শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি

২০ নভেম্বর, ২০১৮ ১৮:৩৩

শ্রীমঙ্গলের আনন্দ স্কুলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতারণা

ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে সরকারি উদ্যোগে প্রাথমিক পর্যায়ে স্থাপিত আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে চলছে অভিনব প্রতারণা। ভুয়া পরীক্ষার্থী, প্রক্সি পরীক্ষার্থী ও বিভিন্ন মাধ্যমিক স্কুলে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিচ্ছে আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থীর হয়ে। সরেজমিনে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ভয়াবহ অনিয়মের এই চিত্র।

মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ বিষয়ের পরীক্ষা শেষে হল রুম থেকে বের হওয়ার সময় শ্রীমঙ্গল শহরতলীর সুনগইড় আনন্দ স্কুল, মুসলিমবাগ শাপলা আনন্দ স্কুল ও মুসলিমবাগ আনন্দ স্কুলের প্রায় ৩০ শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে এই ৯ জন ভুয়া পরীক্ষার্থীকে শনাক্ত করেন পরীক্ষা কেন্দ্র সচিব বিমান বর্ধন। এ সময় কেন্দ্র হল সুপার ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

এরআগে ১৮ নভেম্বর সকালে উপজেলার সাঁতগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ১০ জন ভুয়া পরীক্ষার্থীকে সনাক্ত করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, যারা সবাই সদ্য সমাপ্ত জেএসসি পরীক্ষার্থী ছিলো। পরে ইউএনও তাদেরকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেন।

এর আগে ৮ নভেম্বর শ্রীমঙ্গলের সবুজবাগ এলাকায় একটি আনন্দ স্কুলে গিয়ে ৪ জন অন্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের ক্লাস করা অবস্থায় পাওয়া যায়।

মঙ্গলবার সনাক্ত হওয়া শিক্ষার্থীরা হলো আকাশ মিয়া (রোল নং: ৪৫৭১), মনির হোসেন (৪৬২৪), ইমরান হোসেন, (৪৫৭৩) শাহেদ মিয়া (৪৫৭০), নুর আলম (৪৫৮৪), সাহেদ মিয়া (৪৫৮৬), রওসন আরা (ম ৪৫৮২), ইভা আক্তার (ম ৪৬৩৩), ফাহমিদা ইসলাম (ম ৪৫৭৯)।

তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষার্থীরা অন্য স্কুলে পড়লেও তাদেরকে ছয় মাস অন্তর অন্তর ৭০০ টাকা করে দেয়ার লোভ দেখিয়ে স্কুলের ম্যাডামরা তাদের স্কুলে ভর্তি করিয়েছে বলেও জানায় তারা। আনন্দ স্কুল ছাড়া বিভিন্ন স্কুলের বিভিন্ন শ্রেণীতে তারা অধ্যয়নরত। অনেকে আবার কোন স্কুলেরই শিক্ষার্থীও নয়। তাদের আনন্দ স্কুলের ভুয়া শিক্ষার্থী বানিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে আনা হয়েছে।

কেন্দ্র সচিব বিমান বর্ধন বলেন, ভুয়া শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করে শিক্ষা অফিসে নাম পাঠানো হয়েছে। সেখানে তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষা কর্মকর্তারা যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন।

অভিযুক্ত সুনগইড় আনন্দ স্কুলের প্রধান শিক্ষক রীনা মজুমদার বলেন ‘আমার প্রতিষ্ঠানের একজন ছাত্র মনির হোসেন। তার মূল নাম জাহাঙ্গীর। শুধু সার্টিফিকেট দেয়ার জন্যই তাকে সুযোগ দিয়েছি। তাছাড়া শিক্ষার্থী না পাওয়ার কারণে এ রকম কিছু কিছু শিক্ষার্থী নিতে হয়।’

শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম তালুকদার বলেন, এ বিষয়টি আমি শুনেছি ও খুব দ্রুতই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আনন্দ স্কুলের যে যে জায়গা থেকে অভিযোগ আসছে সবগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট যে স্কুলগুলো এই কাজে জড়িত সেই স্কুলের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযোগ পাওয়া শিক্ষকদের বাদ দিতে আমরা প্রকল্প কর্মকর্তার কাছে বলবো এবং এই বিষয়ে আনন্দ স্কুলের ইন্সট্রাক্টরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠাবো।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝরে পড়া এবং অনগ্রসর এলাকার শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত শিশুদের স্কুলে আনতে বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতায় সরকার পরিচালিত ‘রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন’ প্রকল্পের অধীনে দেশের বিভিন্ন স্থানে আনন্দ স্কুল পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে পরিচালিত এসব স্কুলে ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের উপানুষ্ঠানিক পদ্ধতিতে শিক্ষা দেওয়া হয়। তারা আনন্দ স্কুল থেকে নিবন্ধিত হয়ে পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে এবং উত্তীর্ণ হলে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, এসব স্কুলে পড়ুয়া বেশিরভাগ বয়সই ১৪ এর উপরে এবং তারা অন্য স্কুলের নিয়মিত শিক্ষার্থী।

উল্লেখ্য, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ৮৫টি আনন্দ স্কুল রয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত