নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:১৮

মেয়েকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দেখাতে গিয়েছিলেন ‘প্রথাবিরোধী লেখক’ আতাউর

কলেজ শিক্ষকতার পাশাপাশি লেখালেখি করতেন আতাউর রহমান। এ পর্যন্ত প্রায় ১৬ টি বই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। শনিবার সকালে ৮ম শ্রেণিতে পড়া মেয়ে রাহিবাকে নিয়ে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় দেখাতে গিয়েছিলেন আতাউর রহমান। সঙ্গে ছিলেন তাঁর মামা গিয়াস উদ্দিন।

মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয় দেখাতে গিয়েই প্রাণ দিতে হলো তাকে। প্রাইভেটকার চাপায় মামা আতাউর রহমান রহমানসহ প্রাণ হারালেন ছাতক ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক শেখ আতাউর রহমান। গুরুতর আহত হয়ে মেয়ে রাহিবা আক্তার ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

শনিবার দুপুরে শাবির প্রধান ফটকের সামনে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় নিহত হন এই দু'জন। রাহিবাসহ তিনজন আহত হন। প্রাইভেটকারটি চালাচ্ছিলেন শাবির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ড. আরিফুল ইসলাম। যিনি গাড়ি চালানো শিখছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এই শাবি শিক্ষকের ড্রাইভিং শিক্ষার বলি হতে হলো দু'জনকে।

শনিবার বিকেলে নগরীর মজুমদারি এলাকায় আতাউর রহমানের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, অকস্মাৎ এই শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন স্বজনরা। বাসার বসার ঘরের শেলফে বইয়ের স্তূপ। এরমধ্যে আতাউর রহমানের নিজের লেখা অনেকগুলো বই রয়েছে সেলফে।

তাঁর লেখা 'আলোকিত মানুষ' নামের একটি গ্রন্থের ফ্ল্যাপে লেখক পরিচিতিতে লেখা রয়েছে- 'প্রথাবিরোধি, মননশীলতা এবং প্রগতিশীলতা তাঁর লেখার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য'। ২০ বছর ধরে কলেজে অধ্যাপনার পাশাপাশি লেখালেখি করছেন বলেও লেখা রয়েছে ফ্ল্যাপে।

শেখ আতাউর রহমানের পরিচিত নাট্যকর্মী আনোয়ার হোসেন রনি তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন,

মৃত্যুবরণকারী দুজনের একজন শেখ আতাউর রহমান। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে তিনি গিয়েছিলেন শাহজালাল ইউনিভার্সিটি দেখাতে। অন্যজন আতাউর সাহেবের মামা। মেয়েটি ক্লাস এইটে পড়ে। গাড়ি প্রথমে আতাউর সাহেবের মামাকে চাপা দেয় পরে আতাউর সাহেবকে চাপা দিলে তিনি প্রাণপণ চেষ্টা করেন মেয়েটিকে বাঁচাতে। কিন্তু ততক্ষণে ঘটে গেছে ভয়াবহ ঘটনাটি। মেয়েটি প্রাণে বেঁচে গেলেও বাবা আর দাদার প্রাণ-পাখি উড়ে গেল।

মেয়েটির পা ভেঙ্গে প্রায় গুড়ো হয়ে গেছে। বেশীরভাগ সময়ই সে সংজ্ঞাহীন। জ্ঞান ফিরলেই বলছে ''এতো ডাকলাম, আমাদের কেউ বাঁচাতে আসলো না, বাবা কই, আমার বাবা?' তার পর আবার মূর্ছা যাচ্ছে।

এই আহাজারি দেখে এসেছে কুমকুম। সে খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলো।

জানলাম, শাবি'র একজন শিক্ষক নাকি নতুন গাড়ি কিনে ড্রাইভিং শিখতে একজন ড্রাইভার সাথে নিয়ে বেরিয়েছিলেন ড্রাইভিং প্র্যাকটিসে। মর্যাদার দিক থেকে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ এর একজন শিক্ষক গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ নেবেন শিক্ষার্থী শিক্ষক অভিভাবক চলাচল করেন এমন জনবহুল রাস্তায়?

এটা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না।এ দুর্ঘটনা, এটা মানা যায় না।সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে এই অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরী ।

শেখ আতাউর রহমান সাহেব ছাতক কলেজের শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষকতা ছেড়ে শুরু করলেন লেখালেখি। সারাক্ষণই লিখতেন। অনেকগুলো বই লিখেছেন নানা বিষয় নিয়ে। পত্রিকায় ও নিখতেন নিয়মিত। ড. হুমায়ুন আজাদ এর লেখার একনিষ্ঠ ভক্ত শেখ আতাউর রহমান মনে প্রাণে একজন প্রগতিশীল মানুষ ছিলেন, এই কথাগুলো আমাকে জানালেন তাঁরই একজন সহকর্মী।

আলোকিত মানুষ বইটি আতাউর সাহেব অনেক আগে একদিন আমাকে উপহার দিয়েছিলেন। সহজ সরল, খুব কম কথা বলা এই মানুষটির সাথে আমার খুব বেশী দেখা হতো না। আমি মজুমদারিতে ভাড়া বাসায় থাকাকালীন, পাশের বাসায় তিনি তাঁর শ্বশুরের বাসায় আসতেন, তখন মাঝে মাঝে দেখা হতো।

খবরটি শুনে আমি হতবাক। যে দুজন চলে গেলেন, তারাতো চলেই গেলেন। এখন দু:সহ যন্ত্রণার স্মৃতি নিয়ে এই মেয়েটির কি হবে?
কিভাবে এমন বেদনার ভার সইবেন মেয়েটির মা?

আপনার মন্তব্য

আলোচিত