জাহিদ উদ্দিন, গোলাপগঞ্জ

০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০১:৩৩

‘বন্যায় বেবাগ খাইয়া গেছে, ঈদের আনন্দ নাই’

সিলেটের গোলাপগঞ্জে ঈদের আনন্দ নেই হাকালুকি হাওরপারের মানুষের মধ্যে। সম্প্রতি তিন দফা বন্যায় তাদের কেড়ে নিয়েছে সুখ ও শান্তি। বাড়ি-ঘর, ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় সংকটে পড়েছেন হাকালুকি হাওরপারের বাসিন্দারা। আগামী দিনগুলো কীভাবে চলবে সে চিন্তায় চিন্তিত তারা। ফলে এসব বন্যার্ত মানুষের মধ্যে ঈদের আনন্দ নেই বললেই চলে।

জানা যায়, গেল বন্যায় উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাকালুকির হাওর পারে অবস্থিত শরিফগঞ্জ ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের হাওরপারে অবস্থিত ইসলামপুর, রাংজিওল, কালিকৃষ্ণপুর, খাটকাই সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের সোনালী ধান এবং ঘেরের মাছ তলিয়ে যায়।এতে লাখ লাখ টাকার ক্ষতির শিকার হন এসব অসহায় লোক। এ ধকল এখনও কাটিয়ে উঠতে পারছেন না তারা। যারা ব্যাংক ও দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে চাষ করেছিলেন, তাদের এখন মাথায় হাত। ক্ষতিগ্রস্ত এসব লোকদের দিন কাটছে এখন অর্ধাহারে-অনাহারে। তাদের ঘরে নেই চাল, হাতে নেই কাজ, পকেটে নেই টাকা,ঘরে ঘরে চলছে হারানোর নিদারুণ যন্ত্রণা।এমন   দূর্বিসহ অবস্থায় তারা দিনানিপাত করছেন। তাই ঈদ প্রস্তুতি তাদের ঘরে নেই বললেই চলে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে তাদেরকে যে ত্রাণ দেয়া হয় তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। হাতে টাকা-পয়সা নেই। তাই এসব এলাকার অনেক লুক কুরবানি দিতে পারছেন না।

কালিকৃষ্ণপুর গ্রামের  টুক্কুনি বেগম জানান, বন্যায় বেবাগ খাইয়া গেছে,ঘরে খাবার নাই তাই ঈদের আনন্দও নাই।

ইসলামপুর গ্রামের অদু মিয়া বলেন, কর্জ কইরা ফসল করার পর এবারের বানে ভাসাইয়া নিল সব ফসল, কিসের ঈদ কিসের আনন্দ। আমাগো কপালে কোনো শান্তি নাই।

এদিকে বন্যাকে কেন্দ্র করে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের অবস্থা আরো কাহিল হয়ে পড়েছে। ঈদের আনন্দ নেই বরং গৃহপালিত পশু ঈদ বাজারে বিক্রি এবং সহায় সম্ভব বন্ধক রেখে অনেক পরিবার পেটের আহার যোগাচ্ছে।

জানা যায়,  তিন দফা বন্যায় অধিকাংশ পরিবারের থমকে গেছে মানুষের জীবনযাত্রা। তবুও দমে যায়নি এসব উদ্যামী মানুষজন। ধার দেনা করে ভাগ্য বিড়ম্বিত কৃষকরা নতুন ফসল ফলাতে চাষাবাদ শুরু করেছে। ঈদের আনন্দ তাই তাদের ঘরে নেই। বরং এই উৎসব বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরে বাড়তি এক কষ্ট নিয়ে এসেছে বলে আবেগজড়িত কন্ঠে অনেকেই প্রকাশ করেন। সবকিছু মিলিয়ে আসছে ঈদের আনন্দ তাদের মধ্যে নেই বললেই চলে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত