জাহাঙ্গীর আলম খায়ের, বিশ্বনাথ :

৩১ জানুয়ারি, ২০১৬ ২১:২৩

বিশ্বনাথে ১০ মিনিটের সমন্বয় সভা করেই সভাস্থল ত্যাগ করলেন উপজেলা চেয়ারম্যান

সিলেটের বিশ্বনাথে পুলিশের উপস্থিতিতে ১০ মিনিটের মধ্যেই উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভা সমাপ্ত করা হয়েছে। কোরাম সংকট হলেও রোববার উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে মাসিক এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত হয়ার পরই সভাস্থল ত্যাগ করেন ভাইস চেয়ারম্যান পক্ষের ‘বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে’ দায়ের করা একটি মামলার প্রধান আসামি উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা সুহেল আহমদ চৌধুরী। এ সময় একই মামলার অপর আসামি অলংকারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়াও তার সঙ্গে ছিলেন।

এর আগে উপজেলা পরিষদ মিলনাতয়ন সম্মুখে অবস্থান নেয় বিশ্বনাথ থানা পুলিশের একটি টিম। সমন্বয় সভা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উপজেলা পরিষদ এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বর্পর্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয়  তারা।

উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে পরিষদের মাসিক এ সভায় ১৪ সদস্যের মধ্যে মাত্র ৫জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। ৮ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের মধ্যে এসময় দেওকলস ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তাহিদ মিয়া ও লিলু মিয়া চেয়ারম্যান এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নূরুন্নাহার ইয়াসমিন ও নাজমা বেগম উপস্থিত ছিলেন। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আসাদুল হক, কৃষি কর্মকর্তা আলীনুর রহমান, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মাহবুব আলম সরকার, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সোলায়েমান হোসাইনসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরীকে মোবাইল ফোনে পাওয়া না গেলেও (ফোন রিসিভ করেননি) কোরাম সংকটের বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করেছেন ইউএনও মুহাম্মদ আসাদুল হক। কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে, ইউএনও আসাদুল হক কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি ‘সিলেটটুডে২৪.কমকে’ বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেব সভার আহবান করেছিলেন এবং সভায় উপস্থিতও হয়েছিলেন।

সভায় উপস্থিত হননি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ-নুর উদ্দিন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বেগম স্বপ্না শাহিন, বিশ্বনাথ সদর ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন, লামাকাজী ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন ধলা মিয়া, খাজাঞ্চী ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন সিদ্দিকী, রামাপাশা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার খান, দৌলতপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্বাস আলী, দশঘর ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) হাবিবুর রহমান ছাতির।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ নূর উদ্দিন ‘সিলেটটুডে২৪.কমকে’ বলেন, তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা থাকায় তিনি এ সভায় যাননি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান, অলংকারী ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা চেয়ারম্যান কার্যালয়ের সিও’র বিরুদ্ধে থানায় একই আইনে মামলা রয়েছে। এর পরও থানা পুলিশের পাহারায় আজ সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।   

জানাগেছে, ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় সরকারি বরাদ্দ নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান পক্ষের মধ্যে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর আগে ওইদিন (২৬ নভেম্বর ১৫ইং) সভা চলাকালীন সময়ে উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরীর উপর হামলা করেন উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান আহমেদ নূর উদ্দিন। এ ঘটনার পর উভয় পক্ষে পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হয়। সর্বশেষ ১২ ডিসেম্বর উপজেলা চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামি করে বি¯েফারক দ্রব্য আইনে ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ নূর উদ্দিন পক্ষের জিতু মিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। মামালায় উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ১২জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, (মামলা নং ১২/১২/১৫ইং)। ওই মামলায় ২য় আসামি হলেন অলংকারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিলু মিয়া ও ৩য় আসামি করা হয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যান কার্যালয়ের সিও গোলাম কিবরিয়াকে।

এরআগে ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরীর পক্ষে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ নূর উদ্দিনকে প্রধান আসামি করে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা দয়ের করেন কারিকোনা গ্রামের নিজাম উদ্দিন। মামলায় আহমেদ নূর উদ্দিনের দুই ভাই ওয়াশিম (২৬), জুসম (২২) এবং উপজেলা ছাত্রদলের (একাংশ) আহবায়ক শাহ আমির উদ্দিনসহ ৬জনকে এজাহার নামীয় আসামি করা হয়, (মামলা নং ০৮)।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই তোফাজ্জুল হোসেন ‘সিলেটটুডে২৪.কমকে’ বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল চৌধুরীর উপর দায়ের করা মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তাই ২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারী শুক্রবার এ মামলার ফাইনাল রির্পোট আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া ‘বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে’ উপজেলা চেয়ারম্যান পক্ষের নিজাম উদ্দিনের দায়ের করা মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত