নিজস্ব প্রতিবেদক

২৯ নভেম্বর, ২০১৭ ০১:২১

ধুলায় অতিষ্ঠ নগরবাসী

চলছে সড়কের উন্নয়ন কাজ। ঝাঁকুনি দিয়ে চলছে গাড়ি, উড়ছে ধুলা। ধুলায় মাখামাখি হয়ে চলছেন পথচারিসহ স্কুলগামি শিশুরা। এটাই এখন নগরীর সংস্কার কাজ চলমান সকল সড়কের দৃশ্য।

উন্নয়ন কাজ চলমান এসব সড়কে একসময় ছিলো কাদার যন্ত্রণা। এখন বৃষ্টি না থাকায় ধুলায় অতিষ্ঠ জনসাধারণ। পরিবেশবিদরা বলছেন এসব ধুলায় বায়ুদূষণ হচ্ছে। তাই কর্তৃপক্ষের উচিত ধুলা রোধে শুকনা মৌসুমে নগরীর সকল সড়কে নিয়মিত পানি দেওয়া । তবে সিলেট সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, উন্নয়ন কাজে জনগনকে কিছু কষ্ট সহ্য করতে হয়।

সিলেটের ব্যক্ষব্যাধি হাসপাতালের প্রধান ডাক্তার জাকারিয়া মাহমুদ ধুলার বিভিন্ন ক্ষতিকারক বিষয়ের কথা জানিয়ে বলেন, ধুলায় মানুষের মারাত্মক ক্ষতি হয়। ধুলা থেকে বায়ুদূষণের ফলে যেসকল মানুষের শ্বাসকষ্ট আছে তাদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে। যাদের শ্বাসকষ্ট নেই তাদের নতুন করে শ্বাসকষ্ট রোগ তৈরি হতে পারে। কাশী, হাচ্ছি, এজমাসহ ব্যক্ষব্যাধিজনিত বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে। শীতকালীন সময়ে ধুলার কারণে বায়ুদূষণ হয়, ফলে এসময় শ্বাসকষ্টসহ ব্যক্ষব্যাধিজনিত রোগীর সংখ্যাও বাড়ে বলে জানান তিনি।

সরেজমিনে নগরীর মিরের ময়দান থেকে সুবিদবাজার অভিমূখী সড়ক, চৌহাট্টা থেকে মিরবক্সটুলা সড়ক, জামতলা সড়ক, নয়াসড়-জেলরোড সড়ক, কদমতলী বাস টার্মিনাল সড়ক, ঝালোপাড়া সড়কসহ উন্নয়ন কাজ চলমান সকল সড়ক ঘুরে সংস্কার চলমান এসব সড়কে জনদুর্ভোগের চিত্র দেখা  গেছে। উন্নয়ন চলমান এসব সড়ক দিয়ে পথচারীসহ স্কুলগামী শিশুরাও ধুলার কারণে হাত দিয়ে নাক-মুখ চেপে ধরে হাঁটছেন। চলাচলকারীদের বেশিরভাগকেই কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কথা উল্লেখ করে বিভিন্ন কথা বলতেও শোনা গেছে।

একাধিক পথচারির সাথে কথা বললে তাঁরা বলেন, উন্নয়ন কাজ চলছে ভালো কথা। কিন্তু নাগরীকদের ভোগান্তির কথাও কর্তৃপক্ষের নজরে রাখতে হবে। উন্নয়নের নামে নাগরীক ভোগান্তি যাতে না হয় সেই বিষয়টিও খেয়াল রাখা উচিৎ।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম শীত মৌসুমে নগরীর সকল সড়কে নিয়মিত পানি মারার উচিৎ জানিয়ে বলেন, প্রতিনয়ত এসব ধুলায় বায়ুদূষণ ঘটছে। তাই ধুলার রোধে সিটি কর্পোরেশন থেকে শুকনা মৈৗসুমে নগরজুড়ে সকল সড়কে পানি মারার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। যেসকল সড়কে কাজ চলছে এসব সড়কে অন্তত দুইবার পানি মারা উচিৎ। তা না হলে বায়ুদূষণের কারণে পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে মানুষের নানান সমস্যার তৈরি হবে। তাই সিটি কর্পোরেশন থৈকে শুকনা মৌসুমে নগরীর সকল সড়কে প্রতিদিন অন্তত একবার পানি মারার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

ব্লু-বার্ড স্কুলের সামনে ধুলার মাধ্যে নাক ঢেকে শিশু প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে যাচ্ছেন তার মা লিপি পাল। এসময় কথা হয় তাঁর সাথে। তিনি এসব ধুলাকে 'উন্নয়নের ধুলা' অখ্যা দিয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন। বলেন, উন্নয়নের নামে চলছে দুর্ভোগ। দিনের পর দিন এসব রাস্তায় কাজ চলে আর আমরা সাধারণ মানুষ পড়ি দুর্ভোগে। মেয়েটাকে নিয়ে প্রতিদিন স্কুলে আসি। এক সময় ছিলো কাদা আর এখন ধুলার যন্ত্রণা। জানি না এ যন্ত্রণার শেষ কবে হবে।

পথচারীরা নাক ঢেকে দ্রুত চলে গেলেও এসব সড়কের পাশের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে পড়তে হয়েছে স্থায়ী বিড়ম্বনায়।

কদমতলী বাস টার্মিনাল এলাকার মুদি দোকানী সামসুল আলম বলেন, এসব ধুলায় আমরা অতিষ্ঠ। প্রতিদিন সকালে একবার পানি মারার পর আর পানি মারা হয় না। তাই দিনের রোদে খুব বেশি পরিমাণ ধুলা তৈরি হয়। দোকানের ভিতরেও ধুলায় ভরে যায় বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, কোন সড়কে কাজ চললে সকলকেই কিছু কষ্ট সহ্য করতে হয়। সিটি কর্পোরেশনের পানির গাড়ির সংকট রয়েছে। পানি মারার জন্য দুইটি গাড়ি দিয়ে প্রতদিন একবার উন্নয়ন কাজ চলমান এসব সড়কে পানি মারা হয়। কাজ চলমান সড়কগুলোতে পানি মারার পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে। পানির গাড়ি বাড়ানো সম্ভব হলে এই মৌসুমে নগরের বিভিন্ন জায়গায় পানি মারার বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে বলে জানান তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত