বড়লেখা প্রতিনিধি

০৩ অক্টোবর, ২০২৫ ১৭:৫৮

নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায়, সম্প্রীতির আবহে বড়লেখায় সম্পন্ন হলো শারদীয় দুর্গাপূজা

বড়লেখার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন।

বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যার শান্ত আলোয় যখন দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জনের ঘণ্টাধ্বনি মিলিয়ে যাচ্ছিল, তখন বড়লেখা উপজেলাজুড়ে ছিল স্বস্তি আর সৌহার্দ্যের এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি। মৌলভীবাজারের বড়লেখায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাঁচদিনব্যাপী শারদীয় দুর্গাপূজা এবছর শেষ হয়েছে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে, বিনা দ্বিধায়, বিনা সংশয়ে।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এই মহোৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটে বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বিকেলে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। প্রতিমার মুখের দীপ্তি আর ভক্তদের চোখের জল মিশে তৈরি করেছিল এক অপার্থিব পরিবেশ, যেখানে ধর্মীয় আবেগের সঙ্গে মিশে ছিল নিরাপত্তা ও সৌহার্দ্যের দৃঢ় বাস্তবতা।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ বড়লেখা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত কুমার পাল বলেন, “এবারের পূজা শুধুই একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছিল না, বরং এটি ছিল সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সম্মিলনের এক অনন্য নিদর্শন।” তিনি পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন সহ সকল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্থানীয় জনগণের আন্তরিক সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

পূজার দিনগুলোতে পুরো বড়লেখা যেন এক উৎসবের শহর হয়ে উঠেছিল। ছিল না কোনো অস্থিরতা, ছিল না কোনো ভয়ের ছায়া। স্থানীয় পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের তৎপরতা, থানা পুলিশের নিয়মিত টহল এবং গোয়েন্দা নজরদারির কারণে প্রতিটি মণ্ডপই ছিল নিরাপদ ও উৎসবমুখর।

গত ১ অক্টোবর মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন নিজে পরিদর্শন করেন বড়লেখার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজমল হোসেন, বড়লেখা থানার ওসি মাহবুবুর রহমান মোল্লা এবং পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ। তাঁরা বিভিন্ন মণ্ডপ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থার খোঁজ নেন এবং ভক্তদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবুর রহমান মোল্লা জানান, এবারের দুর্গাপূজা ছিল নজিরবিহীন শান্তিপূর্ণ। পুরো এলাকায় থানা পুলিশ নিয়মিত টহলের পাশাপাশি ছিল গোয়েন্দা নজরদারি, যা নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করেছে আরও বহুগুণে।

বড়লেখায় এবছর ১৪৫টি পূজামণ্ডপে অনুষ্ঠিত হয় দুর্গাপূজা। এর মধ্যে ১৩২টি সার্বজনীন ও ১৩টি ব্যক্তিগত। ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ২০টি মণ্ডপে প্রশাসনের বিশেষ নজরদারি ছিল, আর সীমান্তঘেঁষা ২৪টি মণ্ডপে বিজিবি’র টহল ছিল দিনরাত। থানা পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনী, আনসার সবাই ছিলেন মাঠে। শুধু নিরাপত্তা দিতে নয়, বরং মানুষের পাশে থেকে উৎসবের অংশ হতে।

এবারের পূজার একটি দৃষ্টান্তমূলক দিক ছিল- রাজনৈতিক সম্প্রীতি। বিএনপি, জামায়াত ইসলামীসহ নানা রাজনৈতিক দলের নেতারা বিভিন্ন মণ্ডপ ঘুরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পূজার মণ্ডপগুলো যেন হয়ে উঠেছিল সম্প্রীতির মঞ্চ, যেখানে ধর্ম বা দল নয় -মানবিকতা ছিল সবার আগে।

রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসনের জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা আমিনুল ইসলাম, সাবেক বড়লেখা উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান রেহানা বেগম হাছনা, মৌলভীবাজার-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ড. মুদাব্বির হোসেন সহ বড়লেখা উপজেলার বিএনপি ও জামায়াতের নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন মণ্ডপ ঘুরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।  

এ উৎসব বড়লেখার জন্য শুধু ধর্মীয় আয়োজন ছিল না, ছিল সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, সম্প্রীতি ও সহনশীলতার মিলনমেলা। শান্তিপূর্ণ, প্রাণবন্ত ও মানবিক -এই তিন শব্দেই যেন বড়লেখার এবারের দুর্গাপূজার সারাংশ ধরা পড়ে। বিদায়ের করুণ সুর বাজলেও, বুকে বাজে আশ্বাস -“আসছে বছর আবার হবে।”

আপনার মন্তব্য

আলোচিত