত অভিযোগ করেন। লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী ব্যবস্থা কেন নেওয়া হচ্ছে না, এ নিয়ে আরও তিনটি দরখাস্ত দেন। একের পর এক অভিযোগের পর ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে গিয়ে পাওয়া গেল উল্টোচিত্র। অভিযোগকারী নিজবাসা নির্মাণে মানেননি বিল্ডিং কোড। শেষে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে বিল্ডিং কোড ভঙ্গের নোটিশ করার বিষয়টি জানিয়ে অভিযান গুটানো হয়।

সোমবার  দুপুরে সিলেট নগরীর সুরমা আবাসিক এলাকায় সিসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার নেতৃত্বে ম্যাজিস্ট্রেট-প্রকৌশলীর একটি দল অভিযানে নেমে এ পরিস্থিতির মুখে পড়ে। অভিযোগকারীর বাসার মাপজোখ করে দেখা গেছে, নতুন ওই বাসা নির্মাণের আগে তিনি নিজ বাসার নির্মাণ করেছেন বিল্ডিং কোড ভঙ্গ করে। এ বিষয়টি চাপা দিতেই তিনি গত প্রায় আড়াই বছর প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে সক্রিয় ছিলেন।

অভিযোগকারীর নাম মাহমুদুল মজিদ চৌধুরী। সুরমা আবাসিক এলাকায় রেনেসাঁ ১৪ বাসার মালিক তিনি।

সিসিক সূত্রে জানা গেছে,  অভিযোগকারীর প্রতিবেশী ওই এলাকার বাসিন্দা মির্জা আবুল কাশেম স্বপন ১৯৯১ সালে কেনা জায়গার ওপর সম্প্রতি সাততলা ভবন করেন। সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে যথারীতি অনুমতি নিয়ে নির্মাণ শুরু করেন। নির্মাণ চলাকালে কোনো আপত্তি না জানালে শেষ পর্যায়ে পাশের বাসার মালিক মাহমুদুল মজিদ চৌধুরী তৎপর হন। প্রথমে তার বাসা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ছে বলে মৌখিক অভিযোগ করেন। সিটি করপোরেশনের একটি দল পরিদর্শন করে এর কোনো সত্যতা পায়নি। এরপর দ্বিতীয় দফায় তিনি তার বাসার সৌন্দর্য বিনষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। এ দুই অভিযোগ যখন কিছু হচ্ছিল না, তখন মির্জা স্বপনদের বাসা নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর বিল্ডিং কোড ভঙ্গ হয়েছে বলে লিখিত অভিযোগ করেন ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর। লিখিত ওই অভিযোগে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, এ নিয়েও তিনি সিসিকের প্রকৌশল শাখায় নিয়মিত যোগাযোগ করেন।

প্রকৌশল শাখা জানায়, মাহমুদুল মজিদের তাগাদায় এক্সভেটর, বিদ্যুৎ বিভাগ ও পুলিশ সহায়তায় প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মতিউর রহমান খানের নেতৃত্বে অভিযান চালাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে উল্টোচিত্র পাওয়া যায়। অভিযুক্তদের বাসা পর্যবেক্ষণ শেষে অভিযোগকারীর বাসা দেখতে গিয়ে পাওয়া যায় দুদিক দিয়ে বিল্ডিং কোড মানা হয়নি। স্থানীয় লোকজন আগে অভিযোগকারীকে নোটিশ করার কথা বলা হলে অভিযান গুটানো হয়।  

অভিযোগকারীর বাসা বিল্ডিং কোড মেনে হয়নি, এটি সরেজমিনে এসে পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন সিসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. মতিউর রহমান খান।

তিনি বলেন, পরিপ্রেক্ষিতে এসে সত্যাতা পাওয়া গেছে। তবে বিবাদী যেহেতু দোষ স্বীকার করে আর একটি পিটিশন দিয়েছেন সিটি করপোরেশনে সেহেতু পিটিশন নিষ্পত্তি হওয়ার আগে পর্যন্ত কোন ব্যবস্তা নেয়া হবে না। যদি তার পিটিশন খারিজ হয়ে যায়, তখন বর্ধিত অংশ বিবাদী নিজে অপসারণ করবেন অন্যতায় সিটি করপোরেশন ব্যবস্তা নিবে। এছাড়া সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বাদী নিজেও বিল্ডিং কোড অমান্য করেছেন, মাপ যোগ করে দেখা গেছে ঘরের দেয়াল থেকে সীমানা প্রাচীরের মধ্যে ২ ফুট ফাকা জায়গা রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আদেশ দেওয়া হয়েছে বাদীপক্ষ কেও কাগজপত্র যাচাই করে নোটিশ প্রেরণ করার জন্য।

নিজের বাসা নির্মাণে বিধি না মেনে অন্য বাসার বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হন মাহমুদুল মজিদের ওপর। তারা জানান, এটা এক ধরনের হয়রানি। সাততলা বাসার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সামাজিকভাবে নিষ্পত্তির অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু মাহমুদুল এলাকাবাসীর অনুরোধ উপেক্ষা করেন। যে বিধি তিনি দেখিয়ে অপরকে বিপাকে ফেলেছিলেন, এখন নিজেই নিজের ফাঁদে পড়েছেন।

নিজ বাসা বিল্ডিং কোড না মেনে নির্মাণ প্রসঙ্গে মাহমুদুল বলেন, আমি সিটির অনুমোদন নিয়েই বাসা তৈরি করেছি। চাইলে সেটা দেখাতে পারব।

যে বাসার বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, তার দাবি, সেখান থেকে ময়লা আবর্জনা এসে তার বাসায় পড়ে, আলো বাতাসের প্রবেশেও বাধাগ্রস্ত হয়। তার দাবি, এটা বিল্ডিং কোড লঙ্ঘন। এ জন্য অভিযোগ করেছিলাম।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত