কমলগঞ্জ প্রতিনিধি

১৫ নভেম্বর, ২০১৮ ১৭:৪৩

শমশেরনগর রেলস্টেশনে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য, অসহায় যাত্রীরা

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত রেলওয়ে স্টেশন শমশেরনগর। সকল প্রকার মেইল ট্রেনসহ বেশ কয়েকটি আন্ত:নগর ট্রেনের স্টপেজ থাকায় এখানে যাত্রী ওঠানামা হয় বেশী। যাত্রী ওঠানামার ব্যস্ততার সুযোগে শমশেরনগর রেলওয়ে স্টেশনে ছিনতাইকারী ও বখাটেদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় ট্রেনযাত্রীরা অসহায়ত্ব বোধ করছেন।

বিভিন্নভাবে ট্রেন যাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে শমশেরনগর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে যাত্রী, রেল কর্মচারী ও স্টেশন প্লাটফরমের দোকানীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় কয়েকজন বখাটে যুবক সন্ধ্যার পর থেকে ভোর রাত পর্যন্ত উভয়দিকে চলাচলকারী মেইল ট্রেন ও আন্ত:নগর ট্রেনের যাত্রীদের মুঠোফোন, স্বর্ণালঙ্কার, বেগ ইত্যাদি ছিনতাই করে নেয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ফয়জু মিয়া জানান, ২৫ অক্টোবর ভোর রাত ৪টার সময় চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী আন্ত:নগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন স্টেশন ত্যাগ করার মুহূর্তে বগির জানালা দিয়ে স্থানীয় এক বখাটে এক নারী যাত্রীর গলার স্বর্ণের চেইন ছিনতাই করে নিয়ে যায়। বখাটে যুবক কিছুটা প্রভাবশালী বলে স্বর্ণের চেইন ছিনতাই করে দাপটের সাথে হেটে স্টেশন ত্যাগ করে। ভয়ে কেউই প্রতিবাদ করার বা তার সাথে কথা বলারও সাহস পায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক রেল কর্মচারী জানান, সুমন (১), জুয়েল, রাজু ও সুমন (২)-এর নেতৃত্বে একদল বখাটে যুবক সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১টা পর্যন্ত চলাচলকারী মেইল ও আন্ত:নগর ট্রেনে সুযোগ বুঝে জানালা দিয়ে যাত্রীদের বিশেষ করে জানালার পাশের আসনের নারী যাত্রীদের গলার স্বর্ণের চেইন, মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয়। বখাটেরা প্লাটফরমের শেষ প্রান্তের বগি লক্ষ্য করে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকে। ট্রেনটি স্টেশন ত্যাগ করার সময় ধীর গতিতে চলতে শুরু করার সময় তারা ছিনতাই করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে থাকে। আবার ভোর রাত ৩টায় ঢাকা থেকে সিলেট অভিমুখী উপবন এক্সপ্রেস ও পরে রাত ৪টায় চট্টগ্রাম থেকে সিলেট অভিমুখী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে এ ধরনের ঘটনা ঘটে।

দূরবর্তী স্থানের নারী যাত্রীরা রাতে ট্রেন থেকে নেমে স্টেশনের বিশ্রামাগারে অপেক্ষা করতে থাকলেও এসব বখাটেদের দ্বারা নানাভাবে নাজেহাল হয়ে থাকেন। আবার দিনে ও রাতে বখাটেরা অবাধে স্টেশন প্লাটফরমের উপর দিয়ে দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে ট্রেনযাত্রীদের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এসব ঘটনা স্থানীয় স্টেশন মাস্টারসহ রেল কর্মচারীরা জানলেও বখাটেদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন না।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেল কর্মচারী বলেন, উল্লেখিত বখাটেদের বাবারা নানা অপকর্মের সাথে যুক্ত। বখাটেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে শেষে স্টেশন কর্তৃপক্ষকে নাজেহাল হওয়ার ভয়ে তারা কিছু বলেন না।

শমশেরনগর স্টেশন মাস্টার কবির আহমদ বলেন, রাতের ও ভোর রাতের ট্রেন এ স্টেশনে দাঁড়িয়ে আবার ত্যাগ করার সময় এ ধরনের ঘটনা ঘটে বলে বিচ্ছিন্নভাবে তিনি শুনেছেন। তবে কেউ সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ দেয়নি। তারপরও তিনি তাদের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিতও করেছেন।

তিনি আরও বলেন, স্টেশন প্লাটফরমের দুই প্রান্তের শেষ দিকে তেমন কোন বাতির ব্যবস্থা নেই। সেখানকার ট্রেন বগিতেই এসব ঘটনা ঘটে।

রেলওয়ে পুলিশ শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আলিম উদ্দীন বলেন, তিনি সদ্য এখানে যোগদান করেছেন। শমশেরনগর স্টেশনে এ ধরনের ঘটনা ঘটে তা তিনি জানেন না বা কোন যাত্রী অভিযোগও করেনি। তারপরও খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও তিনি জানান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত