বড়লেখা প্রতিনিধি

২৭ আগস্ট, ২০১৯ ২৩:২৮

বড়লেখার সমস্যার কথা শুনলেন জেলা প্রশাসক

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে মতবিনিময় করেছেন জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুপুর ১২টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এই মতবিনিময় সভা শুরু হয়।

সভায় বক্তারা বড়লেখা উপজেলার সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান, ইভটিজিং, বিদ্যুৎ বিভ্রাট, পৌর বর্জ্যে পথচারী ও নাগরিকের দুর্ভোগ, চা-বাগান এবং পাহাড়ি দুর্গম এলাকা বোবারতলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, নদী ভাঙন রোধ, হাকালুকি হাওরের পর্যটন শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে রাস্তা প্রশস্তকরণসহ স্থানীয় বিভিন্ন সমস্যা-সম্ভাবনা ও দাবি উত্থাপন করেন। পরে জেলা প্রশাসক তার পক্ষ থেকে সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেন।

বড়লেখা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজন অনুষ্ঠিত সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম আল ইমরানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শরীফ উদ্দিনের সঞ্চালনায় উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ডা. প্রণয় কুমার দে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার উদ্দিন, পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তাজ উদ্দিন, নারী ভাইস চেয়ারম্যান রাহেনা বেগম হাছনা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল লতিফ, বড়লেখা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সৈয়দ লুৎফুর রহমান ও নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন, চিকিৎসক শারমিন আক্তার, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিজ মিঞা, নিজ বাহাদুরপুর ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক, সুজানগর ইউপি চেয়ারম্যান নছিব আলী, তালিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ কান্তি দাস, দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন, নারী শিক্ষা একাডেমি অনার্স কলেজের উপাধ্যক্ষ একেএম হেলাল, বড়লেখা প্রেসক্লাবের সভাপতি অসিত রঞ্জন দাস, উত্তর শাহবাজপুর ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সেলিম আহমদ খান প্রমুখ।

বড়লেখা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তাজ উদ্দিন বলেন, “প্রতিদিন অবাধে ভারতীয় মহিষ আমাদের সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রবেশ করছে। মহিষের সাথে অপরাধীরাও আসতে পারে। অস্ত্র আসতে পারে। গুটিকয়েক সুবিধাভোগী মানুষ এই ব্যবসার সাথে জড়িত। বর্ডারে গুলি হচ্ছে। মানুষ মারা যাচ্ছে। এলাকার বদনাম হচ্ছে। এছাড়া আমাদের এলাকায় প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। মানুষ খুব কষ্ট করছে। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অজুহাত দেখায়। কিন্তু এটা মানার মতো নয়। এ সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান দরকার।”

বড়লেখা প্রেসক্লাবের সভাপতি অসিত রঞ্জন দাস বলেন, “বড়লেখা-শাহবাজপুর সড়কের যত্রতত্র পৌরসভার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। মানুষ খুব ভোগান্তিতে আছে। শহরে প্রবেশের ওই এলাকার রাস্তা ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে।”

নারী শিক্ষা একাডেমি অনার্স কলেজের উপাধ্যক্ষ একেএম হেলাল বলেন, “প্রতিদিন স্কুল শুরু ও ছুটির সময় বখাটের উৎপাত থাকে বিদ্যালয় এলাকায়। মেয়েদের বিরক্ত করা হচ্ছে। শব্দ করে মোটরসাইকেল চালানো হচ্ছে।”

আল্লাদাদ চা-বাগানের ব্যবস্থাপক মিন্টু কুমার দেব রায় বলেন, “চা-বাগানের রাস্তার কাঠের কালভার্টগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। চা-শ্রমিকদের চলাচলে খুব কষ্ট হয়। ভারী বর্ষণে পাহাড়ি রাস্তা ভেঙে যায়। এদিকে কোনো দৃষ্টি নেই। সমস্যাগুলোর সমাধান করা খুবই জরুরি।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন বলেন, “যুব সমাজ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে তারা অপরাধ করছে। মেয়েদের স্কুলের রাস্তার পাশে দাঁড়ানোসহ। কিন্তু তারা তাদের তারুণ্যের যে শক্তিটা, এর সদ্ব্যবহার করছে না। ভালোভাবে লেখাপড়া করছে না। বিশেষ করে স্কুলগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মেয়েদের উপস্থিতি বেশি। ছেলেদের কম। তারুণ্যের শক্তিটাকে মোটিভেশনের মাধ্যমে কাজে লাগাতে হবে। এই কাজগুলো করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে। বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে বেকার ছেলেদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এতে বেকার থাকবে না কেউ। কোনো না কোনো কাজে তাঁরা যোগ দিতে পারবে। বেকার ছেলেদের প্রশিক্ষিত করে না তুললে। নারীদের প্রশিক্ষিত না করলে, কাজ না দিলে, ২১ সালে আমাদের যে এজেন্ডা বাস্তবায়ন হবে না।”

এছাড়া তিনি ইভটিজিং, লোডশেডিং, সীমান্ত দিয়ে অবাধে মহিষ ঢোকার বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অন্যান্য সমস্যাগুলো পর্যায়ক্রমে সমাধানের কথা বলেন জেলা প্রশাসক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত