সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

২৯ জানুয়ারি, ২০২০ ২১:১৩

ফসলরক্ষা বাঁধের কারিগরি প্রতিবেদন পেশ করতে পারেনি ৬ উপজেলা

সুনামগঞ্জে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ

সুনামগঞ্জের হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে সংশোধিত কাবিটা নীতিমালা ২০১৭ অনুযায়ী কাবিটা স্কিম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জেলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা, জগন্নাথপুর উপজেলা, জামালগঞ্জ উপজেলা, দিরাই উপজেলা, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা তাদের বাঁধের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ক কারিগরি রিপোর্ট প্রদান করলেও তাহিরপুর উপজেলা, ধর্মপাশা উপজেলা, দোয়ারাবাজার উপজেলা, ছাতক উপজেলা, শাল্লা উপজেলা, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা কারিগরি রিপোর্ট জমা দেওয়া কথা থাকলেও তারা কোন প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ৬ উপজেলা প্রতিবেদন পেশ না করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ।

সভায় নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন পেশ না করার বিষয়ে ওই সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা কারণ হিসেবে উপজেলা এলজিডি’ প্রকৌশলীদের সহায়তা না করাকেই দায়ী করা হয়েছে।

কাবিটা স্কিম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জেলা কমিটির সভায় জানানো হয়, এবছর সুনামগঞ্জে ৭২৫টি পিআইসির মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে ৬৮২টির এবং ১৩৫ টি ক্লোজারের মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে ১৩২টির।

সভায় কারিগরি প্রতিবেদন জমা না দেওয়ার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা বলেন, আমরা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিডি) এর উপজেলা প্রকৌশলী কর্মকর্তাকে বারবার বলা হলেও তারা এসকল বিষয়ে কোন গুরুত্ব দেননি। কয়েকজন উপজেলা এলজিডি প্রকৌশলী কর্মকর্তা অফিস করেন না এবং কেউ কেউ করলেও এখনো বাঁধে না যাওয়ায় তারা এখনো কোন প্রতিবেদন তৈরি করতে পারেননি বলে জানান তারা।

এব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, যেসকল উপজেলা এলজিডি প্রকৌশলীরা কাজ করেন না এবং তারা বাঁধের প্রয়োজনীয়তা ও কারিগরি রিপোর্ট পেশ করতে পারলে না আপনারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে তারা কাজ করছেন না এই মর্মে পত্র দেন বাকিটা আমি দেখে নিবো। যারা সরকারি কর্মকর্তা হয়ে কাজ করবেন না তাদের আমার এখানে থাকার দরকার নেই। আমি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিবো তারা কারিগরি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্ধারিত তারিখ ঠিক করে দেওয়ার পরেও কোন রিপোর্ট পেশ করতে পারেননি।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, বাঁধের কাজে কোন গাফিলতি সহ্য করবো না। যেসকল পিআইসি নিয়ে বিতর্ক আছে সেগুলো খুব ভালোভাবে যাচাই-বাচাই করে নিবেন। হঠাৎ করে কেন পিআইসি সংখ্যা বৃদ্ধি পেলো এখানে আসলেই বাঁধের প্রয়োজন আছেন কি না তা যাচাই-বাচাই করা সকলের দায়িত্ব।

এসময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের উপর অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আমি আপনাদের হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের প্রকল্প এলাকাগুলোতে সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়নি। স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এই বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। সাইনবোর্ড লাগানো আমাদের কাজ শুরু আগে লাগানোর কথা কিন্তু লাগানো হয়নি। তাছাড়া আপনাদের সকলকে আগামী রোববার পর্যন্ত বাঁধের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ক কারিগরি প্রতিবেদক জমা দেওয়ার শেষ সময় দেওয়া হলো। যদি এই সময়ের ভিতরে রিপোর্ট পেশ না করতে পারেন তাহলে আমরা অন্য রাস্তায় হাঁটবো তখন যদি আপনাদের বিপদে বা ঝামেলায় পরতে হয় আমরা তা দেখবো না।

তিনি বলেন, যেহেতু প্রি-ওয়ার্কের কাজ ট্যাকনিক্যাল বিষয় ও একটি নির্দিষ্ট সংস্থা এটি তৈরি করেছে এবং তাদের টাক্সফোর্স মাঠ পর্যায়ে গিয়ে যাচাই-বাচাই করেছে কিন্তু তারা জেলা কমিটি বা উপজেলা কমিটির সাথে কোন এই টাক্সফোর্সের বিষয়ে অবহত নয় এবং এখন পর্যন্ত কোন তথ্য তারা আমাদের দেয়নি। তাই আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের টাক্সফোর্সের মাধ্যমে যাচাই প্রতিবেদন চাই। কারণ তারা এবছর ১৫৩ টা প্রকল্প বাড়ানো হয়েছে সেটা যৌক্তিক কি না।

সভায় উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মো. এমরান হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শরিফুল ইসলাম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান, হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়, সাবেক পিপি অ্যাড. শফিুকল আলম প্রমুখ।  


আপনার মন্তব্য

আলোচিত