মিনহাজ উদ্দিন, গোয়াইনঘাট

৩০ নভেম্বর, ২০১৭ ০১:০৯

শারীরিক সীমাবদ্ধতাও দমাতে পারেনি তাকে

ছেলেবেলায় আগুনে দুই হাতের কনুই পর্যন্ত পুড়ে গিয়েছিলো তাঁর। এরপর আর স্বাভাবিক হয়নি হাতদুটি। তবে শারিরীক এই সীমাবদ্ধতা দমিয়ে রাখতে পারেনি তাকে। নিজের মেধা, যোগ্যতা আর পরিশ্রমে জয় করেছেন এই বাধা।

তিনি সুমন চন্দ্র দাস। এখন সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনারের (এসিল্যান্ড) দায়িত্বে রয়েছেন।

শারিরীক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও কর্মদক্ষতা দিয়ে ইতোমধ্যে গােয়াইনঘাটে আলোচনায় এসেছেন এই কর্মকর্তা। নিজ দপ্তরে সার্বিক কার্যক্রমছাড়াও বোমা মেশিনবিরোধী অভিযান, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা নানা প্রতিদিনই নানা কর্মকান্ডে সরব দেখা যায় এই কর্মকর্তাকে।

সুনামগঞ্জের হাওরবেষ্ঠিত বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সুমন চন্দ্র দাস। ছোটবেলাই আগুনে দুহাতের কব্জি, মুখমন্ডলসহ মারাত্মক দগ্ধ হয় তাঁর। এ দুর্ঘটনায় বেঁচে গেলেও তাঁর হাত দুটি এবং মুখমন্ডলে সেই ক্ষতের ভয়াবহতা রয়ে যায়। তাঁর হাত দুটি কাজের প্রায়  অনুপযোগি হয়ে পড়ে।  বন্ধ হয়ে যায় স্বাভাবিক কাজকর্ম।

তবু দমে যাননি সুমন। মা বাবার পরামর্শ ও সহযোগিতায় প্রবল ইচ্ছা শক্তি নিয়ে লেখাপড়ায় মনোনিবেশী হন।  ২০০৪ সালে বিশ্বম্ভরপুর পলাশ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে (বিজ্ঞান) এস.এস.সি, ২০০৬ সালে সিলেটের জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে (বিজ্ঞান) এইচ.এস.সি ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৬-০৭ সেশনে অর্থনীতিতে অনার্স মাষ্টার্স সম্পূর্ণ করেন।  ৩৩তম বিসিএস ক্যাডার উর্ত্তীণ হয়ে তিনি সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। ২০১৪ সালে ৭ আগষ্ট সহকারী কমিশনার হিসাবে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যোগদান করেন। সেখানে এনডিসি, আরডিসিসহ প্রশাসনের বিভিন্ন শাখায় কাজ করেন। সরকারী চাকরীদের প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ কোটা থাকলেও তিনি এ সুযোগ নেননি। নিজের মেধার জোরেই অর্জন করেন চাকরী।। চলতি বছরের ৮ অক্টোবর গোয়াইনঘাটে সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে যোগ দেন।

যোগদানের পর থেকেই সরকারী খাস জমি রক্ষা, জলমহাল, বালু মহাল, পাথর কোয়ারী ব্যবস্থাপনা, ভূমি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়াদি, মোবাইল কোর্ট, বখাটে কাউন্সেলিং, পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন, বিভিন্ন স্থানে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা জটিলতা নিরসন, গোচর নিয়ে সমস্যা সমাধান, রাতারগুলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারী নৌকা চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ নানা কাজে ইতোমধ্যে প্রশংসা কুঁড়িয়েছেন এই কর্মকর্তা।

সুমন চন্দ্র দাস বলেন, বর্তমানে আমি বোনাস লাইফ উপভোগ করছি। আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে শতভাগ চেষ্টা করি, জনগণই তা উপলব্দি করেন। শারীরিক সীমাবদ্ধতা উপেক্ষা করে দৈনন্দিন কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গোয়াইনঘাট একটি বিশাল উপজেলা। পর্যটন ও বাণিজ্যিক কারনে এই উপজেলায় কাজ করা অত্যান্ত চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। আমার শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকলেও কাজকর্ম চালিয়ে যেতে কোন সমস্যা হয় না। জনগণের সমস্যা সমাধানের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখি এবং সমাধানের পথ বের করে দেই।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত