শিপার আহমেদ, বিয়ানীবাজার

২৮ মার্চ, ২০১৮ ২০:০০

চারখাইয়ে ভুয়া ডাক্তারদের দৌরাত্ম্য, প্রতারিত সাধারণ মানুষ

বিয়ানীবাজারের চারখাইয়ে ভুয়া ডাক্তারদের দৌরাত্ম্যে অসহায় হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এখানে এলোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক, হারবাল ও দন্ত রোগের চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ সাইনবোর্ড লাগিয়ে অসংখ্য চেম্বার গড়ে উঠেছে। এ ধরণের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে সহজ-সরল রোগীদের প্রতারিত করলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এতে নীরব ভূমিকা পালন করছে।

উপজেলা শহর থেকে দূরবর্তী স্থানে বাজারটির অবস্থান হওয়ায় প্রশাসনের অভিযানও এখানে তেমন একটা চোখে পড়ে না। সাইনবোর্ডে বড় ডিগ্রির কথা উল্লেখ করায় সাধারণ মানুষ এসব ভুয়া ডাক্তারদের প্রতিষ্ঠানে ভিড় জমাচ্ছে।

স্থানীয় সূত্র মতে, এসব চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা গ্রহণ করে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়ছে। চারখাই বাজারে কেউ ঔষধ বিষয়ক দু’চারটি কোর্স সম্পন্ন করে আবার কেউ এল.এম.এফ সম্পন্ন করে এক সাথে চেম্বার ও ফার্মেসি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজেরা কোনো ডিগ্রিধারী না হলেও সাইনবোর্ডে বিভিন্ন ভুয়া পদবি বিশেষজ্ঞ লিখে মানুষকে আকৃষ্ট করে নিরীহ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। অনেকেরই প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া ‘স্থানীয়’ প্রভাব খাটিয়ে প্রকাশ্যে এসব ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন ভুয়া ডাক্তাররা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চারখাই বাজারের এসব ভুয়া ডাক্তার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বড় ভিজিটে প্রেসক্রিপশন সরবরাহ করছে। তাদের প্রেসক্রিপশনে লিখা হচ্ছে বিদেশী ঔষধ গাইনোকোসাইট, টার্গেট, সেনেগ্রা, ইডিগ্রা, ইন্ডিয়ান ডানো ইনজেকশন, ম্যথারজিন ট্যাবলেট, কাশির সিরাপ ফ্যানারগেন, কার্বলিন, হপকপ, নিকোলিড, কপরিড, ডেক্স প্রোটেন, ড্রাইডিল, টমিপেন, অফকপ, তুসকা, একপ সিরাপ ও ঘুমের ওষুধ ইজিয়াম, সেডিল, ইপাম, নকটিন, টেনিল, ফ্রিজিয়াম, সেডেক্স, সিডাকসিন। এসব প্রেসক্রিপশন যারা প্রদান করছে তারা ভুয়া এমবিবিএস ডিগ্রিধারী বা এলএমএফ, ডিএমএফ, এমপিবিডি, গাইনি ও মেডিসিনে অভিজ্ঞ দাবি করে।

১৫ মার্চ চারখাই উপ-কমিউনিটি কেন্দ্রের পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের পরিদর্শক দিলারা ফাতেমার ভুল চিকিৎসায় একজন রোগি মারা যান বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন ডা. জোবায়ের আহমেদ। এনিয়ে তিনি সিলেট পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ডা. জোবায়েরের দাবি তার এই স্ট্যাটাসের কারণে দিলারা ফাতেমার লোকজন তার চেম্বারে ভাঙচুর চালিয়েছে। এনিয়ে তিনি বিয়ানীবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন।


এদিকে, এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে গাইনোলজিস্ট দিলারা ফাতেমাকে অন্যত্র বদলি করা হলেও সে বদলি আদেশ সাময়িক স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন দিলারা ফাতেমা। তিনি বলেন, ডা. জোবায়ের ফেসবুকে আমার বিরুদ্ধে আজেবাজে লিখেছে। চারখাই বাজারে কারা মিছিল করছে, তা আমার জানা নেই। আমি ১৮ বছর থেকে এখানে আছি।

ডা. জোবায়ের আহমেদ সিলেটটুডেকে বলেন, রোগ ও নিরাময় সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তুলতে আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেই। অপচিকিতসায় মানুষ যাতে হয়রানির মুখে না পড়ে এনিয়ে সচেতন করার চেষ্টা করি। ঠিক এসব কারণে ভুয়া ডাক্তারদের সিন্ডিকেট এলাকাবাসীকে অসত্য তথ্য দিয়ে উসকে দেয়। চেম্বারে ভাঙচুরের চেষ্টা করে।

বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজি আরিফুর রহমান বলেন, বিষয়টি দেখার জন্য সিলেটের সিভিল সার্জনকে অনুরোধ করা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত