নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ এপ্রিল, ২০১৭ ১৪:২৮

বর্ণিল মঙ্গল শোভাযাত্রায় মৌলবাদের জবাব

মৌলবাদী গোষ্ঠির হুমকি আর সকল ভয়কে জয় করে বর্ণিল আয়োজনে সিলেটে এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে বরণ করা হয়েছে নতুন বছরকে। নানা হুমকি সত্ত্বেও এবছর আরো জাকজমকপূর্ণভাবে আয়োজিত হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। এসব শোভাযাত্রায় বিপুল উৎসাহে যোগ দেন নানা বয়সী মানুষ।

এবছর প্রথমবারের মতো জেলা প্রশাসন ও শিল্পকলা একাডেমি যৌথভাবে নগরীতে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে। এতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ নেন।

শাহজালাল বিশ্ববিবদ্যাল, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও এমসি কলেজ প্রতিবছরের মতো এবারও নিজেদের ক্যাম্পাসে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে।

নগরীর বিভিন্ন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি, লিডিং ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিও আলাদাভাবে নগরীতে আয়োজন করে বর্ণিল মঙ্গল শোভাযাত্রার।

উদীচীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও নগরীর প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আলাদাভাবে এবছর মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে। ফলে বৈশাখের প্রথম দিনের সকালে নগরী ছিলো মঙ্গল শোভাযাত্রাময়।

এসব শোভাযাত্রায় হাতি ঘোড়া নিয়ে, বিভিন্ন মুখোশ পরে নেচে গেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে অংমগ্রহণকারীরা। একইসঙ্গে সকল অশুভকে দূর করে শুভকে আহ্বান জানানো হয়। অন্ধকারকে তাড়িয়ে আলোর পথে যাত্রার আহ্বান জানানো হয়।

এবারের বাংলা নববর্ষ উদযাপন অনেক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ চলতি বছরেই মিলেছে মঙ্গল শোভাযাত্রার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। আর তাই এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় স্বাভাবিকভাবেই যুক্ত হওয়ার কথা নতুন মাত্রা। আশির দশকের শেষ দিকে যশোর ও পরে ঢাকা চারুকলার শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে যে শোভাযাত্রার শুরু, তা সাড়ে তিন দশক পেরিয়ে জায়গা করে নিয়েছে ইউনেস্কো ঘোষিত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায়। ফলে এবারের শোভাযাত্রা নিয়ে ছিলো অন্যতর প্রত্যাশা।

একই সঙ্গে পিঠাপিঠি যমজের মতোই ছিলো আশঙ্কাও। ১৪২৩ সালজুড়েই দেশে ঘটেছে নানা সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী হামলার ঘটনা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের বদৌলতে এসব হামলা খুব বেশি প্রাণঘাতী রূপ না নিলেও আতঙ্ক তৈরি করতে পেরেছে কিছুটা হলেও। এছাড়া পহেলা বৈশাখ উদযাপন নিয়েই ইসলামপন্থী বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠীর আপত্তি ও আস্ফাালন নিয়মিত শোনা গিয়েছিলো। এরই মধ্যে ঘটে গেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আঁকা দেয়ালচিত্রে পোড়া মবিল লেপে দেয়ার ঘটনাটি। বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় উত্সবের ওপর আরোপ করা হয়েছে প্রশাসনিক বিধিনিষেধ।

সরকারের পক্ষ থেকে এবার মঙ্গল শোভাযাত্রাকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যদিও বিভিন্ন মৌলবাদী গোষ্টি মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ইসলামের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় দাবি করে এই শোভাযাত্রা আয়োজন না করার দাবি জানায়।

তবে সকল শঙ্কা দূর হয়েছে মানুষের সম্মিলিত উচ্ছ্বাসের কাছে। সাধারণ মানুষ আবারও প্রমাণ করেছে বৈশাখই বাঙালির প্রাণের উৎসব। অসাম্প্রদায়িক উৎসব।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত