হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

২৬ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:১৯

এক বছর ধরে বন্ধ সড়ক সংস্কারের দেড়শ’ কোটি টাকার কাজ

২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর ২১ কোটি ৮৫ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয় লাখাই-নাসিরনগর সড়কে ২১৬.৬৮ মিটার লম্বা বলভদ্র সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সেতু নির্মাণের মাধ্যমে ঢাকা থেকে হবিগঞ্জের দূরত্ব কমে ৪৫ কিলোমিটার। কিন্তু নাসিরনগর থেকে হবিগঞ্জ সড়কটির বেহাল অবস্থা ও অপ্রশস্ত হওয়ার কারণে এই সড়ক দিয়ে বড় গাড়ি চলাচল করতে পারে না। পরবর্তীতে ওই রাস্তাটি আঞ্চলিক মহাসড়ক হিসেবে নির্মাণের জন্য ২০১৭ সালের শেষের দিকে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

এরপর ১শ' ১১ টাকা ব্যয়ে শুরু হয় হবিগঞ্জ-লাখাই আঞ্চলিক মহসড়কে উন্নীতকরণের কাজ। কিন্তু প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে এই প্রকল্পের কাজ।

সম্পূর্ণ রাস্তাটি খুড়াখুড়ি করে রাখায় চলাচলে দূর্ভোগ বেড়েছে পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ। ভাঙা রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দূর্ঘটনা। এতে ভোগান্তিতে রয়েছে দুই উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, অর্থ সংকটে কাজ বন্ধ রয়েছে, শীঘ্রই শুরু হবে নির্মাণ কাজ।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জ থেকে লাখাই হয়ে নাছিরনগর পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কের ২৫ কিলোমিটার রাস্তাটি সংস্কার ও প্রশস্তকরণের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের শেষের দিকে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। ওই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা। রাস্তাটির নামকরণ করা হয় সাবেক এমপি মোস্তফা আলীর নামে। একই বছর ১১১ কোটি ২৭ লাখ টাকায় ২৫ কিলোমিটার রাস্তা প্রশস্থকরণ, সংস্কার ও ৪টি ব্রিজ নির্মাণ চেয়ে দরপত্র আহবান করা হয়। মোজাহার এন্টারপ্রাইজ, তাহের ব্রাদার্স লিঃ, মাহফুজ খান (জেবি) নামে ৩টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে কাজটি পায়।

কাজ পাওয়ার পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাস্তা ভাঙার কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু কিছুদিন খুড়াখুড়ি আর কয়েকটি ব্রিজ ভেঙে হঠাৎ করেই কাজ বন্ধ করে দেয় তারা। ফলে দূর্ভোগে পড়ে দুই উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। অথচ ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে রাস্তা ও ব্রিজ চারটির কাজ সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ২০১৯ সালের অর্ধেক অতিক্রম হলেও এখন পর্যন্ত কাজের ১০ ভাগও সম্পূর্ণ হয়নি।

দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটির সংস্কার কাজ পূণরায় শুরু করার আবেদন জানিয়ে আসছেন উপজেলাবাসী। ইতোমধ্যে রাস্তাটি সংস্কারের দাবিতে মানবন্ধন কর্মসুচি পালন করছেন লাখাই উপজেলাবাসী। এ সময় রাস্তাটি দ্রুত নির্মাণ না করলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেয়া হয়।

ব্যবসায়িদের দাবি এ রাস্তাটি নির্মাণ হলে দুই উপজেলাবাসীর দুঃখ লাগবের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যেও ঘটবে প্রসার। জ্বালানি খরচ কম হওয়ায় কমবে বাণিজ্যিক পরিবহণ ঘাটতি।

এ ব্যাপারে লাখাই উপজেলার মুড়াকরি এলাকার আব্দুল ওয়াদুত মিয়া বলেন- ‘এক বছরের উপরে চলছে রাস্তাটি ভেঙে রাখা হয়েছে। অথচ এটি সংস্কারের কোন উদ্যাগ গ্রহণ করা হচ্ছে না। দেড়শ’ কোটি টাকার কাজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গাফিয়লতি করছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।’

তিনি বলেন- ‘রাস্তাটি দিয়ে চলাচল করা যায় না। একদিন এই রাস্তা দিয়ে গেলে ৭দিন বিচানায় পড়ে থাকতে হয়।’

বামৈ এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা মোতালিব মিয়া বলেন- ‘আমি বয়স্ক মানুষ, মাসে তিনদিন হবিগঞ্জ শহরে গিয়ে ডাক্তার দেখাতে হয়। কিন্তু রাস্তাটির কারণে মাসে একদিনও যেতে পারি না। একদিন হবিগঞ্জ গেলে ১৫ দিন বিচানায় পড়ে থাকতে হয়। গর্ববতী মায়েরা হাসপাতাল যেতে পারে না। রাস্তায়ই সন্তান প্রসব হয় যায়।’

ব্যবসায়ি আদনান চৌধুরী বলেন- ‘বলভদ্র সেতু নির্মাণের পর যখন রাস্তাটি সংস্কার কাজ শুরু হয় তখন মনের মধ্যে অন্যরকম একটা আনন্দ বিরাজ করছিলো। কারণ রাস্তাটি সংস্কার হলে ঢাকা থেকে হবিগঞ্জের দূরুত্ব কমবে ৪৫ কিলোমিটার। এতে করে পরিবহন জ্বালানি বাঁচবে। সেই সাথে বাঁচবে সময় ও পণ্য পরিবহণ খরচ।’

বাস চালক মঈনুল মিয়া বলেন- ‘না পেরে চালাতে হয়। নাহলে এ রাস্তা দিয় কে গাড়ি চালাতো। প্রতিদিনই গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ভেঙে যাচ্ছে। এতে করে গাড়ির বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টিসহ অতিরিক্ত খরচ গুণতে হচ্ছে আমাদের।’

ইউপি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আব্দুল হাই কামাল বলেন- ‘হবিগঞ্জ-নাসিরনগর সড়কটি এখন তিন উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। আমরা অনেকবার রাস্তাটি সংস্কার করার জন্য কাজ শুরু করতে সড়ক বিভাগের সাথে কথা বলেছি। কিন্তু সড়ক বিভাগ শুধু বলছে কাজ শুরু হবে। এভাবে প্রায় বছর পাড় হয়ে গেছে।’

লাখাই উপজেলার বুল্লা বাজার ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি বাদশা মিয়া বলেন- ‘এই সড়কটি দিয়ে চলাচল করা যায় না। ব্যবসায়িরা তাদের মালামাল নিয়ে আসতে পারে না। রাস্তায় গাড়ি উল্টে মালামাল নষ্ট হয়ে যায়। বৃষ্টি হলে গাড়ি চলাতো দূরের কথা পায়ে হেটেও যাওয়া যায় না।’

এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন- ‘অর্থ সংকটের কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে। অর্থ মন্ত্রনালয় থেকে অর্থ ছাড় হলেই কাজ শুরু হবে। এ ব্যাপারে সব সমস্যা সমাধান করে দ্রুত কাজ শুরু করতে বার বার সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাগিদ দেয়া হচ্ছে। আসা করি দ্রুতই কাজ শুরু হবে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত