নিজস্ব প্রতিবেদক

০৩ ডিসেম্বর, ২০১৭ ১৯:৩৩

এবার আবাসনের জন্য টিলা কাটছে শাহজালাল ফার্টিলাইজার

কর্মকর্তাদের আবাসন নির্মাণের জন্য টিলা কাটছে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে অবস্থিত শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ। কারখানার পাশে নির্মাণাধীন ‘কলাবাগান আবাসিক এলাকা’র জন্য কাটা হচ্ছে টিলা।  টিলা কেটে ওই আবাসিক এলাকার মাটি ভরাট করা হচ্ছে।

তবে সার কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টিলাটির অবস্থান কারখানা এলাকার মধ্যেই। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ টিলা কেটেছে। খবর পেয়ে টিলা কাটা বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এর আগে ২০১২ সালে এই সার কারখানার ফ্যাক্টরি ভবন নির্মাণকালে কারখানা এলাকায় পাশাপাশি অবস্থিত চারটি টিলা কেটে ফেলার অভিযোগ ওঠে। ৬০/৭০ ফুট উঁচু এসব টিলা কেটে সমতলের সঙ্গে মিশিয়ে দেয়ার অভিযোগ ওঠে সে সময়।

২০১১ সালের নভেম্বরে সিলেটে সব ধরনের পাহাড়-টিলা কাটায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেন উচ্চ আদালত। অব্যাহতভাবে পাহাড়-টিলা কাটার জন্য বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ওই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এছাড়া পরিবেশ আইনেও পাহাড়-টিলা কাটায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

শাহজালাল সার কারখানার আবাসন নির্মাণে টিলা কাটার খবর পেয়ে সম্প্রতি ওই এলাকা পরিদর্শনে যায় পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয়ের একটি দল। পরিদর্শন দলের নেতৃত্বে থাকা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, ওখানে গিয়ে আমরা টিলা কাটার সত্যতা পেয়েছি। টিলা কাটার জন্য তারা কোনো অনুমতি নেয়নি। অনুমতি চাইলেও তা দেয়া হতো না। তিনি বলেন, আমরা মৌখিকভাবে টিলা কাটা বন্ধের নির্দেশ দিয়ে এসেছি। এখন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।

২০১২ সালে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে ৫ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় দেশের বৃহত্ সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড। শাহজালাল সার কারখানা নামে পরিচিত কারখানায় ২০১৫ সালের শেষ দিকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। গত বছর এ কারখানায় ৩ লাখ ৯৩ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন হয়।

কারখানা চালু হলেও আবাসন নির্মাণের কাজ এখনো চলছে। মূল কারখানার দক্ষিণ পাশে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে কলাবাগান আবাসিক এলাকার নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সম্প্রতি এ আবাসিক এলাকার ভূমি উন্নয়নে কাটা হয় পার্শ্ববর্তী টিলা।

সার কারখানা সূত্রে জানা যায়, আবাসিক এলাকার ভূমি উন্নয়নসহ ইট বিছানোর কাজ যৌথভাবে করছে ফয়ছল অ্যান্ড কোম্পানি ও সামিট অ্যাসোসিয়েট নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। কাজ প্রদানের সময় নদীর বালি ও জমির মাটি দিয়ে ভূমি উন্নয়নের শর্ত থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পার্শ্ববর্তী টিলা কেটে মাটি ভরাট শুরু করে।

সরেজমিন দেখা যায়, এক্সক্যাভেটর মেশিনে কাটা হচ্ছে উত্তরভাগ ইউনিয়নে অবস্থিত ‘মুক্তিযোদ্ধা টিলা’। ট্রাক দিয়ে ওই মাটি নেয়া হচ্ছে সার কারখানার আবাসিক প্রকল্পে। এর ফলে এই টিলার প্রায় অর্ধেক এরই মধ্যে হারিয়ে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ভূমিহীন সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্য সচিব বিলাল হোসেন মিন্টু বলেন, ওই টিলার ওপর ১৩টি ভূমিহীন পরিবার বসবাস করে। ক্ষমতার জোরে টিলা কেটে সাবাড় করে ফেলা হচ্ছে। এ কারণে টিলার বাসিন্দারা ঝুঁকিতে রয়েছে। সার কারখানা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানার পরও টিলা কাটা বন্ধে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফয়ছল অ্যান্ড কোম্পানির স্বত্বাধিকারী ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি ডিএম ফয়ছল বলেন, স্থানীয় কিছু লোক আমার বিরোধিতা করতে গিয়ে এ অপপ্রচার চালাচ্ছে। টিলা তিনি কাটেননি এ দাবি করে ফয়ছল বলেন, আবাসিক প্রকল্পের কাজে কিছু ট্রাক্টর ও শ্রমিক লাগিয়েছিলাম। এরা টিলার কিছু মাটি আবাসনে ফেলতে পারে। তবে এখন তা বন্ধ রয়েছে।

এ ব্যাপারে শাহজালাল সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুল হক বলেন, ওই টিলাটি সার কারখানা এলাকার মধ্যেই অবিস্থত। অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি তদারকির জন্য টিলা এলাকায় সার্বক্ষণিকভাবে কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষী নিযুক্ত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত