সিলেটটুডে ডেস্ক

১০ ফেব্রুয়ারি , ২০১৬ ১৯:২০

দেশে চা উৎপাদনে রেকর্ড

দেশে চা উৎপাদনে বড় ধরনের ধস নামে ২০০৬ সালে, যদিও এর আগে থেকেই বাড়তে থাকে চায়ের চাহিদা। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় বাড়ে আমদানিনির্ভরতা। তবে অনুকূল আবহাওয়া ও নতুন কিছু উদ্যোগের ফলে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে উৎপাদন।

২০১৫ সালে দেশের বাগানগুলোয় ৬ কোটি ৭৩ লাখ ৮০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে, যা এযাবত্কালের মধ্যে সর্বোচ্চ। উৎপাদন বৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে আগের মতোই রফতানি করা যাবে চা।

বাংলাদেশ টি বোর্ডের তথ্যমতে, ২০০৫ সালে দেশে চা উৎপাদন হয় ৬ কোটি ১ লাখ ৪০ হাজার কেজি। কিন্তু ২০০৬ সালে উৎপাদন ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজার কেজিতে নেমে আসে। এর পরের বছর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে উৎপাদন। ২০০৭ সালে ৫ কোটি ৮৪ লাখ ২০ হাজার কেজি, ২০০৮ সালে ৫ কোটি ৮৬ লাখ ৬০ হাজার, ২০০৯ সালে ৫ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার, ২০১০ সালে ৬ কোটি ৪ লাখ,  ২০১২ সালে ৬ কোটি ১৯ লাখ ৩০ হাজার, ২০১৩ সালে ৬ কোটি ৫২ লাখ ৬০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়। তবে ২০১৪ সালে উৎপাদন কিছুটা কমে ৬ কোটি ৩৮ লাখ ৬০ হাজার কেজি হলেও ২০১৫ সালে তা আবার ঘুরে দাঁড়ায়।

এইচআরসি গ্রুপের চা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মো. ইদ্রিস এ প্রসঙ্গে বলেন, পরিবেশগত সুবিধা কাজে লাগিয়ে দেশের ইতিহাসে এবারই সবচেয়ে বেশি চা উৎপাদন হয়েছে। এটা দেশের চা শিল্পের জন্য অনেক বড় সুখবর। তবে পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের দেশে হেক্টরপ্রতি চা উৎপাদন এখনো অনেক কম। চা বোর্ডের সহযোগিতায় বাগান মালিকরা উদ্যোগী হলে চা উৎপাদনের এ ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব। ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে আমদানিনির্ভরতা কাটিয়ে চায়ের সোনালি অতীতে ফিরে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়।

এদিকে ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ থেকে বিশ্ববাজারে চা রফতানি হয়েছিল সর্বোচ্চ ৩ কোটি ৪০ লাখ কেজি। এর পর ধারাবাহিকভাবে কমেছে রফতানি। সর্বশেষ ২০১১ সালে রফতানি ২০ লাখ কেজির নিচে নেমে আসে। ২০১৪ সালে রফতানি হয় সর্বনিম্ন ১৩ লাখ কেজি।

দেশে ১৬৬টি বাগানে ৫৮ হাজার ৭১৯ হেক্টর জমিতে চা আবাদ হয়। হেক্টরপ্রতি গড় উৎপাদন ১ হাজার ২৭০ কেজি। সম্প্রতি চা বোর্ড দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় ৬০০ হেক্টর পাহাড়ি জমি ক্ষুদ্র্রায়তন চা চাষের আওতায় আনতে প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে পঞ্চগড়,  ঠাকুরগাঁও,  নীলফামারী,  দিনাজপুর ও  লালমনিরহাটে ৫০০ হেক্টর এবং বান্দরবানে ১০০ হেক্টর। এ দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আগামীতে দেশে চার উৎপাদন বাড়বে ১২ লাখ কেজি।

মূলত ২০০৩ সাল থেকে চা বোর্ড ক্ষুদ্রায়তনে চা চাষ কার্যক্রম শুরু করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পঞ্চগড়ে ১ হাজার ৫০০ হেক্টর এবং বান্দরবান জেলায় ১১৮ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে চা চাষ করা হয়। ভালো ফল পাওয়ায় বড় বাগানের পাশাপাশি ক্ষুদ্রায়তন বাগানেই ঝুঁকছে চা বোর্ড। বেসরকারি বাগান মালিকের অনেকেই রুগ্ণ চা বাগানে নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বাড়িয়েছেন উৎপাদন।

চা বোর্ডের সদস্য  (ফিন্যান্স অ্যান্ড ট্রেড) শঙ্কর প্রসাদ দেব বলেন, সরকার চা উৎপাদন বাড়াতে সর্বাত্মক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে উত্তরবঙ্গের নীলফামারী, পঞ্চগড়সহ বেশ কয়েকটি জেলায় চাষীদের উদ্বুদ্ধ করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। বান্দরবানসহ পার্বত্যাঞ্চলের উঁচু পাহাড়গুলোয়ও বাগান সম্প্রসারণের কাজ চলছে।

উল্লেখ্য, দেশে ১৯৯৬ সালে হেক্টরপ্রতি চায়ের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ১৫০ কেজি। দেড় দশকে হেক্টরপ্রতি চা উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ১৭০ কেজি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশ চা উৎপাদনে ঈর্ষণীয় সাফল্য পেলেও বাংলাদেশে এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির গতি অনেক শ্লথ। ভারত, শ্রীলংকা, ভিয়েতনামসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বাড়ালেও পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ।

চায়ের উৎপাাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধির বিষয়ে চা বোর্ডের উপপরিচালক (পরিকল্পনা) মুনির আহমেদ বলেন, দেশের ইতিহাসে ২০১৫ সালেই সবচেয়ে বেশি চা উৎপাদন হয়েছে। বছরের শুরুতে বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি শেষার্ধেও চাহিদা অনুযায়ী বৃষ্টি হয়েছে। আগামী বছর পরিবেশ অনুকূলে থাকলে উৎপাদনের এ রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে দেশে চায়ের উৎপাদন বাড়াতে চা চাষের ক্ষেত্র বাড়ানো হচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কয়েক বছরের মধ্যে সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন তিনি।

দেশে ১৬৬টি চা বাগানের মধ্যে মৌলভীবাজারে রয়েছে ৯০টি। এছাড়া হবিগঞ্জে ২৩, সিলেটে ২০, চট্টগ্রামে ২২, রাঙামাটি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি করে ও পঞ্চগড়ে নয়টি বাগান রয়েছে। ছোট পরিসরের চা চাষসহ দেশে চা বাগানের মোট ভূমি ১ লাখ ১৬ হাজার ২১৯ হেক্টর। এর মধ্যে ৫১ শতাংশ অর্থাত্ ৫৮ হাজার ৭১৮ হেক্টর জমি চা চাষের আওতায় রয়েছে। ৩৯ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে রাবার, বাঁশ, ধান, কাঁঠাল, লেবুসহ বিবিধ ফলের চাষ, পরিকল্পিত ও  অপরিকল্পিত বনায়ন রয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত