নিজস্ব প্রতিবেদক

০৩ ডিসেম্বর, ২০১৭ ২১:০৭

‘কোচিং বাণিজ্য একটি দুর্নীতি’

সিলেট ও সুনামগঞ্জে মানববন্ধন

মেয়ের কলেজে ক্লাস হয় না। শিক্ষকরা কোচিংয়ে যেতে প্ররোচিত করেন। এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বারান্দায় অবস্থান নিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধ মালেক হোসেন পীর। তাঁর একক প্রতিবাদী অবস্থান দেশজুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলে। অনেকেই মালেক হোসেনের সাথে একাত্মতা পোষণ করে কলেজে নিয়মিত ক্লাস নেওয়া ও কোচিং বানিজ্য বন্ধের দাবি জানান।

এই দাবিতে রোববার দেশজুড়ে মানববন্ধন করেছে দুর্নীতি পতিরোধ কমিটি। এর অংশ হিসেবে সিলেট ও সুনামগঞ্জেও মানবন্ধন করা হয়েছে। রোববার সকালে সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়।

জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি বিগ্রেডিয়ার জেনারেল অব: জুবায়ের সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ও কমিটির সাধারণ সম্পাদক, এনজিও ফেডারেশনের সভাপতি রোটারিয়ান বেলাল আহমদের পরিচালনায় মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশন সিলেটের বিভাগীয় পরিচালক নিরু শামসুন্নাহার।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, কিছু সংখ্যক অসাধু শিক্ষকদের কারণে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবন আজ হতাশায় পর্যবসিত হতে চলেছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিত্যদিনের পাঠ পরিক্রমা সমাধা না করে শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে যেতে বাধ্য করার কারণে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা নানা ভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বক্তারা কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি জোরদাবী জানিয়ে বলেন, দেশের লাখ লাখ পিতা-মাতা শিক্ষার্থীদের কোচিং এর ফি সহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ যোগাড়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়ছেন।

বক্তারা সম্প্রতি সুনামগঞ্জের এক অভিভাবকের প্রতিবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, শিক্ষক সমাজ খারাপ নয়, কিন্তু কিছু সংখ্যক অর্থলোভী শিক্ষক আজ দেশের আনাচে কানাচে কোচিংয়ের নামে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে ফায়দা হাসিলের যে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আমরা তার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। বক্তারা অবিলম্বে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার লক্ষ্যে সরকারের কাছে জোরদাবী জানান। পাশাপাশি কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সচেতন মহলকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার উদাত্ত আহ্বান জানান তারা।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন কমিটির সহ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মুজিবুর রহমান চৌধুরী, সিনিয়র সাংবাদিক আল আজাদ, বিএনসিসি’র ক্যাপ্টেন প্রফেসর ড. তোফায়েল আহমদ, শাবিপ্রবি’র সাবেক রেজিস্ট্রার জামিল আহমদ চৌধুরী, সিলেট বিভাগ গণদাবী ফোরামের সভাপতি চৌধুরী আতাউর রহমান আজাদ এডভোকেট, বিএনসিসি’র লেঃ মনিরুল ইসলাম, দুর্নীতি দমন কমিশনের (সজেকা) উপ-সহকারী পরিচালক মোঃ তাজুল ইসলাম ভ্ইূয়া, সহকারী পরিচালক মোঃ ইসমাইল হোসেন, উপ-সহকারী পরিচালক মোঃ মাহবুব আলম, উপসহকারী পরিচালক সরদার মঞ্জুর আহমদ, ছাত্র প্রতিনিধি জিএম ইমরান হোসেন সহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন শেষে একটি মিছিল নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

সুনামগঞ্জ : কোচিং-বাণিজ্য একটি দুর্নীতি, আসুন এর বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হই’ এই স্লোগান নিয়ে রোববার সুনামগগঞ্জে মানববন্ধন হয়েছে। দুপুরে জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক) পৌর শহরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে। এতে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার লোকজন অংশ নেন।

সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে নিয়মিত পাঠদান না হওয়ার প্রেক্ষিতে মেয়ের পড়ালো নিয়ে উদ্বিগ্ন মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসের পীরের প্রতিবাদী কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মালেক হুসেন পীর গত বহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের অফিস কক্ষের সামনের বারান্দায় বসে আড়াই ঘণ্টা অবস্থান গ্রহণ কর্মসূচি পালন করেন।

মানববন্ধনের তিনি বলেন, ‘শুধু আমার মেয়ের জন্য নয়, সকল শিক্ষার্থী জন্য এই প্রতিবাদ করেছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকটসহ সকল সমস্যা দূর করতে করে নিয়মিত পাঠদানের ব্যবস্থা করতে হবে। কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে।’

মানববন্ধন চলাকালে আরও বক্তব্য দেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদুক) সমন্বিত সিলেট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মঞ্জুর আলম চৌধুরী, জেলা দুনীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি নুরুর রব চৌধুরী, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ পরিমল কান্তি দে, শিক্ষাবিদ ধূর্জটি কুমার বসু, যোগেশ্বর দাশ, মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরী, আবু সুফিয়ান ও মুজিবুর রহমান পীর, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক চিত্তরঞ্জন তালুকদার ও সঞ্চিতা চৌধুরী, আইনজীবী রুহুল তুহিন, সাবেক পৌর কাউন্সিলর আরতি তালুকদার, নারী উদ্যোক্তা অনিতা দাশগুপ্তা, সমাজকর্মী বিন্দু তালুকদার প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সুনামগঞ্জের দুটি সরকারি কলেজের শিক্ষক ও অবকাঠানো সংকটের কারণে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। একইভাবে সংকট রয়েছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতেও।
সরকারি কলেজসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।

সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ পরিমল কান্তি দে বলেন, আমি নিজে সরকারি কলেজের শিক্ষক ছিলাম। এখানে এখন শিক্ষার্থী আছে ৮হাজার। কিন্তু সেই তুলনায় শিক্ষক ও শ্রেণি কক্ষ নেই। ঢালাওভাবে সকল শিক্ষককে দোষ দেওয়া ঠিক হবে না। আগে প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। শ্রেণি কক্ষের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত