নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ জানুয়ারি, ২০২০ ১৯:০৭

বিয়েবাড়ি পরিণত হলো পোড়াবাড়িতে, উৎসব রূপ নিলো শোকে

সুভাষ রায়ের মেয়ে প্রিয়াংকা রায়ের বিয়ে হয়েছে চারদিন আগে। সোমবার ছিলো বৌভাত। বিয়ে বাড়িতে তখনও আনন্দের রেশ লেগে আছে। সবখানে উৎসবের আমেজ। বিয়ে-বৌভাতের ঝামেলা শেষ করে সোমবার রাতে কিছুটা বিশ্রামের সুযোগ পেয়েছিলেন সুভাষ রায়ের পরিবারের স্বজনরা। ফলে মঙ্গলবার সকালে অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়েই ছিলেন পরিবারের অনেকে। এই ঘুমের মধ্যেই ঘটে যায় ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনাটি।

সুভাষ রায়ের বাসা মৌলভীবাজার শহরের সাইফুর রহমান সড়কে। বাসা দু' তলায়। নিচ তলায় নিজের মালিকানাধীন জুতার দোকান। 'পিংকি সু স্টোর'। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই দোকানে হঠাৎ আগুন লেগে যায়। মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে পড়ে দোতলার বাসায়ও। বাড়ির বেশিরভাগ লোককেই ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ দেয়নি আগুন। ঘরের ভেতরেই পুড়ে মারা যান ৫ জন।



মাত্র একদিনের ব্যবধানে বিয়েবাড়ি পরিণত হয় পোড়াবাড়িতে। আগেরদিনও যে বাড়িতে লেগেছিলো উৎসবের আমেজ, আনন্দে মেতেছিলো সবাই একরাতের ব্যবধানে সে বাড়ি এখন শোকস্তব্দ।

অগ্নিকাণ্ডে সুভাষ রায় (৬৫) ছাড়াও সুভাষ রায়ের মেয়ে প্রিয়া রায় (১৯), ভাইয়ের স্ত্রী দীপ্তি রায় (৪৮), শ্যালকের স্ত্রী দিপা রায় (৩৫) এবং দিপা রায়ের মেয়ে বৈশাখী রায় (৩) মারা যান।

প্রিয়াংকার বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই ছেলেমেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন দিপা রায়। আজকালের মধ্যেই সবাইকে নিয়ে হবিগঞ্জে নিজের বাড়িতে ফেরার কথা দীপার। কিন্তু  বাড়ি ফেরা আর হল না তার। এর আগেই আত্মীয়ের বাড়িতেই পুড়ে ছাই হল দিপা রায় ও তার তিন বছরের মেয়ে বৈশাখী রায়।



অগ্নিদগ্ধ বাড়ি থেকে কোনরকমে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন সুভাষ রায়ের ভাই প্রণয় রায় মনা। কিন্তু আগুন আর মৃত্যুর এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে ঘরের বাইরেই হার্ট অ্যাটাক করেন তিনি। তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

দিপা রায়ের আত্মীয় কল্প রায় জানান, কয়েকদিন আগেই আত্মীয়ের বিয়েতে যোগ দিতে মৌলভীবাজারে আসেন দিপা রায়। তার গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার উমেদনগরে।

তিনি জানান, পিংকি স্টোর নামের যেই দোকানটি থেকে ভয়াবহ আগুনের সূত্রপাত হয় সেই দোকানের উপরের বাসাতেই আত্মীয়দের সাথে তার এক ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে অবস্থান করছিলেন দিপা রায়। আগুন লাগার পর বাসার অন্যান্য সদস্যদের মতো দিপা রায়ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে ওই বাসায় আটকা পড়েন। প্রাণ বাঁচাতে আরও অনেকের সাথে তার ছেলে বাসার বাইরে বেরিয়ে আসতে পারলেও ছোট মেয়ে বৈশাখীকে নিয়ে বের হতে পারেন নি মা দিপা রায়। ফলে অন্য ৩ জনের সাথে মারা যান তারাও।

তাদের প্রতিবেশী ঝুনু রায় জানান, সুভাষ রায়ের বড় মেয়ে প্রিয়াংকা রায়ের বিয়ে হয় গত ২২ জানুয়ারি। ২৭ জানুয়ারি ছিলো বৌ-ভাত। বিয়ে উপলক্ষে অনেক আত্মীয় স্বজন এসেছিলেন তাদের বাড়িতে। সুভাষ রায়ের শ্যালকের পরিবারও তাদের বাসায় ছিলেন।



প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের সাইফুর রহমান রোডের পিংকি সু স্টোরে গ্যাসের লাইন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। অগ্নিকাণ্ডে আহতদের মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়।

মৌলভীবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স উপ-পরিচালক মোঃ আব্দুল্লাহ  হারুন পাশা জানান, ঘরের ভিতরে একটি গ্যাস রাইজার ছিলো তাদের ধারণা বৈদ্যুতিক সর্ট সার্কিট থেকে রাইজারে আগুন লাগে।

মৌলভীবাজার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মল্লিকা দে জানান, এটি একটি মর্মান্তিক ঘটনা। এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে মৃতদেহ সৎকারের জন্য ১ লক্ষ টাকা করে সহায়তা প্রদান করেছে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন।

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া সুলতানাকে প্রধান করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত