নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ এপ্রিল, ২০১৯ ১৭:৩৭

ঐতিহ্য ধ্বংস হলে তা আর ফেরত পাওয়া যায় না

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ‘আবু সিনা ছাত্রাবাস ভবন’ যথাযথভাবে সংরক্ষণের দাবিতে রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেছেন, ঐতিহ্য ধ্বংস হলে তা আর ফেরত পাওয়া যায় না। তাই সিলেটের এই ঐতিহ্য রক্ষায় আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও সিলেটের ঐতিহ্য রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ নাগরিক সমাজ-এর উদ্যোগে বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র সাগর-রুনী মিলনায়তনে বক্তারা এসব মন্তব্য করেন।

বাপা’র সহ-সভাপতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, রাশেদা কে চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং বাপা’র, যুগ্ম সম্পাদক, শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে (আবু সিনা ছাত্রাবাস) ভবনটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের করা গবেষণাপত্রের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কৌশিক সাহা। এতে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউট (আইএবি)’র সাবেক সভাপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সদ্য সাবেক সভাপতি সি.এম তোফায়েল সামী, সিলেটের ঐতিহ্য রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ নাগরিক সমাজের মুখপাত্র ও প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষক ডা. মোস্তফা শাহ জামান চৌধুরী বাহার, বাপা সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আবু সিনা ছাত্রাবাস ধ্বংস করে হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগকে নিন্দা জানান। এবং অবিলম্বে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মাধ্যমে এই প্রাচীন ভবনটি সংরক্ষণের দাবি জানান।

সভাপতির বক্তব্যে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষার দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে কথা বলার জন্য আমরা এখানে এসেছি। আমি মনে করি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ভবনটি ধ্বংস না করেও সরকার অন্য স্থানে হাসপাতাল করতে পারে।

তিনি সিলেটের এই অমূল্য সম্পদসহ বিভিন্ন ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য সাংবাদিকদের বেশী বেশী প্রচারের জন্য অনুরোধ জানান। তিনি আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন এ প্রকল্প বাতিল করলে টাকা চলে যাবে। এটা একটা নিছক অজুহাত। তাদের মনে রাখা দরকার, টাকা ফেরত গেলে টাকা পাওয়া যাবে কিন্তু ঐতিহ্য ধ্বংস হলে তা আর ফেরত পাওয়া যাবে না। তাই টাকাকে প্রাধান্য না দিয়ে দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানান। সরকার ইচ্ছা করলেই এই ঐতিহাসিক স্থাপনাকে রক্ষা করতে পারেন। এই মহামূল্য সম্পদকে একটা স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থে নাম মাত্র মূল্যে নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। যা খুবই দুঃখজনক।

আবু সাঈদ এম আহমেদ বলেন, একটা পরিবার যেমন অন্যের চেপে দেওয়া নকশায় নিজের ভরনের পরিবর্তন মেনে নিতে পারে না, ঠিক তেমনি সিলেটবাসী তাদের এই ঐতিহ্যকে ধ্বংস হতে দিতে পারেনা।

তিনি বলেন, এটা ভেঙে নতুন ভবন তৈরি না করে বরং এটাকে সংরক্ষণ করে এটাকে হাসপাতালের ছাত্রাবাস বা অন্যকোন কাজে ব্যবহার করলে এটা যেমন সংরক্ষিত থাকবে অন্যদিকে খরচ বেচে যাবে। আমি একজন স্থপতি হিসেবে যদি এ ঐতিহ্য ধ্বংস হয় তা হলে আমার পক্ষে যেমন মেনে নেয়া অসম্ভব তেমনি সিলেটবাসীর পক্ষে মানা সম্ভব নয়।

ডা. মোস্তফা শাহ জামান চৌধুরী বাহার বলেন, আমরা সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের পরামর্শে একটা জায়গা দেখেছি যেটা সেখানে অনেক ভাল জায়গা। সেখানে হাসপাতাল করলে আমাদের সিলেটের ঐতিহ্যটি রক্ষা পাবে। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ এটাকে ধ্বংস না কারে এটাকে সংরক্ষণ করুন।

সি.এম তোফায়েল সামী বলেন, কোন দেশের কালচারকে ধ্বংস করা যাবে না। কোন দেশকে জানতে হলে সে দেশের যাদুঘর যেতে হয়। আমরা হাসপাতালও চাই কিন্তু ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে নয়। বরং এটাকে সংরক্ষণ করুন।

তিনি সরকারের কাছে এটাকে সংরক্ষণ করে সেখানে হাসপাতাল যাদুঘরের রূপান্তরের অনুরোধ জানান।

শরীফ জামিল, যথাযথভাবে এই অমূল্য সম্পদ রক্ষা করার দাবীসহ তিনি আবু সিনা ছাত্রাবাসকে প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের তালিকা ভুক্তির দাবী জানান।

অধ্যাপক কৌশিক সাহা বলেন, ঐতিহ্য সংরক্ষণ উন্নয়নের একটা বাধা হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে। কিন্তু উন্নয়নের পথে ঐতিহ্য বড় বাধা নয়। তাদের চিন্তা চেতনায় সমস্যা।

তিনি আরও বলেন, এই ভবনটি ১৮৫০ থেকে ১৮৬০ সালের মধ্যে তৈরি হয়েছিল। এই ভবনটি অনেক ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী, এখানে শহীদ ডাঃ শামসুদ্দীন আহমেদসহ আরও অনেককে ১৯৭১ সালে এই ভবনে হত্যা করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত