হৃদয় দাশ শুভ, শ্রীমঙ্গল

০৬ ফেব্রুয়ারি , ২০১৯ ২৩:৫৭

পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় শ্রীহীন শ্রীমঙ্গল পৌরসভা

দেশের অন্যতম পর্যটনবান্ধন এলাকা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। চা-বাগান আর পাহাড়-টিলা ঘেরা এই সবুজ এই জনপদে বছরজুড়েই ভিড় থাকে পর্যটকদের। তবে পৌর কর্তপক্ষের উদাসীনতা আর অবহেলায় ক্রমেই শ্রী হীন হয়ে পড়ছে শ্রীমঙ্গল। বিশেষত শ্রীমঙ্গল পৌর এলাকার অবস্থা একেবারেই নাজুক। এতে পৌরবাসীকে ভোগান্তি পোহাতে হয় নিয়মিতই।

অপ্রতুল ফুটপাত, ফুটপাথ যেটুকু আছে সেগুলোও বেদখল হয়ে যাওয়া, শহরজুড়ে অবৈধ স্থাপনা, নজুক ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাজুক, অবৈধ পার্কিং- শ্রীমঙ্গল পৌর এলাকার এমন নানা সমস্যা দিনদিন চরম আকার ধারণ করেছে।

নাগরিক সমস্যা দূরীকরণে পৌরকর্তৃপক্ষের এই উদাসীনতায় ক্ষুব্দ স্থানীয় সাংসদও। নাগরিক সেবা নিশ্চিতে পৌর কর্তৃপক্ষকে আরও আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

অপরদিকে, শ্রীমঙ্গল শহরকে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখতে পৌরবাসীকে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান পৌর পিতার।

শ্রীমঙ্গল শহরের মাঝ দিয়ে চলে গেছে ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক। প্রধান এই সড়কটির ফুটপাতই বেদখল হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। ফলে সড়কের উপর দিয়েই হাঁটাচলা করতে হয় পথচারীদের। এতে দুর্ঘটনাও ঘটছে অনেকসময়।

এছাড়া পৌর এলাকাজুড়ে দীর্ঘসময় লেগে থাকে যানজট, যত্রতত্র গড়ে ওঠেছে অবৈধ যানবাহন স্ট্যান্ড, সড়কের উপরই করা হয় পার্কিং, ভাসমান দোকান ও হকারদের দৌরাত্ম তো আছেই। এমনকি সড়কের উপরই পড়ে থাকে ময়লা আবর্জনার স্তুপ, ড্রেনগুলোও পরিস্কার করা হয় না নিয়মিত। ফলে ময়লার স্তুপ আর ড্রেন থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায় সবসময়। সবমিলিয়ে একেবারেই বিপর্যস্ত নাগরিক জীবন।

এস কে দাশ নামে পৌর এলাকার এক বাসিন্দা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, নাগরিক সমস্যাকে ঝুলিয়ে রাখার কারণে শ্রীমঙ্গলের শ্রী হারিয়েছে সেই কবে। শ্রীমঙ্গল শহরের ব্যস্ততম সড়কের ধারে নেই ফুটপাত, যাও আছে তাও বেদখলে। যানজট, অবৈধ পাকিং, ডাকনাবিহীণ ড্রেণগুলো, অপ্রতুল ডাস্টবিন- এগুলোতে এই শহরবাসীর প্রাত্যহিক সমস্যা। এছাড়া পাবলিক টয়লেট এমন জায়গায় করা হয়েছে যেদিকে কালেভদ্রে মানুষ যাতায়াত করে। পাবলিক টয়লেট ব্যবহারে নেই সচেতনতা বৃদ্ধিরও কোনো উদ্যোগ নেই। শহরময় অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধেও নিরব পৌর কর্তৃপক্ষ। এমনটি চলতে থাকলে এই পর্যটন শহর থেকে পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নেবে।

জহিরুল ইসলাম নামে এক তরুণ বলেন, ‘আমাদের সম্মিলিতভাবে অভ্যাস বদলানোর বিকল্প নেই। পৌর কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই নাগরিক সমস্যা সমাধানে আন্তরিক হতে হবে। ১ম শ্রেণীভুক্ত এই পৌরসভার বর্তমান অবস্থা ও নাগরিক সেবা অত্যন্ত নাজুক। রাস্তার পাশে মানুষের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে মৌসুমী হকার ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভাড়ায় দোকানের সামনে অবৈধ ছোট ছোট করার কারনেই মানুষ বিপদজ্জনকভাবে মুল সড়কে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে যানজট এখন এ শহরের নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়।

স্থানীয় সাংস্কৃতিককর্মী নাগরদোলা থিয়েটারের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিতম পাল বলেন, নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা হতে হবে পৌর কর্তৃপক্ষের মূল লক্ষ্য, অন্যকোন হিসাব নিকাশ করতে যেয়ে জনগণ যাতে বঞ্চিত না হোন সেদিকে সকলকেই লক্ষ্য রাখতে হবে।

সম্প্রতি শ্রীমঙ্গলে নাগরিক ও সুধীজনদের নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় পৌরবাসীর এ ভোগান্তি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ।

এ ব্যাপারে তিনি সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পর্যটন শহর শ্রীমঙ্গল পৌরসভা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। পৌরসভার কাউন্সিলরা মাকের্ট ও বরাদ্দের নামে দুর্নীতি করে লাখ লাখ টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। যারা ৭ বছর ধরে ক্ষমতায় থেকে শ্রীমঙ্গল শহরের এই অবস্থা করেছে তাদেরকে এ ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। নাগরিক সমস্যার সমাধান না করতে পারলে প্রস্থান করাই শ্রেয়।

শ্রীমঙ্গল পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ মো. আব্দুল করিম বলেন, ‘মাননীয় সংসদ সদস্য পৌরসভার সকল সমস্যা দ্রুতগতিতে সমাধানের কথা বলেছেন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার জন্য বলেছেন। মেয়র সাহেব শ্রীমঙ্গলের বাইরে রয়েছেন, তিনি আসলে নাগরিক সমস্যার ব্যাপারে আলোচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভাসমান ব্যবসায়ীদের দৌরাত্বের ব্যাপারে ও দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘অন্য কারো থাকলে থাকতে পারে, আমার জানা নেই, আমি জানামতে কোন দুর্নীতি করিনি আর এদেরকে একবার উঠিয়ে দিলে আবার চলে আসে। পৌরকর্মীদের কাজের মনিটরিং সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, আমরা সেগুলো কাটিয়ে উঠছি।

পৌরসভার এ দৈন্যদশা ও উত্তরণের ব্যাপারে পৌর মেয়র মহসীন মিয়া সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের সীমাবদ্ধতা ও বরাদ্দ ঘাটতি রয়েছে। যে টাকা কর বাবদ আয় হয় সে টাকা দিয়ে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ইত্যাদি প্রদানের পর পৌরসভার অন্যান্য সকল দিক সংকুলান করা কষ্টসাধ্য।

যানজট ও হকারদের ব্যাপারে তিনি বলেন, এগুলো দেখার জন্য পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ রয়েছে।

ড্রেনের নাজুক অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, নাগরিককে আরো সচেতন হতে হবে যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলার ব্যাপারে এবং পৌরকর্মীদের কাজের ব্যাপারেও আরো বেশী নজর রাখা হবে। এছাড়া, বিভিন্ন পক্ষ থেকে সহযোগীতার অভাব রয়েছে বলেও তিনি জানান এবং সবার আন্তরিক সহযোগীতা কামনা করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত