রেজুওয়ান কোরেশী, জগন্নাথপুর

১৫ মার্চ, ২০২৩ ১৩:২৬

প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য: এক শিক্ষকে চলল পাঠদান!

সময় তখন দুপুর সাড়ে ১২! স্কুলের বারান্দায় কয়েকজন শিক্ষার্থী খেলছিল। এসময় দুই শিক্ষার্থী দুষ্টুমি করছিল। পাশের দুইটি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা হৈ-হল্লা করছে। আরেকটি শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নিচ্ছেন এক শিক্ষিকা।

মঙ্গলবার( ১৪ মার্চ) এই চিত্র ছিল সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়া হাওরবেষ্ঠিত চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের বেতাউকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।

বিদ্যালয়ের দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা খায়রুন নেছা জানালেন, স্কুলে আজকে (গতকাল) অন্য কোন শিক্ষক না থাকায় তিনি একা একা দৌড়ে-দৌড়ে পাঠদান করছেন। চারজন শিক্ষক বিদ্যালয়ে থাকার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে তিনজন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চলছে। এরমধ্যে একজন সহকারী শিক্ষক তার বিবাহ অনুষ্ঠানের জন্য তিনদিনের জন্য ছুটি নিয়ে বাড়িতে আছেন। অপর সহকারী শিক্ষক শিক্ষা সপ্তাহ মেলায় আজ সুনামগঞ্জ গেছেন। এজন্য আমি একাই সবকয়টি ক্লাসে পাঠদান করছি।

বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী তিন্নি আক্তার মাইশা বলল, শিক্ষক সংকটের কারণে আমাদের ম্যাডাম আজকে একাই পাঠদান করছেন। আমরা নিয়মিত স্কুলে আসি।

৪র্থ শ্রেণির ছাত্র সাইম মিয়া জানায়, ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত আমাদের পাঠদান অনুষ্ঠিত হয়। আজকে (গতকাল) শুধু বাংলা বিষয়টি পাঠদান নিয়েছেন আমাদের ম্যাডাম। আরেক ছাত্র জানালো যেদিন শিক্ষক অনুপস্থিত থাকেন সেদিন দপ্তরী ক্লাস নেন।
বিদ্যালয়ে দপ্তরী-কাম প্রহরী জাহিদ জানান, মাঝে মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাসের পাঠদান আমি নিই।

১৯৩৫ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। ১৯৭৩ সালে জাতীয়করণ হয়। চারজন শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদটি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে পদ শূন্য রয়েছে। তিনজন সহকারী শিক্ষক রয়েছেন। তারা হলেন- খায়রুন নেছা, আনোয়ার হোসেন ও মিন্টু চন্দ্র দেব। এরমধ্যে নিজের বিবাহ অনুষ্ঠানের জন্য সহকারী শিক্ষক মিন্টু চন্দ্র দেব ছুটিতে আছেন। আর আনোয়ার হোসেন শিক্ষা সপ্তাহ মেলায় গেছেন। বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ১৫৬ জন। এরমধ্যে পঞ্চম শ্রেণিতে ১৮ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ২৮ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৩২ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৩২ জন, প্রথম শ্রেণিতে ৩৬ জন ও প্রাক প্রাথমিকে ১০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।

শিক্ষিকা খায়রুন নেছা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য রয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে আমি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছি।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল কাশেম জানান, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে অফিসিয়াল কাজে অনেক সময় শিক্ষকরা সদরে গেলে কিংবা ছুটিতে গিলে পাঠদান ব্যাহত হয়। আমরা অনেকদিন ধরে সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানিয়ে আসছি প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য, কিন্তু দাবিটি আজও উপেক্ষিত রয়েছে।

জগন্নাথপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র দাস জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে নিয়োগের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অপর দুই শিক্ষকের ব্যাপারে আমি খোঁজখবর নেব।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত