মোসাইদ রাহাত, সুনামগঞ্জ

২৩ জানুয়ারি, ২০২০ ২৩:০৯

হাওরপাড়ের শিক্ষার্থীদের বন্ধু ইউএনও রুমা

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঝে নিজ উদ্যোগে বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ সামগ্রী বিতরণ করে চলেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়ামিন নাহার রুমা।

জানা যায়, ইয়াসমিন নাহার রুমা ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেয়ার প্রথম দিন থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন সাধারণ মানুষের উপকার করার। তাই প্রতিশ্রুতি মতো প্রতিমাসে তার বেতন থেকে টাকা জমিয়ে সুনামগঞ্জের প্রাথমিক পর্যায়ের শিশুদের হাতে তুলে দিচ্ছেন খাতা, বই, কলম, পেন্সিল, নতুন রং পেন্সিল, স্কুলব্যাগ, স্কুলড্রেস, ডাইরি. টুথব্রাশ, ব্যাগ, নেইল কাটার, চকোলেট ও ছাতার মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।

মূলত সুনামগঞ্জে শিক্ষার হার বাড়ানো, হাওরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার প্রতি মনযোগী হওয়া ও প্রাথমিকে ছাত্র-ছাত্রীদের ঝড়ে পরা রোধ করতেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়ামিন নাহার রুমার এ উদ্যোগ। এছাড়াও তিনি হাওরের বোরো ফসল তুলা থেকে শুরু করে বন্যা মোকাবিলায় সর্বাত্মকভাবে মানুষের পাশে থেকে কাজ করছেন।

জানা যায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়ামিন নাহার রুমা সুনামগঞ্জে আসার পর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করেছেন ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব। যার মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইংরেজি ভীতি দূরীকরণে কাজ করছে সর্বাত্মক। তাছাড়া বিভিন্ন সময় নিজেকে পরিচয় করিয়েছেন একজন মানবিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে।

ইতিমধ্যে তিনি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন রং পেন্সিল, নতুন স্কুল ব্যাগ, টুথ ব্রাশসহ, ডাইরি দিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের। যার ধারাবাহিকতায় আজ বৃহস্পতিবার সকালে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের পুরান লক্ষণশ্রী গুচ্ছগ্রাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীদের মধ্যে এসব জিনিস তুলে দেন তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে এসব নতুন উপহার পেয়ে আনন্দে উচ্ছ্বাসিত লক্ষণশ্রী গুচ্ছগ্রামের শিক্ষার্থীরা। তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন নাহার রুমাকে ধন্যবাদ প্রদানের পাশাপাশি এটাও আশ্বাস দিয়েছে তারা মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করবে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান তালুকদার বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনায় মনযোগী করতে যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমাদের সুনামগঞ্জে এরকম অনেক অবহেলিত বিদ্যালয় রয়েছে সবার উচিত এরকম এগিয়ে আসা, তাহলেই সুনামগঞ্জে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাবে।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন নাহার রুমা বলেন, আমি সুনামগঞ্জে আসার পর থেকে সুনামগঞ্জের শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নের একটি পরিকল্পনা ছিল। আমি চাই হাওরাঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রীরা যেনো পড়াশুনায় মনযোগী হয়। কারণ বর্তমান সময়ে পড়াশুনার বিকল্প নেই। তাই আমি সুনামগঞ্জে এসে সবার আগে দেখতে পাই এখানের ছেলে-মেয়েরা ইংরেজিতে কথা বলতে ভয় পায়। তাই আমি একটি ক্লাব করি। যেখানে প্রতি শুক্রবার মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ইংরেজি শিক্ষা ও কথা বলানো হয়।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমার কাজ সুনামগঞ্জের অবহেলিত বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি শতভাগ করা। কারণ একটি বিদ্যালয়ে শতভাগ শিক্ষার্থীরা না আসলে সেটা আমাদের জন্য ক্ষতি হবে এবং ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতি হবে। তাই আমি আমার ব্যক্তিগত টাকায় ওইসকল বিদ্যালয়গুলোতে ডাইরি, নেইল কাটার, নতুন রং পেন্সিল, স্কুল ব্যাগ দিচ্ছি।

ইয়াসমিন নাহার রুমা বলেন, শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা ছাড়া শিশুর সুশিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব না। তাই প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেইলকাটার, নিয়মিত দাঁত মাজার জন্য টুথপেস্ট ও টুথব্রাশ দিয়েছি। কারণ, হাত ও মুখ পরিষ্কার থাকা নিশ্চিত করতে পারলে শিশুরা অনেক রোগ বালাই থেকে রক্ষা পেয়ে যাবে। শিশুদের বিদ্যালয়ে মনোযোগী করতে প্রত্যেক ক্লাসে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হওয়া শিক্ষার্থীদের পুরস্কার হিসেবে স্কুল ব্যাগ, রং পেন্সিল দিয়ে হাওর এলাকার শিশুদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করা হচ্ছে। তাছাড়া প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে পঞ্চম শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীদের ডাইরি দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, এটা শুধু আমার একার কাজ না। আমি চাই সুনামগঞ্জের সবাই সুনামগঞ্জের শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করে যাক। তার জন্য যদি উপজেলা প্রশাসনের কোন সহায়তা প্রয়োজন হয় অবশ্যই আমরা সহায়তা করবো। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত