তপন কুমার দাস, বড়লেখা

০৭ জুন, ২০১৯ ১৬:০০

মাধবকুণ্ডে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়

দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় জলপ্রপাত মাধবকুণ্ড। মৌলভীবাজারের বড়লেখার পাথারিয়া পাহাড়ের পাদদেশ ঘেঁষা এই জলপ্রপাত বর্ষার তাঁর সমস্ত প্রাচুর্য নিয়ে, দেশ-বিদেশের হাজারো পর্যটকের জন্য অপার সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে সাজিয়ে রাখে নিজেকে। বর্ষায় জলপ্রপাতের আশপাশের সবুজ প্রকৃতি আর চা বাগানের দৃশ্য পর্যটকের মন ও দৃষ্টি কেড়ে নেয়।

এবারের ঈদুল ফিরের ছুটিতে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে ঝর্ণাধারার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। পর্যটকের পাদচারণায় মুখরিত জলপ্রপাত ও আশপাশের এলাকা। পর্যটকের আগমনে হাসি ফুটে উঠেছে পর্যটন এলাকার ব্যবসায়ীদের মাঝে।

ইজারাদার সূত্রে জানা গেছে, ঈদের দিন বুধবার, পরদিন বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত এ জলপ্রপাতে অন্তত ১৬ হাজার পর্যটকের আগমন ঘটেছে। স্থানীয় মানুষ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন উপজেলা, জেলা ও বিদেশী পর্যটকরা ঈদের ছুটিতে ভিড় করছেন মাধবকুণ্ডে। এতে বেচাকেনা ভালো হওয়ায় স্থানীয় পর্যটক কেন্দ্রিক ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটেছে।

একসময় বাংলাদেশের পর্যটকদের কাছে প্রাকৃতিক জলপ্রপাত মানেই ছিল মাধবকুণ্ড। এখন দেশের ভেতরে আরো অনেক জলপ্রপাতের সন্ধান মিলেছে। তবে এখনো জলপ্রপাত অনুরাগী পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ মাধবকুণ্ডই। তাই এ ঝর্ণাধারার সৌন্দর্য উপভোগে লোকজন ভিড় করেন। ঈদের ছুটিতেও ব্যতিক্রম ঘটেনি। পর্যটকের উপস্থিতি অনেক।

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা গেছে, দূর-দূরান্ত থেকে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবসহ নানা বয়সী মানুষ বাস, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় যানবাহনে করে মাধবকুণ্ডে আসেন। জেলা পরিষদের নির্মিত গাড়ি রাখার টার্মিনালে জায়গা না হওয়ায় আগত পর্যটকরা সড়কের ওপর গাড়ি পার্কিং করেন। এতে অনেকসময় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। দোকানগুলোতে জমজমাট বিকিকিনি হচ্ছে। জলপ্রপাতের পানিতে নানা বয়সী মানুষ সাঁতার কাটছেন। হইচই করছেন। প্রিয়জনদের ছবি ক্যামেরাবন্ধী করছেন। কিশোর-যুবকরা মেতেছেন জলখেলায়। এ সময় পর্যটকের মিলনমেলায় মুখরিত হয়ে উঠে জলপ্রপাত এলাকা।

পর্যটকদের চিত্ত বিনোদনের জন্য পর্যটন করপোরেশনের উদ্যোগে নির্মাণ করা হাতি, পেঙ্গুইন, মৎসকন্যা, বাঘ, ভালুক, বক, ঈগল পাখি, কুমির, বানর ইত্যাদির ভাস্কর্য মাধবকুণ্ডে আগত শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থীকে বাড়তি আনন্দ প্রদান করেছে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে নানা বয়সী মানুষকে এইগুলোর সাথে ছবি তুলতে দেখা গেছে।

বেসরকারি চাকুরীজীবী ইকবাল হোসেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে বন্ধুদের নিয়ে প্রথমবার বেড়াতে এসেছেন মাধবকুণ্ডে। ইকবাল বলেন, ‘অনেক ভালো লেগেছে। তবে আরো ভালো লাগত যদি ঝর্ণার পানি যে জায়গায় পড়ে ওখানে যেতে পারতাম। তৃপ্তি মিটত। ওখানে যেতে না পারার একটা আক্ষেপ থেকে যায়। তবে ওখানে যাওয়াটা তো বিপজ্জনক। এখানকার রাস্তার পাশের চা বাগান, খাসিয়া পুঞ্জি আর প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো মুগ্ধ করেছে।’

গাড়ি চালক ফরহাদ ভুঁইয়া বলেন, ‘মাধবকুণ্ডের আশপাশের সবুজ প্রকৃতি অনেক ভালো লেগেছে। দিন দুপুরে ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ মনকে অন্যরকম করেছে। মন খারাপ অবস্থায় থাকা কোনো মানুষ যদি এখানে আসে। তাঁর মন ভালো হয়ে যাবে। দৃশ্যগুলো দেখে।’

ঈদের ছুটিতে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে বেড়াতে আসা দৈনিক জালালাবাদ এর নির্বাহী সম্পাদক আবদুল কাদের তাপাদার বলেন, ‘মাধবকুণ্ডের সমস্যা ও সম্ভাবনার দিকে নজর দেওয়া উচিত। এর সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য বেশি করে বড় প্রকল্প নেওয়া উচিত। এতে সারা বছর হাজার হাজার পর্যটক আসবে। সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব পেতে পারে।’

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের ইজারাদার সেলিম আহমদ বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে দেশের বিভিন্ন জায়গার পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশী পর্যটকরাও মাধবকুণ্ডে বেড়াতে আসছেন। প্রতিদিন পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। বুধবার থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় ১৬ হাজার পর্যটকের আগম ঘটেছে। আমরা সবসময় নজর রাখছি, যাতে পর্যটকদের কোনো সমস্যা না হয়।’

মাধবকুণ্ড পর্যটন পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ভানু লাল রায় বলেন, ‘পর্যটকের নিরাপত্তায় কাজ করছি আমরা। অনেক পর্যটক পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পাহাড় চূড়ায় উঠতে চায়, সে দিকেও সর্তক দৃষ্টি রাখতে হয়। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি।’

হাকালুকি হাওর : অন্যদিকে এবারের ঈদ বর্ষাকালে হওয়ায় এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ জলাভূমি হাকালুকি হাওরের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দর্শনার্থীর আগমন ঘটেছে। হাওরের নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করার জন্য বন বিভাগের নির্মাণ করা ওয়াচ টাওয়ার, জল সিড়ি দৃষ্টি কেড়েছে সবার।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত