এমডি মুন্না, জগন্নাথপুর

১৫ মার্চ, ২০১৬ ২২:৩৯

জগন্নাথপুরে কুশিয়ারা নদী ভাঙ্গনে গৃহহারা ৫ শতাধিক পরিবার

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে কুশিয়ারা নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে প্রায় শতাধিক পরিবার গৃহহারা হয়েছেন। ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসত বাড়ি, স্কুল, মসজিদ, খেলার মাঠ, ফসলি জমি ও গ্রামীণ রাস্তাঘাট।

বর্তমানে নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়ে হুমকির মুখে রয়েছে অসংখ্য বাড়িঘরসহ অন্যান্য স্থাপনা। তা যে কোন সময় ভেঙে নদী গর্ভে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী। নদী ভাঙ্গনে নিজেদের বসত মাটি হারিয়ে অনেকে যাযাবরের মতো জীবন-যাপন করছেন। ব্যবসা প্রতিষ্টান হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন অনেক ব্যবসায়ী।

বর্ষা মৌসুমে ভাঙ্গন কম থাকলেও হেমন্ত মৌসুমে নদী ভাঙ্গন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। এখনো নদী ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। নদীর করাল গ্রাসে হারিয়ে গেছে অনেক ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। নদী ভাঙ্গনে সব কিছু হারিয়ে অনেকে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে, কুশিয়ারা নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ইতোমধ্যে জগন্নাথপুর উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের ছালিয়াগাঁও নামের একটি গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। এ গ্রামের লোকজন তাদের বসত বাড়ি হারিয়ে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে অনেক পরিবার নতুন করে তাদের বাড়িঘর নির্মাণ করলেও অনেকে এখনো অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছেন।

এছাড়া রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের রাণীগঞ্জ বাজার ও রৌয়াইল বাজারের অধিকাংশ দোকানপাট নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।  

স্থানীয় বাগময়না, নোয়াগাঁও, টেকইয়া, বালিশ্রী, আলমপুর, রাণীগঞ্জ, রৌয়াইল, রাণীনগরসহ ৮টি গ্রামের অধিকাংশ বাড়িঘর ও গ্রামীণ রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। সেই সাথে তলিয়ে গেছে এসব গ্রামের কয়েকটি স্কুল, মসজিদ, খেলার মাঠ, ফসলি জমি। এখনো ভাঙ্গনের কবলে পড়ে হুমকির মুখে রয়েছে অসংখ্য বাড়িঘরসহ অন্যান্য স্থাপনা।

তাছাড়া পার্শ্ববর্তী পাইলগাঁও ইউনিয়নের পাইলগাঁও, পুরান আলাগদি, কদমতলা, জালালপুর (ভাঙা বাড়ি), সোনাতলা, নতুন কসবাসহ আরো কয়েকটি গ্রামের অসংখ্য ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট নদী গর্ভে তলিয়ে গেছে। এখনো ভাঙ্গনের কবলে রয়েছে অনেক ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। এছাড়া আশারকান্দি ইউনিয়নের বড়ফেছি বাজারসহ আরো বিভিন্ন গ্রামের বসত ভিটা ও দোকানপাট বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে নদী পাড়ের বাড়িঘর ও অন্যান্য স্থাপনা।

নদী ভাঙ্গন রোধে সাড়ে ২৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।

মঙ্গলবার বিকেলে রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের বাগময়না গ্রাম এলাকায় গিয়ে সরজমিনে দেখা যায়, কুশিয়ারা নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে হুমকির মুখে রয়েছে গ্রামের একটি মসজিদ, গ্রামীণ রাস্তা ও আশ পাশের বাড়িঘর। যে কোন সময় তা ভেঙ্গে নদী গর্ভে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা।

এ ব্যাপারে স্থানীয় রাণীগঞ্জ বাজার সেক্রেটারী আজমল হোসেন মিঠু, বাজারের ডিলার ধণেশ চন্দ্র রায়, ব্যবসায়ী কাজল রায়, গোলাম সারোয়ার, সমাজসেবক মাওলানা নিজাম উদ্দিন জালালী, সুহেল আহমদ, হুমায়ূন আহমদ তালুকদারসহ অনেকের সাথে কথা হয়।

এ সময় তারা জানান, এক সময় রাণীগঞ্জ বাজারটি খুবই জমজমাট ছিল। এ বাজারের সুনাম সারা দেশে রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে বাজারটি ছিল ঐতিহ্যবাহী। এ বাজার থেকে পুরো সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে মালামাল রপ্তানি হতো। বর্তমানে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বাজারটি তার জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে। ইতোমধ্যে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে পুরনো রাণীগঞ্জ বাজার বিলীন হয়ে যাওয়ায় অবশিষ্ট জায়গায় আবার বাজার গড়ে উঠেছে। বর্তমানে রাণীগঞ্জ বাজার নদী ভাঙ্গন থেকে অনেকটা নিরাপদ থাকলেও বাজারের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রামের বাড়িঘর হুমকির মুখে রয়েছে।

এছাড়া কুশিয়ারা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীর দুই পাড় ভেঙ্গেই চলেছে। তারা নদী ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে রাণীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মজলুল হক বলেন, এ পর্যন্ত নদী ভাঙ্গনে শুধু রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ গৃহহারা হয়েছেন। ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে আরো অসংখ্য বাড়িঘরসহ অন্যান্য স্থাপনা।

তিনি আরো বলেন, নদী ভাঙ্গন রোধে মাননীয় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান সাড়ে ২৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে অত্র অঞ্চলের লোকজন নদী ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা পাবেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত