অরণ্য রণি

১৫ মে, ২০১৮ ০০:৫২

গরম আর লোডশেডিংয়ে বেড়েছে আইপিএসের কেনাবেচা

টানা কয়েকদিনের বৃষ্টির পর তীব্র গরম পড়েছে। গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। বিদ্যুতের ভোগান্তি আর গরমের তীব্রতায় বেড়েছে ইনস্ট্যান্ট পাওয়ার সাপ্লাই (আইপিএস)-এর  কেনাবেচা।

বাসাবাড়ি থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান- সবখানেই বাড়ছে আইপিএসের প্রতি নির্ভরতা। দামও সাধ্যের মধ্যে থাকায় মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীর নাগরিকরাও ঝুঁকছেন আইপিএসের প্রতি।

রোববার নগনীর সোবহানীঘাটে আইপিএস বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান লোকনাথ ট্রেডিংয়ে গিয়ে দেখা যায় আইপিএস কিনছেন এক ক্রেতা।

এই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী নিরঞ্জন চন্দ্র চন্দ বলেন, আইপিএস বিক্রি সাধারণত মার্চ মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বেশি হয়। এ সময়টা গরম থাকায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা পেতে অনেকে আইপিএস কিনছেন। আইপিএস এখন ঔষধের মত কাজ করে।

তিনি বলেন, অনেকেই প্রবাসে থাকেন। দেশে হয়তো তাঁর বৃদ্ধ মা-বাবা বা ছেলে-মেয়ে থাকেন। তাদের যাতে কষ্ট না হয়, পড়াশোনায় ব্যাঘাত না ঘটে এ জন্য অনেক প্রবাসীই আইপিএস কেনেন। ২০ হাজার টাকা দিয়ে একটি আইপিএস নিলে নিরবিচ্ছিন্নভাবে লাইট, ফ্যান, টেলিভিশন ও কম্পিউটার পর্যন্ত চালানো যায় এখন।

তিনি আরো বলেন, অনেকে মেয়ের বিয়েতে এখন আইপিএস দিয়ে থাকেন। আর মোমবাতির দাম যে হারে বাড়ছে তার চেয়ে আইপিএস কেনাকেই অনেকে সাশ্রয়ী মনে করেন।

নিরঞ্জন জানান, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আইপিএস ও ব্যাটারি পাওয়া যায়। আমার দোকানে বেশি চলে লাক্সমি আইপিএস। এছাড়াও আছে হ্যামকো, সু-কাম ইত্যাদি। এ সকল আইপিএসের ওয়ারেন্টি ৭৩০ দিনের।

রমজান মাসকে সামনে রেখে আইপিএস বিক্রি কিছুটা বাড়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মাসে মসজিদে তারাবীহর নামাজে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা পেতে অনেক মসজিদই আমাদের কাছ থেকে আইপিএস কিনছেন।

উপশহরের গৃহিণী মাজেদা বেগম বলেন, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা দিয়ে আইপিএস আমাদের অনেক উপকার করছে। একটা সময় আইপিএস তো দূরের কথা বিদ্যুৎ ছাড়াই মানুষজন থাকতেন। আর এখন আইপিএস ছাড়া থাকার কথা ভাবাই যায় না। প্রযুক্তির বদৌলতে এটি আমাদের জীবনের এখন অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে গরমের সময় আইপিএসের সুফল আমরা ভোগ করি বেশি।

ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, সক্ষমতা অনুযায়ী আইপিএসের ব্যাটারির দাম সাধারণত ৭ থেকে ১৬ হাজার টাকা। বিভিন্ন ব্র্যান্ড অনুযায়ী ৪০০ ভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন আইপিএসের দাম ২০থেকে ২২ হাজার টাকা, ৬০০ ভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন আইপিএসের দাম ২৫থেকে ২৬৫০০ টাকা, ৮০০ ভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন আইপিএসের দাম ৩০হাজার ৩৫০০০ টাকা, ১০০০ ভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন আইপিএসে দাম ৩৭থেকে ৪০হাজার টাকা, ১২৫০ ভিএ আইপিএসের দাম ৪৫থেকে ৪৮হাজার টাকা, ১৫০০ ভিএ আইপিএসের দাম ৫০ থেকে ৫৭ হাজার টাকা, ২০০০ ভিএ আইপিএসের দাম ৬০থেকে ৬৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

আইপিএস ভালো রাখার বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে নিরঞ্জন জানান, সাধারণত দুই মাস পরপর ব্যাটারির পানি দেখতে হয়। যদি নিচে নেমে যায় তাহলে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি দিয়ে আবার পূর্ণ করতে হয়। তাছাড়া ব্যাটারির টার্মিনালে কার্বন জমলে তা পরিস্কার করে রাখতে হয়। আর আমরা সার্বক্ষনিকই ইমার্জেন্সি সার্ভিস আমাদের ক্রেতাদের প্রদান করি।

ইউনিয়ন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জাকির হোসেন বলেন, মার্চ-জুন মাসই আইপিএস ব্যবসার জন্য ভালো। আমার দোকানে রহিমাফরোজের আইপিএস আমরা বিক্রি করি যা বাঙ্গালদেশের সর্বপ্রথম আইপিএস কোম্পানি। ৬০০ ভিএ থেকে শুরু করে ১০ কেভিএ সক্ষমতার আইপিএস আমরা বিক্রি করি।

তিনি আরো জানান, এখন সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সোলার ব্যাকড আইপিএসও আমরা বিক্রি করছি। এই আইপিএসটি সৌর বিদ্যুতের সাথে সম্পর্কিত। এটি ঘরের বিদ্যুৎ বিল কমাতে অনেকাংশে সহায়তা করে। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বেশি সক্ষমতার আইপিএস বেড়িয়েছে যা দ্বারা এয়ার কন্ডিশন ও লিফট পর্যন্ত চালানো যায় এবং তা নিরবিচ্ছিন্নভাবেই। ৬০০০ ভিএ এর আইপিএস দেড় টনের এসি ও ১০০০০ ভিএ এর আইপিএস দিয়ে ৩ টনের এসি চালানো যায়।

লিডিং ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সামছুন্নাহার হেভা জানান, বাসায় আইপিএস থাকায় এখন আমাদের পড়ালেখার কোন ব্যাঘাত ঘটে না। নিরবিচ্ছিন্নভাবে আমরা লাইট, ফ্যান এমনকি কম্পিউটারও চালাতে পারি। আমাদের জরুরী অনেক কাজ যেমন, ভার্সিটির প্রেজেন্টেশন, এসাইনমেন্ট, মেইল ইত্যাদি আমরা বিদ্যুৎ না থাকলেও এখন করতে পারি। আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের সেই সুবিধা করে দিয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত