নিজস্ব প্রতিবেদক

১২ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:১৪

প্রাণ পেলো নতুন কারাগার, কী হবে পুরনো কারাগারের?

২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে সিলেট-১ আসনের সংসদ প্রার্থী আবুল মাল আবদুল মুহিতের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিলো- নতুন কারাগার তৈরি করে পুরনো কারাগারের জায়গায় উন্মুক্ত উদ্যান গড়ে তোলা। সে নির্বাচনে বিজয়ী হলে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন মুহিত। এরপর ২০১১ সালে সিলেট নগরীর অদূরে বাদাঘাটে নতুন কারাগার নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

প্রায় ৮ বছর পর পূর্ণতা পেলো নতুন এই কারাগার। শুক্রবার পুরনো কারাগার থেকে নতুন কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় সব বন্দিদের। উদ্বোধনের তিন মাস পর স্থানান্তরিত হলো বন্দি। সুনসান নীরবতা কাটিয়ে এখন বন্দি আর কারা কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়ে ভরপুর শহরতলীর বাদাঘাটে নবনির্মিত নতুন কারাগার। ২২৯ বছর পর পুরনো কারাগার থেকে নতুন এ কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে সকল বন্দি।

শুক্রবার (১১ জানুয়ারি) সকাল ৬টা ৪৫ মিনিট থেকে শুরু করে এ স্থানান্তর কার্যক্রম চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।

কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে বাদাঘাটে অবস্থিত নবনির্মিত এ কারাগারে ৯টি প্রিজন ভ্যানে করে বিশেষ নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে ৫৮ বারে স্থানান্তর করা হয় মোট ২হাজার ৩ শ' কারাবন্দি। এদের মধ্যে জেএমবি সদস্য, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত, নারী বন্দিসহ সাধারণ বন্দিরাও ছিলেন। প্রতিটি প্রিজন ভ্যানের সামনে পিছনে বিশেষ নিরাপত্তা সহকারে নেয়া হয় সকল বন্দি। বিশেষ করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও জেএমবি সদস্যদের স্থানান্তরের সময় ছিলো বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ছিলো র‍্যাব, পুলিশের কড়া নিরাপত্তা।

সকালে স্থানান্তর কার্যক্রম শুরু হলে প্রথমে নারী হাজতি পরে পুরুষ কয়েদি এভাবে একে একে সকল কয়েদি ও হাজতিদের স্থানান্তর করা হয়। এসময় প্রিজন ভ্যানের যাতায়াত সড়কের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে ছিলো বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

তিন মাস আগে সিলেট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দুই শত ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ কারাগারের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আধুনিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে নির্মিত এ কারাগারে রয়েছে দুই হাজার বন্দি ধারণ ক্ষমতা।

নতুন কারাগারে বন্দি স্থানান্তরের পর প্রশ্ন ওঠেছে কি হবে পুরনো কারাগারের? অর্থমন্ত্রী প্রতিশ্রুত উন্মুক্ত উদ্যান কি গড়ে তোলা হবে পুরনো কারাগারের জায়গায়?

তবে সিলেটের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিল বলেছেন, এখনই সেরকম কিছু করার সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, নতুন কারাগারে বন্দি ধারণ ক্ষমতা দুই হাজার। শুক্রবার সেখানে ২৩শ' বন্দি স্থানান্তর করা হয়েছে। ধারণক্ষমতার এই অতিরিক্ত বন্দিদের পুরনো কারাগারে নিয়ে আসা হবে। আপাতত কারা কর্তৃপক্ষের অধীনেই থাকবে পুরনো কারাগার।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে পুরনো কারাগার সংস্কারসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি দিয়ে এ কারাগারেও বন্দি রাখার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিল।

তিনি বলেন, পুরনো এ কারাগারের প্রকল্প ইতোমধ্যে প্রক্রিয়াধীন। কিছুদিনের মধ্যেই এটিরও সংস্কার কাজ শুরু হবে। এর পর সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ হিসেবে এখানেও বন্দি রাখা হবে।

ইতোমধ্যে সকল বন্দি স্থানান্তর করা শেষ হয়েছে জানিয়ে সিনিয়র এ জেল সুপার বলেন, ১১ এবং ১২ তারিখ এ দুই দিন বন্দিদের স্বজনরা দেখা করতে পারবেন না। তবে কাল থেকেই সকল কর্মকর্তা কর্মচারীরা নতুন কারাগারে দায়িত্ব পালন করবেন আর পুরনো কারাগারের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকবল রেখে বাকি সকলকে নতুন কারাগারে নিয়োজিত করা হবে।

এদিকে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বন্দি স্থানান্তর কার্যক্রমে ডিআইজি প্রিজন, মহানগর পুলিশ কমিশনার, জেলা পুলিশ সুপার, সহকারী সিভিল সার্জন, ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট, মেডিকেল ইউনিট, র‍্যাব, এনএসাই, ডিজিএফআইসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ১৭৮৯ সালে আসামের কালেক্টর জন উইলিশ সিলেট শহরের কেন্দ্রস্থল ধোপাদিঘীর পাড়ে ২৪ দশমিক ৭৬ একর জমির ওপর কারাগার প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৭ সালের ৩ মার্চ এটি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রূপান্তরিত হয়। তখন কারাগারের ধারণ ক্ষমতা দাঁড়ায় ১ হাজার ২১০ জনে। বর্তমানে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। জরাজীর্ণ অবস্থার পাশাপাশি কারাগারে রাখা হয়েছে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দিকে। বন্দিদের মানবেতর জীবনযাপনের বিষয়টি বিবেচনায় এনে সিলেট নগর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার বাদাঘাটে ৩০ একর জমির উপর নতুন কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১১ সালে দু’শ ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এ কারাগার নির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। তবে ওই বছর আগস্টে ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করা হলেও ২০১২ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৫ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মেয়াদ ২০১৬ সালের জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কারাগারের সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট এর কাজ, পুকুর খনন ও গ্যাস সংযোগ ছাড়া বাকী সব কাজ ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়ে যায়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত