জামালগঞ্জ প্রতিনিধি

০৭ নভেম্বর, ২০১৭ ০১:২৩

অবশেষে সুনামগঞ্জে ভরাট হয়ে যাওয়া নদী খনন করছে পাউবো, হাওরপাড়ে স্বস্তি

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার বৌলাই নদী খননের কাজ শুরু হয়েছে। এতে ওই এলাকার হাওরপাড়ের মানুষের ফিরেছে স্বস্তি। নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় অল্পবৃষ্টিতেই নদী উপচে হাওরে ঢুকে পড়ে পানি। ফলে তলিয়ে যায় ফসল। তাই দীর্ঘদিন থেকেই নদী খননের দাবি জানিয়ে আসছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষকরা।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, জেলার আপার বৌলাই, মরা সুরমা, নলজোড়, রক্তি, চামটিসহ পাঁচটি নদীর ৯৮ কিলোমিটার নৌপথ খননের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এর মধ্যে পুরাতন সুরমায় ৪০ কিলোমিটার, আপার বৌলাইয়ে ১৬ কিলোমিটার, রক্তি নদীতে ১২ কিলোমিটার, নলজোড়ে ২০ কিলোমিটার ও চামটি নদীতে ১০ কিলোমিটার নৌপথ খনন করা হবে। এরই মধ্যে বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে এসব নদীর জরিপ কাজও শেষ করা হয়েছে। শুরু হয়েছে বৌলাই নদীর খননের কাজ।

গত ২৪ অক্টোবর থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত আপার বৌলাই নদীতে সমীক্ষা চালান সার্ভে অ্যান্ড ডাটা কনসালট্যান্ট ফার্মের সার্ভে স্পেশালিস্ট প্রকৌশলী জায়েদ হোসেনের নেতৃত্বে তিনজন প্রকৌশলী ও দুই জন সার্ভেয়ার। এর আগে তারা লালপুর থেকে ধর্মপাশা উপজেলার যারাকোনা নোয়াগাঁও গ্রাম পর্যন্ত এবং সুন্দরপুর তেগাঙ্গা এলাকা পর্যন্ত সমীক্ষা চালান।

প্রকৌশলী জায়েদ হোসেন বলেন, ‘নদীর মধ্য ভাগ থেকে দুই পাশের তীরে ১০ মিটার করে মোট ২০ মিটার ঢাল রাখা হয়েছে। নদীর বর্তমান বেড লেভেল থেকে গড়ে সাড়ে চার মিটার করে খনন করা হবে। এছাড়া নদীর চর কেটে পানি প্রবাহের প্রতিবন্ধকতা দূর করা হবে।’

বৌলাই নদীর লালপুর ও সুখাইড় এলাকায় নদী খননের কাজের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত মেসার্স নুরুজ্জামান খান ড্রেজিং কোম্পানির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. খায়রুল মোমেন বলেন, ‘নদী খননের জন্য নেদারল্যান্ডে তৈরি খান অত্যাধুনিক আইএইচসি মডেলের দুইটি ড্রেজার ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে বৌলাই নদীর লালপুর এলাকায় খান সিএসডি ১ ও সুখাইড় এলাকায় খান সিএসডি ২ ড্রেজার কাজ করছে। বৌলাই নদীর এন্ডিং পয়েন্টে অ্যাংকরিং করতে না পারায় খনন কাজে কিছুটা সমস্য দেখা দিয়েছে। এছাড়া মাটি নরম হওয়ায় নদীর দুই তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীর তলদেশে নরম পলি থাকায় ড্রেজারের পুরো কার্যক্ষমতা নিয়ে কাজ করতে পারছে না।’

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড-১-এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস বলেন, ‘সমীক্ষা দল নদী খননের প্রি-ওয়ার্কের কাজ করছে। খনন করা হলে পোস্ট-ওয়ার্কের কাজ করবে।’

নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক ভূইয়া বলেন, ডিজাইন অনুযায়ী নদী খনন নিশ্চিত করতে নিয়মিত মনিটরিং চলছে, পুরাতন সুরমা, রক্তি, চামটি, নলজোড়, আপার বৌলাই আগামী দুই বছরের মধ্যে খনন করা হবে। এখন বৌলাই নদীতে খনন কাজ চলছে। এসব নদী খনন করা হলে নদীর পানিধারণ ও প্রবাহক্ষমতা বাড়বে। এতে হাওর এলাকার একমাত্র বোরো ফসল আগাম বন্যার হাত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাবে।
 
নদী খননকাজ শুরু হওয়ার স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ওই এলাকার কৃষকরাও। ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের কাজীরগাঁও গ্রামের কৃষক জবান আলী বলেন, ‘বৈশাখের শুরুতে বৌলাই টইটুম্বর থাকে। সেসময় একটু বৃষ্টি হলেই হালিহাওর, সোনামোড়ল, চন্দ্রসোনার থাল, ধানকুনিয়ার হাওরের বোরো ফসল হুমকির মুখে পড়ে। অনেক সময় পানির চাপে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে হাওরের পর হাওরের ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। নদী খনন করা হলে মানুষ ফসলডুবির হাত থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাবে।’

উলুকান্দি/যতিন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক যতীন্দ্র দাস,সুধির দাস,অনুকুল তাং বলেন, ‘বৌলাই নদীতে বছরের ছয় মাস পানি থাকে, বাকি ছয় মাস নদীতে চর পড়ে থাকে। নদী খনন শুরু হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ সচল হবে ও হাজার হাজার কৃষকের বোরো ধান রক্ষা পাবে।’

জয়শ্রী, সুখাইড়’র আবুল মিয়া, প্রানেশ বর্মণ, ইসলাম উদ্দিন,তাজুল ইসলাম বলেন, ২০-২০ বছর আগেও এই নদীতে বড় বড় নৌকা চলাচল করত। বছরের পর পর পলি ভরাট হয়ে নদীটি একটি এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। লালপুর থেকে সুন্দরপুর পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বৌলাই নদীর ১২ কিলোমিটার এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে কোনও পানি থাকে না। ডিজাইন অনুযায়ী সঠিকভাবে নদী খনন করা হলে হাওর এলাকার মানুষ এর সুফল পাবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত