মারূফ অমিত

১৬ মে, ২০১৬ ০১:৩৫

স্টার টি গার্ডেন থেকে তারাপুর চা বাগান

সিলেট তথা দেশজুড়েই এখন আলোচিত নাম তারাপুর চা বাগান। রোববার শিল্পপতি রাগীব আলীর দখল থেকে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা মূল্যের এই দেবোত্তোর সম্পত্তিটি উদ্ধার করে প্রশাসন।

জানা যায়, বৃটিশ আমলে তারাপুর চা বাগানের প্রথম নাম ছিল ‘দি স্টার টি গার্ডেন’। তখন এর মালিক ছিলেন বৃটিশ ব্যবসায়ী সি কে হার্ডসন। তার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে বাগানের মালিকানা পান ডব্লিউ আর হার্ডসন। ১৮৯২ সালের ১০ জুন সাত হাজার টাকায় ৪২২.৯৬ একরের বাগানটি ডব্লিউ আর হার্ডসন রেজিস্ট্রি দলিলের মাধ্যমে বিক্রি করে দেন বৈকুণ্ঠ চন্দ্র গুপ্তের কাছে। মালিকানা পরিবর্তনের পর বাগানের নামেরও পরিবর্তন হয় ‘স্টার’ থেকে ‘তারা’- তারাপুর চা বাগান।  

১৯১৫ সালের ২ জুলাই বৈকুণ্ঠ চন্দ্র গুপ্ত শ্রী শ্রী রাধা কৃষ্ণ জিউ দেবতার নামে বাগানটি উৎসর্গ করেন। তখন থেকেই ৪২২.৯৬ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা তারাপুর বাগানটি পুরোটাই দেবোত্তর সম্পত্তি।  বৈকুন্ঠ চন্দ্র গুপ্তের পর তাঁর ছেলে রাজেন্দ্র গুপ্ত এই দোবোত্তর সম্পত্তির সেবায়েত হন।


১৯৬৮  সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বাগানটি 'শত্রু সম্পত্তি' হিসেবে ঘোষণা করে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাজন্দ্র গুপ্ত, ও তাঁর তিন ছেলে শহীদ হন। তাঁর তিন মেয়ে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে পাক সেনারা।

নাবালক হওয়ায় তখন বেঁচে যান রাজেন্দ্র গুপ্তের ছেলে পঙ্কজ গুপ্ত।

স্বাধীনতার পর বাগানটি আবার দেবত্তোর সম্পত্তির মর্যাদা ফিরে পায়। তখন পঙ্কজ গুপ্ত এই বাগানের সেবায়েত হিসেবে নিয়োজিত হন।

১৯৮৮ সালে রাগীব আলীকে বাগানটি দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে ইংল্যান্ড চলে যান পঙ্গজ। এরপর রাগীব আলী নিজেই এই বাগানের লিজগ্রহিতা বনে যান। উচ্চ আদালত যাকে 'প্রতারণামূলক' হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

দখলের পর রাগীব আলী তারাপুরের বাগান ঘিরে তিনি গড়ে তোলেন আবাসন প্রকল্প, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। তবে গত জানুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে বাগানটি মূল সেবায়েতকে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই নির্দেশ মোতাবেক রোববার তারাপুর চা বাগান রাগীব আলীর দখল থেকে উদ্ধার করে পঙ্কজ গুপ্তকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত