নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ অক্টোবর, ২০১৯ ১৮:৩৩

সিলেট থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধের প্রস্তাব

সিলেটে সেমিনারে বক্তারা

চাহিদার মাত্র ২০ শতাংশ পাথর দেশের কোয়ারিগুলো থেকে উত্তোলন করা হয়। আর সব পাথর কোয়ারি মিলিয়ে সরকার বছরে রাজস্ব আদায় করে মাত্র ৩৬ কোটি টাকা।

সোমবার সিলেটে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য দিয়ে বক্তারা দাবি করেন, পাথর উত্তোলন ও পাথর ভাঙ্গার মাধ্যমে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের যে ক্ষতি করা হয় তা হাজার কোটি টাকার বেশি। এ জন্য দেশে পাথর উত্তোলন বন্ধ ও আমদানির ক্ষেত্রে ভাঙ্গা পাথর আমদানির উপর জোর দেওয়া প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তারা। বক্তারা পাথর উত্তোলন ও ভাঙ্গার বদলে পর্যটন খাতে বিনিয়োগ অধিক সম্ভাবনাময় ও পরিবেশবান্ধব উল্লেখ করে পাথর ব্যবসায়ীদের পর্যটন খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

সোমবার দুপুরে সিলেটের একটি হোটেলের হলরুমে ‘স্টোন ক্রাশার মেশিনের অবৈধ ব্যবহার : জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিপর্যয় রোধে করণীয়’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। বেলা’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেটের জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল হক।

সেমিনারে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক, পরিবেশবিদসহ বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিত্বশীলরা অংশ নেন।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুরসহ সীমান্তবর্তী উপজেলার নদী থেকে দীর্ঘদিন ধরেই পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে ওই এলাকার নদীগুলো প্রায় ধ্বংস হয়ে পড়েছে। নদীতে আর পাথর না এখন টিলা বনজঙ্গল কেটে পাথর উত্তোলন করছে একশ্রেণীর ব্যবসায়ীরা। এছাড়া সিলেটের তামাবিল, ভোলাগঞ্জসহ কয়েকটি শুল্ক স্টেশন ও স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হয় বিপুল সংখ্যক বোল্ডার পাথর। উত্তোলিত ও আমদানিকৃত এসব পাথর ভাঙ্গার জন্য সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠেছে দেড় সহস্রাধিক পাথর ভাঙার কল। এই কলগুলোর ধুলো ও শব্দ জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশকে করছে বিপর্যস্ত। এসব কল একজায়গায় নিয়ে একটি একটি জোন স্থাপনে ২০১৬ সালে উচ্চ আদালত একটি নির্দেশনা দিলেও আজ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি।

এনিয়ে ২৮ অক্টোবর পূর্বাহ্নে সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরডটকম-এ ‘সিলেটে স্টোন ক্রাশার জোন/ ৩ মাসের নির্দেশনা ৩৩ মাসেও বাস্তবায়ন হয়নি’ এই শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে একইদিনে এই সেমিনারের আয়োজন করে বেলা।

এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল হক বলেন, দেশের অন্যতম সুন্দর এলাকা ছিলো গোয়াইনঘাটের জাফলং। এটি প্রায় ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। জাফলংয়ের বড় সমস্যা হচ্ছে পাথর। কয়েকজন ব্যবসায়ী নিজেদের স্বার্থে পাথর উত্তোলন বন্ধে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে।

তিনি বলেন, বলা হয় পাথর কোয়ারি ও পাথর ভাঙ্গার কলগুলোতে লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করে। তাই এদের স্বার্থে এগুলো বন্ধ করা যাবে না। কিন্তু আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি, এসব স্থানে যেসব শ্রমিকরা কাজ করে তাদের ২০ শতাংশই শিশু। ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ সিলেটের বাইরের লোক। ১০ থেকে ২০ শতাংশ স্থানীয় লোক। এই ১০ থেক ২০ শতাংশ লোককে অন্য পেশায় সহজেই স্থানান্তর সম্ভব। এক্ষেত্রে পর্যটন হতে পারে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত।

তিনি বলেন, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় আমাদের পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। আর আমদানির ক্ষেত্রে বোল্ডার পাথরের বদলে ভাঙ্গা পাথর আমদানি করতে হবে। ফলে আপনাআপনিই পাথর ভাঙ্গার কল বন্ধ হয়ে যাবে। আমি গত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কাছেও এই প্রস্তাব রেখেছি। তিনিও তাতে সম্মতি দিয়েছেন।

‘স্টোন ক্রাশার জোন’ স্থাপনে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা গোয়াইনঘাটে একটি জায়গা নির্ধারণ করে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এখন পরিবেশ মন্ত্রণালয় নাকি খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এটি বাস্তবায়ন করবে এনিয়ে আলোচনা চলছে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধে বেলা, সিলেটের সমন্বয়ক শাহ শাহেদা আক্তার পাথর ভাঙ্গার কল নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ক্রাশিং জোন স্থাপন করা, অবৈধভাবে স্থাপিত ক্রাশিং মেশিন উচ্ছেদ করা, ক্রাশিং জোনের জন্য পরিবেশ সম্মত জায়গা নির্ধারণ করার প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন।

বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হক বলেন, এখন একটি জোন স্থাপন করলেই কোনো সমাধান হবে না। কারণ পাথর ভাঙ্গার কলের সংখ্যা এখন প্রায় দুই হাজার ছাগিয়ে গেছে। একটি দুটি জোন করে এগুলোর স্থান সংকুলান হবে না। তাই পাথর ভাঙ্গার কলের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। যাতে পরিবেশের কম ক্ষতি হয়। এছাড়া এই কলগুলো অর্থনীতিতে কেমন ভূমিকা রাখছে সেটিও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। খুব গুরুত্বপূর্ণ কোনো ভ’মিকা না থাকলে এই কলগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত।

সেমিনারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মহুয়া মমতাজ, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদউল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত