সিলেটটুডে ডেস্ক

২৮ মার্চ, ২০১৮ ১৯:৪৪

বরইকান্দিতে গৌছ বাহিনীর বন্দুকের গুলিতেই দুজন নিহতের অভিযোগ

সংবাদ সম্মেলনে আলফু চেয়ারম্যানের স্ত্রী

বরইকান্দিতে সংঘর্ষে গৌছ বাহিনী বন্দুক ব্যবহার করেছে এবং তাদের গুলির আঘাতেই বাবুল ও মাসুক নিহত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এমন অভিযোগ করেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বরইকান্দি ইউনিয়নের আব্দুল ওয়াদুদ আলফু মিয়ার স্ত্রী সুলতানা আক্তার।

বুধবার (২৮ মার্চ) দুপুরে নগরীর একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে জনাকীর্ণ এক সংবাদ সম্মেলনে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে সুলতানা আক্তার এমন অভিযোগ করেন।

বক্তব্যে তিনি বলেন, ৬ মার্চ একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বরইকান্দির দুই পাড়ার মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে বরইকান্দি গ্রামের ৩নং রোডের মাঝ পাড়ার মৃত শফিক মিয়ার পুত্র বাবুল আহমদ ও সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের রায়েরগাঁও গ্রামের মৃত জমসিদ আলীর পুত্র মাসুক মিয়া নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন উভয় পক্ষের ২৫/৩০ জন।  ঐ দিন সকালে ইউনিয়নের ৩নং রোডের বাসিন্দা গৌছ মিয়া এবং ১০নং রোড কাজী বাড়ীর লোকজনের সাথে মুখামুখি সংঘর্ষ হয়। উভয়পক্ষ দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হন।

সংঘর্ষে ২ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় নিহত বাবুলের ভাই সেবুল আহমদ দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন মামলা নং-৫, তারিখ ৮/৩/১৮ইং। এই মামলায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার তেলিখাল ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদ (আলফু মিয়া)কে প্রধান আসামি করা হয় এবং ১১১ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক আরো ৮০০ জন লোককে অজ্ঞাত রেখে মামলায় আসামি করা হয়।

৫ মার্চ আলফু মিয়া চেয়ারম্যানের ছেলে কাজী মুহিত এর সাথে মাঝপাড়ার মৃত নূর মিয়ার ছেলে গৌছ মিয়ার ভাতিজা হানিফুলের সাথে মোটর সাইকেল এবং বাইসাইকেলের ধাক্কা নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। এরপর কাজী মুহিতের বড় ভাই কাজী সাঈদ আহমদ গৌছ মিয়ার বাড়ীতে বিচার নিয়ে গেলে গৌছ মিয়ার ছেলে-ভাতিজারা মিলে তাদেরকে মারধর করে।

এরপর আবারও রাত ৯ টার দিকে গৌছ এর নেতৃত্বে তার ছেলে-ভাতিজা ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দেশীয় অস্ত্র ও বন্দুক নিয়ে আলফু মিয়ার বাড়িতে এসে হামলা চালায়। এ সময় আলফু মিয়া ইউনিয়ন পরিষদে ছিলেন। সন্ত্রাসীরা ঘরের দরজা-জানালায় ব্যাপক ভাংচুর চালায়।

৫ মার্চ রাতের ঘটনায় বরইকান্দি ইউনিয়নের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রাণপণ চেষ্টা করেন। ৬ মার্চ সকালে এলাকার সালিশী ব্যক্তিরা বৈঠকে বসে মধ্যস্থতা করার কথা ছিল। কিন্তু ঐ দিন ভোর থেকে সন্ত্রাসী গৌছের লোকজন ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ব্যাপক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আবারো জড়ো হয়ে আলফু চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা করার প্রস্তুতি নেয়। এ সময় আবারও উত্তেজনা দেখা দেয়। যেহেতু আগের দিন (৫ মার্চ) তারা বসতবাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর করেছে পুনরায় যাতে এ রকম কোন ক্ষয়ক্ষতি করতে না পারে সে জন্য কাজী বাড়ী ও ১০নং রোডের জনগণ তাদের জানমাল রক্ষায় ১০নং রোডে এসে জড়ো হন। গৌছ সেখান থেকে ১০নং রোডের লোকজনকে উদ্দেশ্য করে গালাগালি ও গুলি ছুঁড়তে নির্দেশ দেয়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ চলার এক পর্যায়ে বাবুল আহমদ ও মাসুক মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

এ ঘটনায় আলফু মিয়াকে নির্দিষ্ট করে হত্যার জন্য দায়ী করা হচ্ছে এটা সত্য নয়। ঐদিন তিনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৩ নং তেলিখাল ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে ছিলেন। যেহেতু আগের দিনও গৌছ ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী বন্দুক নিয়ে হামলা করেছে, সেহেতু ঐদিনও গৌছ বাহিনী বন্দুক ব্যবহার করেছে এবং তাদের গুলির আঘাতেই বাবুল ও মাসুক নিহত হন। ঐদিন কাজী বাড়ী তথা ১০নং রোডের জনগণ কোন বন্দুক ব্যবহার করেনি।

সংঘর্ষে ২ জন নিহত হওয়ার পর ৫-১০ নং রোড এখন পর্যন্ত রয়েছে পুরুষ শূন্য। গৌছ মিয়া ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য নিরীহ লোকজনকে মামলায় আসামি করেছেন। যা নিহত মাসুক মিয়ার ভাই ফারুক আহমদ কয়েকদিন পূর্বে সংবাদ সম্মেলন করে পরিস্কার করে দিয়েছেন। ঘটনার পর থেকে পুরুষ শূন্য এলাকায় সন্ত্রাসী গৌছের লোকজন প্রতি রাতে আনাগোনা করে এবং নিরীহ লোকজন, অসহায় মহিলা ও প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের হেনস্থা করে আসছে। এমনকি এলাকার ছেলেমেয়েরা স্কুল-কলেজে যেতে পারছেনা তাদের ভয়ে।

সুলতানা আক্তার তার স্বামী আলফু মিয়া চেয়ারম্যানের নিরাপত্তা নিয়ে আতংকে ভুগছেন। তিনি গণমাধ্যমের সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত