মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

৩০ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:২৪

বাবা-বোনের কাছে ফেরা হলো না প্রিয়াঙ্কার

২২ জানুয়ারি বিয়ে হয়েছিলো প্রিয়াঙ্কা রায়ের। ২৭ জানুয়ারি হয় বৌভাত। শুক্রবার ফিরাযাত্রায় স্বামীকে নিয়ে তার বাবার বাড়িতে ফেরার কথা ছিলো। তবে তার দু'দিন আগে মঙ্গলবার ঘটে যায় ভয়াবহ এক দুর্ঘটনা।  

মৌলভীবাজার শহরের সাইফুর রহমান সড়কের প্রিয়াঙ্কাদের দোকান ও ঘরে আগুন লেগে যায় মঙ্গলবার। ভয়াবহ সেই আগুনে পুড়ে মারা যান প্রিয়াঙ্কার বাবা-বোনসহ ৫জন। ফলে আর বাবা-বোনের কাছে ফেরা হলো না প্রিয়াঙ্কার।

জানা গেছে, আগুন লাগার সময় ওই বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনসহ মোট ১২ জন অবস্থান করছিলেন। একটি বিয়ের অনুষ্ঠানকে ঘিরে সবাই জড়ো হয়েছিলেন বাড়িটিতে। গত ২২ জানুয়ারি ছিল প্রিয়াংকার বিয়ে। শুক্রবার স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়ি আসার (ফেরা যাত্রায়) কথা ছিল তার। এরই মধ্যে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় বাবা, বোন, কাকী মামী আর মামাতো বোনকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন প্রিয়াংকা। বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি। যখনই জ্ঞান ফিরছে বোন, বাবাকে ডেকে বিলাপ করছেন- “বাবা তোমার সাথে আর দেখা হল না,” “আমার আদরের বোন তুই কই”।

বুধবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আগুনে ভষ্ম হয়ে যাওয়া বাসার পাশেই একটি বাসায় অবস্থান করছেন প্রিয়াংকার মাসহ আত্মীয় স্বজনরা। প্রতিবেশীরা বারবার সান্তনা দিতে গিয়ে তারাও চোখের পানি ফেলছেন। বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন মা-মেয়ে।

কান্না করতে করতে প্রিয়াংকা বলেন, 'বাবা আমাকে আগের রাতে ফোন দিয়েছিলেন। বারবার বলছিলেন আসতে ভুল করিস না । শুক্রবারে (৩০ জানুয়ারি) বাবার বাড়িতে আসার কথা ছিল। বাবা বারবার বলছিলেন “শুক্রবারে আসতে মিস করিস না মা”। আগুন লাগার আগের রাতে বাবার সাথে সর্বশেষ কথা হয় তখনো বাবা বলছিলেন “শুক্রবারে আসতে মিস করিস না মা”।

ওইদিনের আগুনে পুড়ে প্রিয়াংকার বাবা পিংকি সু স্টোরের মালিক সুভাষ রায় (৬৫) ও প্রিয়াংকার ছোট বোন প্রিয়া রায় (১৯) নিহত হয়েছেন। এছাড়া প্রিয়াংকার কাকী দিপ্তী রায় (৪৮), প্রিয়াংকার মামী স্ত্রী দীপা রায় (৩৫) ও প্রিয়াংকার মামাতো বোন বৈশাখী রায় (৩) মারা যান।

বাসার নিচ তলার নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান  “পিংকি সু স্টোর” থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়।

আগুনে পুড়ে যাওয়া দোকানের কর্মচারী দেবাশীষ দাস জানান, গত ২২ তারিখ শহরের কলিমাবাদ এলাকার ব্যবসায়ী সুমন রায়ের সাথে বিয়ে হয় প্রিয়াংকার। আর গত সোমবার শহরে সাদিয়া সেন্টারে ছিল বউভাত। বিয়ের দিনে স্বামির বাড়ি যাওয়ার সময় ছোট ভাই সৌম্য রায়কে (১০) নিজের সাথে স্বামীর বাড়ি নিয়ে যান প্রিয়াংকা। কথা ছিল শুক্রবার ফেরাযাত্রায় বাবার বাড়িতে স্বামীকে নিয়ে আসবেন, সাথে ছোট ভাইকেও নিয়ে আসবেন।

নির্ধারিত দিনের দু'দিন আগেই ফিরলেন প্রিয়ঙ্কা। ভাইকেও নিয়ে আসলেন। তবে ততক্ষণে বাবার বাড়ি আর নেই। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনে পুড়ে মারা গেছেন বাবা সুভাষ রায়ও।

প্রিয়াংকার এক বোন আগুনে মারা গেলেও আরেক বোন পাপিয়া রায় বেঁচে গেছেন।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টার পর শহরের সাইফুর রহমান রোডের পিংকি সু স্টোরে আগুনের সূত্রপাত হয়। এ সময় উপরের বাসায় ঘরের ভেতর ১২ জন অবস্থান করছিলেন। আটকা পড়াদের মধ্যে ৭ জন বের হতে পারলেও পাঁচজন মারা যান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত