হামিদুর রহমান, মাধবপুর

২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২৩:৩৬

হবিগঞ্জ-৪: কখনই জিততে পারেনি বিএনপি-জামায়াত, এবার পরিস্থিতি ভিন্ন

চা বাগান অধ্যুষিত হবিগঞ্জের চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলা নিয়ে হবিগঞ্জ-৪ আসন। এই আসনটি আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। বেশিরভাগ নির্বাচনেই এখানে আওয়ামী  লীগের প্রার্থীরা জয় লাভ করেছেন। দুইবার জয় পেয়েছে জাতীয় পার্টিও।

এ এলাকায় বিএনপি বা জামায়াতের প্রার্থীরা কখনোই জয় পাননি। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন এবার মাঠে আওয়ামী লীগ নেই। শীর্ষ নেতাদের বেশিরভাগই হয় দেশছাড়া নতুবা আত্মগোপনে। দলটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ারও সুযোগ না পেতে পারে।

এ অবস্থায় বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীদের জন্যে বড় সুযোগ হয়ে আসছে আগামী নির্বাচন। তবে বিএনপিকে ভোগাচ্ছে দলটির ভোগান্তি।

নির্বাচনী এলাকার মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী চার প্রার্থী।  দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে সভা, সমাবেশ, সামাজিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়াঙ্গন ছাড়াও ভোটারদের সাথে কুশল বিনিময় করে যাচ্ছেন তারা।
 
কে হচ্ছেন আগামী নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এ নিয়ে হাট-বাজারসহ গ্রামেগঞ্জে রয়েছে ব্যাপক গুঞ্জন। তবে অন্যান্য নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচনে বিএনপির হাইকমান্ড প্রার্থী বাচাইয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাবে জরিপ চালাচ্ছে।

বিএনপির হাইকমান্ড সূত্রে জানা যায়, বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সংগ্রামে সক্রিয় ভাবে মাঠে থেকে যারা হামলা-মামলা, জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন মনোনয়নের ক্ষেত্রে তাদেরকেই প্রাধান্য দেয়া হবে।

চা-বাগান এবং ভারত সীমান্ত ঘেষা মাধবপুর-চুনারুঘাট উপজেলা নিয়ে গঠিত হবিগঞ্জ-৪ আসনটিতে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ ভোটারের ভোটে বিগত নির্বাচনগুলোতে মুল ফ্যাক্টর ছিল চা শ্রমিকদের ভোট। তাদের অধিকাংশ ভোট নৌকার বাক্সেই থাকত। আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগ দলীয় ভাবে অংশগ্রহন করার সুযোগ থাকছে না। তবে আগামী নির্বাচনেও জয়-পরাজয় হবে মুলত চা শ্রমিকদের ভোটেই। তাই যে প্রার্থী চা শ্রমিকদের মন জয় করে ভোট বাগিয়ে নিতে পারবেন তিনিই এই আসনে জয়ের মালা পড়বেন।

এই আসনে বিএনপি থেকে প্রার্থী হবার জন্য মাঠে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন বিএনপির একাধিক নেতা। জামায়াত, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম একক প্রার্থী এবং একজন সাংবাদিকের নামও শোনা যাচ্ছে। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাবেক এমপি  সৈয়দ মো. ফয়সল, জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি  ও জেলা বিএনপি সদস্য এডভোকেট আমিনুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক এমপি শাম্মী আক্তার, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান চৌধুরী নামও শোনা যাচ্ছে।

উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব ফরিদুর রহমান বলেন, আশা করি আমাদের নেতা জেলা বিএনপি সাবেক সভাপতি ও সায়হাম গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. ফয়সল দলীয় মনোনয়ন পাবেন। সৈয়দ মো. ফয়সল নির্বাচনী এলাকায় সায়হাম গ্রুপের অর্থায়নে বিভিন্ন সামাজিক ও আর্থিক কাজ করে যাচ্ছেন। দল আগামী নির্বাচনে তাকে বিএনপির মনোনয়ন দেয় তাহলে নির্বাচনের বৈতরণী পাড় হওয়া সহজ হবে।

এদিকে দলের একাধিক নেতাকর্মী জানান- বিগত আন্দোলন সংগ্রামে এবং ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে দলীয় নেতা কর্মীদের মামলায় লড়াইয়ে আইনি সহযোগীতার ভরসারস্থল হিসাবে এডভোকেট আমিনুল ইসলামের ভুমিকা ছিল চোখে পড়ার মত। সাবেক এমপি শাম্মী আক্তার রাজধানীতে আন্দোলন করতে গিয়ে আওয়ামী পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাবে প্রচারিত হয়।

সূত্র জানায়, এই আসনটি কখনো বিএনপি পায়নি। সব সময় আওয়ামী লীগ পেয়েছে। ১৯৮৬ এবং ৮৮ সালে পেয়েছিল জাতীয় পার্টি।

জানা গেছে, সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানও বিএনপি অথবা কোন একটি জোট থেকে প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে পারেন।

জেলা বিএনপি যুগ্ম আহব্বায়ক এড. মিজানুর রহমানও ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এলাকায় তাঁরও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

এদিকে জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে হবিগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমীর কাজী মাওলানা মুখলিছুর রহমানকে মনোয়ন দিয়েছে দল। এবার এ সংসদীয় আসনে বিএনপির ভোট ব্যাংক ও চা শ্রমিকদের ভোট ব্যাংকে হানা দিতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে জামায়তের নেতাকর্মীরা। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করছেন। তাদের টার্গেট ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা মুখলিছুর রহমানকে বিজয়ী করা।

এদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা গ্রুপিং দ্বন্ধ আর সভা-সমাবেশে ব্যস্ত থাকলেও জামায়াতের নেতাকর্মীরা হাঁটছেন এর বিপরীতে। তারা সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে সেতুবন্ধন তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে (মাধবপুর-চুনারুঘাট)-হবিগঞ্জ-৪ আসনে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছে জামায়াত। এ আসনে তারা চমক দেখাতে চান।

খেলাফত মজলিসের একক প্রার্থী কেন্দ্রীয় মহাসচিব ড.আহমদ আব্দুল কাদের, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর প্রার্থী হিসাবে মাওলানা হেকিম নুরুজ্জামান নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।

স্থানীয়রা জানান, আওয়ামীলীগ দলগত ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে যদি না পারে এ আসনে বিএনপির ভোট ব্যাংক রয়েছে।  তবে বিএনপিতে রয়েছে বর্তমানে বিভক্তি । এসব সমীকরণের মধ্যে চমক দেখাতে চায় জামায়াত।

পাহাড়-টিলা, পর্যটন ও চা বাগান অধুষ্যিত এলাকা হিসেবে পরিচিত হবিগঞ্জ-৪ আসন। মাধবপুর-চুনারুঘাট উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে মোট ভোটার ৫ লাখ ৫০ হাজার ২৭৩। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৭৬ হাজার ৬০৭ ও নারী ভোটার ২ লাখ ৭৩ হাজার ৬৬৫ জন। তবে এবার ভোটারদের মাধ্যে বেশির ভাগ ভোটার রয়েছে নতুন প্রজন্মের। যারা বিগত তিনটি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। এবার তারা অধির আগ্রহে রয়েছে তাদের কাঙ্খিত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত