
২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১৪:০২
ব্যাটারিচালিত রিকশা ও টমটম নিয়ে সিলেটে কয়েকদিন ধরেই চলছে উত্তাপ। প্রশাসন এসব অবৈধ যানবাহন বন্ধে অভিযান শুরুর পর এ উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। নগরের বেশিরভাগ মানুষই দুর্ঘটনাপ্রবণ এসব যানবাহন বন্ধের পক্ষে। তবে মানবিক দিন বিবেচনায় এগুলো চালু রাখার পক্ষেও কেউ কেউ।
এই বিভক্তির প্রভাব পড়েছে বিএনপিতেও। বিশেষত দেশের প্রধান দল বিএনপির নেতারা ব্যাটারি রিকশার পক্ষে বিপক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ব্যাটারি রিকশা বন্ধের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন। এই দাবিতে নগরে নিজের অনুসারীদের নিয়ে কর্মসূচীও পালন করছেন আরিফ। এমনকি ব্যাটারিরিকশার পক্ষে অবস্থানকারীদেরও প্রকাশ্যে সমালোচনা করছেন তিনি।
অপরদিকে সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী প্রকাশ্যেই ব্যাটারি রিকশার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। রিকশাচালকদের সমাবেশে উপস্থিত থেকে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন- ‘মহানগর বিএনপি তাদের পাশে আছে’।
দুই শীর্ষ নেতার এই বিপরীতমুখী অবস্থানে সিলেটের বিএনপির কর্মীদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে বিভক্তি। আর দলটির অন্য নেতারা নিয়েছেন কৌশলী অবস্থান।
গত কয়েকদিন ধরে সিলেটে আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। এতদিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে অভিযান চালালে কোনো রাজনৈতিক নেতার প্রকশ্য সম্পৃক্ততা ছিল না। তবে কয়েকদিন ধরে এ অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছেন আরিফুল হক চৌধুরী ও জেলা বাস-মিনিবাস-কোচ ঐক্য পরিষদের নেতাসহ অনেকে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের অনুমোদনের দাবিতে নগরজুড়ে বিক্ষোভ করে চালক ও মালিকরা। ওই বিক্ষোভকালে হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এসব নিয়ে নগরীতে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়। প্রশাসন থেকে কঠোর বার্তা দেওয়া হয় নগরীতে কোনোভাবে এ রিকশা চলতে দেওয়া হবে না।
এ অবস্থায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের পক্ষে অবস্থান নেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) ডাকা আন্দোলনে তিনি বলেন, এ সমাবেশে উপস্থিত থাকা মানে নগর বিএনপি আপনাদের পাশে আছে। আপনাদের যৌক্তিক দাবির সঙ্গে আমরা আছি।
ওইদিন জেলা প্রশাসকের কাছে ব্যাটারি রিকশাচালকরা স্মারকলিপি প্রদানকালেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন ইমদাদ হোসেন চৌধুরী। সেখানেও তিনি চালকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। এসময় আবারও তাদের প্রতি নিজের ও দলের সমর্থন ব্যক্ত করেন।
এদিকে রোববার ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের দাবিতে রাস্তায় নামেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ সময় কোর্ট পয়েন্টে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের দাবিসংবলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড অনেকের হাতে দেখা যায়। পরে সেখান থেকে একটি পদযাত্রা সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, এ শহরটা আমাদের নিজের, সুন্দর শহর করার জন্য আমরা আজকে এসেছি। ব্যাটারিচালিত রিকশায় তারা ব্যাটারি না লাগিয়ে চালাতে পারে। তাদের ব্যাটারি দিয়ে চালাতে হবে কেন? ব্যাটারি ছাড়া তারা চলে আসুক। ব্যাটারি যখন বন্ধ হবে লোডশেডিং কমবে, তখন দুর্ঘটনা কমবে। পুলিশ কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকের যে উদ্যোগ, সেই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই।
এ ব্যাপারে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে আমরা সবাই একাট্টা।
এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর বক্তব্য জানা যায়নি। তিনি ‘ব্যক্তিগত কাজে’ যুক্তরাজ্যে গেছেন বলে জানিয়েছেন নগর সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। যদিও বাসদের দুই নেতাকে গ্রেপ্তারের পরপরই ইমদাদ যুক্তরাজ্যে চলে যাওয়ায় এ নিয়ে দলে চলছে কানাঘুষা।
তবে গত বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে এ ইস্যুতে বৈঠক করেন মহানগর পুলিশ কমিশনার আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী। ওই সভায় উপস্থিত হয়ে এমদাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, আমি অবৈধ কোন কিছুর পক্ষে নই। সেদিন রিকশা চালকদের উত্তেজনা প্রশমন করতে তাদের জমায়েতে বক্তব্য দিয়েছিলাম।
ওই বৈঠকেই পুলিশ কমিশনার বলেন, রাজনীতিবিদরা অবৈধ রিকশাচালকদের আন্দোলনে উসকানি দেবেন না। আপনারা কে কি করছেন সে তথ্য আমাদের কাছে আছে। আপনারা নিজেরা যদি সংশোধন না হন তাহলে সবকিছু জনগণের সামনে প্রকাশ করে দেওয়া হবে। এতে আপনারাও ছোট হবেন এবং আপনাদের দলও সমস্যায় পড়বে।
সেখানে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক নেতারা এই বৈঠকে এক কথা ও বাইরে গিয়ে আরেক কথা বলবেন না। কথায় ও কাজে মিল রাখবেন।
ওই বৈঠকের পরই গ্রেপ্তার করা হয় জেলা বাসদের আহ্বায়ক আবু জাফর ও সদস্য সচিব প্রণবজ্যোতি পালকে। রিকশা শ্রমিকদের আন্দোলনে মদদ ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও সোমবার তারা জামিন পেয়েছেন।
আপনার মন্তব্য