কুলাউড়া প্রতিনিধি

২৭ মে, ২০২৩ ২৩:৫৩

ব্যাংক কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার, স্ত্রী ও দুই মেয়েসহ জামাতা গ্রেপ্তার

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় শেখ রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী (৬৫) নামে সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার ভোররাতে উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ রফিকুলের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত স্ত্রী, কন্যা ও মেয়ে জামাতাসহ ৪জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

রফিকুল ইসলামের বড় ভাই শেখ সিরাজুল ইসলাম সিদ্দিকীর দাবি তার ভাইয়ের স্ত্রী এবং কন্যারা অবসর ভাতার টাকা ও পারিবারিক বিরোধের জেরে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় ভাই সিরাজুল ইসলাম সিদ্দিকী বাদি হয়ে ৬ জনকে অভিযুক্ত থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী একটি বেসরকারী ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। দুই বছর আগে তিনি চাকরি থেকে অবসর নেন। তার ঘরে ৫ মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছেন। অবসরের পর একমাত্র ছেলে শেখ আমিনুল ইসলাম সিদ্দিকীকে পেনশনের টাকায় আরব আমিরাতে পাঠান। ছেলেকে প্রবাসে পাঠানোর পর তার কাছে অবশিষ্ট থাকা পেনশনের টাকার জন্য স্ত্রী মিছফা আক্তার সিদ্দিকা ও মেয়েদের সাথে প্রায় দ্বন্ধের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে শেখ রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকীর ভাই ও স্থানীয় ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাইদুল ইসলাম পাখির উপস্থিতিতে একাধিকবার পারিবারিক শালিসী বৈঠক হয়।

সর্বশেষ শুক্রবার (২৬ মে) রাত ১০টার দিকে পারিবারিক কলহ সংক্রান্তের ঘটনায় রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকীর ভাই সিরাজুল ইসলামসহ স্বজনদের উপস্থিতিতে পারিবারিক শালিসী বৈঠক হয়। বেঠক শেষে সবাই চলে যান। পরে রাত দেড়টার দিকে সিরাজুল খবর পেয়ে তার ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে দেখতে পান  রফিকুলের লাশ ঘরের বারান্দায় পড়ে আছে। সিরাজুল বিষয়টি জেনে স্থানীয় ইউপি সদস্যর মাধ্যমে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রফিকুলের লাশ সুরতহাল শেষে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণ করেন।

এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রফিকুলের স্ত্রী মিছফা আক্তার সিদ্দিকা (৫৫), শেখ শারমিন আক্তার সিদ্দিকা (৩৫), শেখ তাজরিন আক্তার সিদ্দিকা (৩০) ও তাজরিনের স্বামী মেহেদী হাসান (৩২) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকীর ভাই সিরাজুল ইসলাম সিদ্দিকী  বলেন, আমার ছোট ভাই রফিকুল চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর তাঁর পেনশন বাববদ প্রাপ্ত ৫২ লাখ টাকা নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ হতো। আমার ভাইয়ের স্ত্রী মিছফা আক্তার ও তার মেয়েরা পেনশনের টাকা নিজেদের কাছে নেওয়ার জন্য রফিকুলকে প্রায়ই মারধর ও দুর্ব্যবহার করতো। এ নিয়ে আমরা ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যসহ বেশ কয়েকবার পারিবারিক শালিসী বৈঠকের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করেছি। শুক্রবার রাতেও এ সংক্রান্ত বিবাদের জন্য পারিবারিক শালিসী বৈঠকে বসে সমাধান করি। পরে আমরা আমাদের বাড়িতে চলে যাই। রাতে খবর পেয়ে রফিকুলের বাড়িতে গিয়ে দেখি তার লাশ ঘরের বারান্দার মেঝেতে জখমী অবস্থায় পড়ে আছে। আমার ভাইকে তাঁর স্ত্রী, মেয়ে ও মেয়ে জামাতা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।

কুলাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রতন দেবনাথ বলেন, সুরতহালের সময় রফিকুলের মাথার পেছনের আঘাত এবং গলায় নখের আচড়ের চিহ্ন পাওয়া গেছে। রফিকুলের ভাই সিরাজুল ইসলাম ৬জনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা দিয়েছেন। রফিকুলের স্ত্রী, মেয়ে এক মেয়ের স্বামীকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত