বড়লেখা প্রতিনিধি

২৭ নভেম্বর, ২০১৭ ১৯:০১

দেড়দশক পর দখলমুক্ত বড়লেখা পৌরশহরের ফুটপাত

যানজট নিরসনে সড়কে বসানো হলো ডিভাইডার, ১৫০ ব্যবসায়ি পুনর্বাসিত

প্রায় দেড়দশক পর অবৈধভাবে দখলে রাখা মৌলভীবাজারের বড়লেখা পৌর এলাকার মৌলভীবাজার-চান্দগ্রাম (বড়লেখা) আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশের ফুটপাত দখলমুক্ত করা হয়েছে। ফলে প্রশস্ত হয়েছে সড়ক। সড়কের মাঝখানে বসানো হয়েছে ডিভাইডার।

রোববার (২৬ নভেম্বর) রাতে ডিভাইডার বসানোর এ কাজ করা হয়েছে।

এদিকে ফুটপাতের দেড়শ ব্যবসায়ীকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে পৌরসভার নির্মিত নিজস্ব মার্কেটে। গত শনি ও রোববার শহরের ফুটপাতের এ দখল মুক্ত করা হয়। দীর্ঘদিন পর ফুটপাতে বসানো অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ায় শহরবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। এতে পাল্টে গেছে পৌরশহরের চিত্র।

পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, শহরের প্রধান সড়কটি মৌলভীবাজার-চান্দগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়ক। সড়কটির বড়লেখা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে উত্তর বাজারের ষাটমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত এলাকা খুবই ব্যস্ত থাকে। এই এলাকার ফুটপাতে যত্রতত্র দখল করে গড়ে ওঠে দোকান ঘর। ফলে সংকুচিত হয়ে পড়ে সড়ক। সব সময় যানজট দেখা দিত। বিঘ্ন ঘটতো নাগরিক ও শিক্ষার্থীদের চলাচলে। দুর্ভোগ পোহাতে হত জনসাধারণকে।

ফুটপাতের দখল ছেড়ে দেওয়া সবজি ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘মেয়র সাহেব পুনর্বাসনের কথা বলেছিলেন। তিনি তাঁর কথা রেখেছেন। আমরা গরিব মানুষ। রাস্তার ধারে দোকানদারি করতাম। খুব চিন্তায় আছলাম (ছিলাম) ব্যবসার জায়গায় পাইমু কিনা। পৌর মার্কেটে বড় জায়গা পাইছি।’

আমির হোসেন ও সুমন আহমদ নামের দুইজন শ্রমিক বলেন, ‘আগে যানজটের কারণে অনেক কষ্ট অইত। এখন আর এ সমস্যা অইত নায়। খুব সুন্দর অইছে। অন্য রকম এক শহর মনে ওর।’

বিলাল আহমদ নামের আরেক সবজি ব্যবসায়ী বলেন, ‘মেয়রের পদক্ষেপ ভালো লাগছে। তিনি শক্ত ভূমিকা নিয়েছেন। অন্য কেউ যা করতে পারেননি তিনি তা করে দেখিয়েছেন। দীর্ঘদিনের যন্ত্রণার অবসান হয়েছে। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা হাঁটতে পারতো না। দোকান পাট আর গাড়ি সব কিছু দখল করে রাখতো।’

পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী সোমবার (২৭ নভেম্বর) বলেন, ‘আমার নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ ইশতেহার ছিল যানজটমুক্ত বড়লেখা শহর রাখা। এটা নিরসনের জন্য ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে দফায় দফায় সভা করি। ফুটপাতের দখল সরায় শহর এখন যানজট মুক্ত হবে। সড়কে ডিভাইডার দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সাংসদ শাহাব উদ্দিনের পরামর্শে এবং ইউএনও, ওসি ও সদর ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় এটা সম্ভব হয়েছে।’

তিনি জানান, প্রথম দফায় শহর থেকে ৫টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড সরানো হয়। দ্বিতীয় দফায় বিভিন্ন দোকানের সামনের পাকা করা ঢালাই সরানোর জন্য বলা হয়। মালিকরা তা স্বেচ্ছায় অপসারণ করেন। যা ছিল শহরের যানজট ও জলজটের প্রধান কারণ। তৃতীয় দফায় ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা তাদের দখল ছাড়েন। তাদের পৌর মার্কেটে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ সহিদুর রহমান সোমবার (২৭ নভেম্বর) বলেন, ‘ফুটপাত দখলের কারণে শহরে যানজট লেগেই থাকতো। এখন নতুন করে কেউ যাতে ফুটপাত দখল নিতে না পারে সে জন্য পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুহেল মাহমুদ সোমবার (২৭ নভেম্বর) বলেন, ‘এটা দীর্ঘদিনের একটা বড় সমস্যা ছিল। অনেক সরকারি ভূমি দখলে ছিল। রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে পড়েছিল। আমি ও পৌরসভার মেয়র জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের নিয়ে সভা করি। সভায় ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দেওয়া হয়। পুনর্বাসনের বিষয়ে একটি কমিটিও গঠন করে দেওয়া হয়। ফুটপাত দখল ছাড়ার পর তাদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। এখন বাজার অবৈধ দখল মুক্ত হয়েছে।’

এছাড়া সড়ক জনপথ বিভাগকে তাদের ভূমি যাতে পুনরায় অবৈধ দখল না হয় সে বিষয়ে তৎপর থাকতে বলা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত