নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:৪৮

জাফলং-ভোলাগঞ্জ থেকে এখনই পাথর উত্তোলন নয়

১৭টি পাথর কোয়ারির ইজারা প্রদান স্থগিত

সিলেটের ভোলাগঞ্জসহ দেশের ১৭ টি পাথর কোয়ারির ইজারা প্রদানের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে সরকার। একইসঙ্গে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষিত জাফলংকে পাথর কোয়ারি হিসেবে ইজারা প্রদান সম্পূর্ণভাবে স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

 সাম্প্রতিক সময়ে এসব কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন শুরুর যে আশা দেখছিলেন ব্যবসায়ীরা, সরকারের এমন সিদ্ধান্তে সেই আশা এখনই পুরণ হচ্ছে না।

রবিবার (২৭ এপ্রিল) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সভাপতিত্বে গেজেটভুক্ত পাথর/সিলিকাবালু/নুরী পাথর/সাদা মাটি কোয়ারিসমূহের ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের ৫১টি পাথর কোয়ারির মধ্যে পরিবেশগত বিবেচনায় ১৭টি কোয়ারির ইজারা প্রদান স্থগিত করা হয়েছে। এসবের মধ্যে ইসিএ এলাকায় অবস্থিত জাফলংসহ আদালতের নিষেধাজ্ঞাধীন কোয়ারিগুলোতেও ইজারা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। একই সঙ্গে নৈসর্গিক সৌন্দর্য রক্ষার স্বার্থে ভোলাগঞ্জ, উৎমাছড়া, রতনপুর, বিছানাকান্দি ও লোভাছড়া পাথর মহালেও নতুন করে কোনো ইজারা দেয়া হবে না।

সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং স্বরাষ্ট্র এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এসময় উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে  বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সিলেটের কোয়ারিগুলো থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে এবং কোয়ারির ইজারা প্রদান স্থগিত করে। এছাড়া কয়েকটি কোয়ারিতে পাথর উত্তোলনে আদালতেরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যদিও শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা কোয়ারিগুলো থেকে পাথর উত্তোলন শুরুর দাবি জানিয়ে আসছিলেন।  

এ অবস্থায় গত ১৩ জানুয়ারি কোয়ারির ইজারা প্রদানের স্থগিতাদেশ বাতিল করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এেেত আবারও কোয়ারিগুলো চালুর আশা প্রকাশ করেছিলেন শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা। তবে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় উদ্বেগ প্রকাশ করে। তার প্রেক্ষিতে রোববারে সভায় এ সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহণ করা হয়।

সভায় অন্যান্য কোয়ারিতে ইজারা প্রদানের পূর্বে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনকে পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিকদের নয়, প্রকৃত দায়ী ও দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এখন থেকে অবৈধভাবে উত্তোলিত কোনো পাথর বিক্রি না করে তা কাস্টমসের মাধ্যমে সরকারের নির্মাণকাজে ব্যবহারের জন্য সরবরাহ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রনালয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন যে, শুধু পাথর মহল নয়, অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু উত্তোলন রোধে ও একই নীতিমালা অনুসরণ করা যেতে পারে। এতে করে পরিবেশ ও  জনস্বার্থ রক্ষিত হবে এবং বালু ও পাথরের মতন প্রাকৃতিক সম্পদ গুলো আইনমেনে জনগণের স্বার্থে ব্যবহার করা যাবে। অবৈধভাবে উত্তোলনকৃত কোন পাথর বিক্রি না করে বরং সেই পাথর কাস্টমস এর মাধ্যমে সরকারের নির্মাণকাজে সরবরাহ করা হলে পাথর ও বালি উত্তোলন কমবে।

উপদেষ্টা জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের পূর্ববর্তী বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে এখন থেকে দেশের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত