এস আলম সুমন, কুলাউড়া

০৫ আগস্ট, ২০১৯ ০০:৫৩

ট্রেন ছাড়ার সময় নেই স্টেশন মাস্টার, টিকিট কাউন্টারও ফাঁকা

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া রেল স্টেশন

রেল স্টেশনগুলোতে ট্রেনের ইলেকট্রনিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণের জন্য অভিজ্ঞ স্টেশন মাস্টার দায়িত্বে থাকেন। অথচ দায়িত্বরত স্টেশন মাস্টার বাসায়, আর তাঁর দায়িত্ব পালন করছেন একজন পয়েন্টম্যান। শনিবার ভোর ৪টার মৌলভীবাজারের কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে ঘটেছে এমন ঘটনা।

একই সময় স্টেশনের টিকিট কাউন্টারও ছিলো ফাঁকা। টিকিট বিক্রির জন্য কেউ নেই কাউন্টারে।

সম্প্রতিক সময়েই একদিনের ব্যবধানে কুলাউড়া রেল স্টেশনের সিগন্যাল পয়েন্টে দুইবার ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত্য হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এমন দুর্ঘটনার পর দায়িত্বরত কর্মকর্তারা আরও দায়িত্বশীল হওয়ার কথা থাকলেও কুলাউড়া স্টেশনে দেখা গেছে উল্টোচিত্র।


জানা যায়, শনিবার সকালে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা আন্তনগর উপবন ট্রেনযোগে সিলেট যাওয়ার জন্য নির্ধারিত সময়ের কিছু আগে কুলাউড়া স্টেশনে পৌঁছে টিকিটের জন্য কাউন্টারে জড়ো হন যাত্রীরা। টিকিট কাটতে গিয়ে দেখেন, কাউন্টারে তালা, ভেতরে নেই কোনো টিকিট বিক্রেতা। রুমে লাইট ফ্যান ও কম্পিউটার ঠিকই চলছে। ট্রেন চলে আসায় বাধ্য হয়ে টিকিট ছাড়াই ট্রেনে ওঠেন তাঁরা। গন্তব্যে পৌঁছানোর পর বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণের দায়ে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।

ভুক্তভোগী পাঁচজন যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে আসা আন্তনগর উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনে করে সিলেট যাওয়ার জন্য শনিবার দিবাগত রাত পৌনে চারটায় কুলাউড়া রেলস্টেশনে যান তাঁরা। আগে থেকেই কাউন্টারের সামনে আরও ১০-১৫ জন যাত্রী টিকিটের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু কাউন্টারের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে বাতি জ্বলছে, পাখা ঘুরছে, কিন্তু কোনো টিকিট বিক্রেতা নেই। দরজার বাইরে ঝুলছে তালা। টিকিট বিক্রেতার খোঁজ করতে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে গেলে দায়িত্বরত মাস্টারকে পাওয়া যায়নি। মাস্টারের দায়িত্ব পালন করছেন পয়েন্টম্যান আব্দুল খালিক। কাউন্টারে কোন লোক নেই ও মাস্টার কোথায় জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি পয়েন্টম্যান আবদুল খালিক। এ সময় ট্রেন চলে এলে বাধ্য হয়েই ট্রেনে উঠে পড়েন যাত্রীরা।

কিন্তু সিলেট পৌঁছানোর পর ভোগান্তিতে পড়তে হয় এই যাত্রীদের। বিনা টিকিটে রেলভ্রমণের কারণে স্টেশনের ফটকে তাঁদের আটকে রাখেন নিরাপত্তাকর্মীরা। পরে বিস্তারিত ঘটনা খুলে বললে ছাড়া পান তাঁরা।

ভুক্তভোগী এক যাত্রী জানান, অসুস্থ মাকে নিয়ে সিলেটে এক চিকিৎসকের চেম্বারে যাচ্ছিলেন তিনি। কাউন্টারে গিয়েও টিকিট কিনতে না পারায় বাধ্য হয়েই টিকিট ছাড়া ট্রেনে ওঠেন তিনি। পরে সিলেট স্টেশনে নেমে ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাঁকে।

সিলেটগামী ট্রেন যাত্রী বয়োবৃদ্ধ আব্দুল বারী, সায়েদ হোসেন ও রুবেল মিয়া বলেন, ট্রেনের সময় কাউন্টারে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে টিকেট প্রদানের জন্য দায়িত্বরত কাউকে পাওয়া যায়নি। বাধ্য হয়ে টিকেট ছাড়া ট্রেনে উঠতে হয়েছে। কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টারকেও তাঁর রুমে পাওয়া যায়নি। সেখানে একজন কর্মচারী ট্রেনের সিগন্যাল দেওয়ার কাজ করছেন। প্রায় সময় ভোর ৪ টার দিকে আসলে কাউন্টার খালি থাকে তাই টিকেট না করেই যেতে হয়। সিলেট স্টেশনে চেকিংয়ের সময়টিকেট না থাকায় জরিমানাসহ ঢাকা থেকে সিলেটর ভাড়া দিতে হয়।

কুলাউড়া স্টেশনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনিবার রাতে টিকিট কাউন্টারে প্রধান বুকিং সহকারী মো. মহসীন ও কর্তব্যরত মাস্টার হিসেবে সহকারী স্টেশন মাস্টার পার্থ তালুকদার দায়িত্বে ছিলেন। অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য জানতে রোববার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাঁরা ফোন ধরেননি।

জানতে চাইলে কুলাউড়া রেল স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত মাস্টার মুহিব উদ্দিন বলেন, নির্ধারিত সময়ে মাস্টার না থাকার বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। বুকিং সহকারীরা রেলের বাণিজ্যিক বিভাগের আওতাধীন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত