এস আলম সুমন, কুলাউড়া

২৯ জানুয়ারি, ২০২০ ২৩:০৮

কুলাউড়ায় ঠান্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব: এক সপ্তাহে শতাধিক শিশু আক্রান্ত

৪ সদস্যের মেডিকেল টিম গঠন

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক সপ্তাহে নিউমোনিয়া ও ঠান্ডা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে শতাধিক শিশু। গড়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ভর্তি হচ্ছেন। এরমধ্যে অনেকেই চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন।

বুধবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৩১ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদিকে রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ রাখতে ৫০ শয্যার কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চার সদস্যের একটিটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্যমতে, গত তিন মাসে কুলাউড়ায় নিউমোনিয়ায় ২৩৪জন ও  ডায়রিয়ায় ৬৭৮জন আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই ১ মাস বয়স থেকে শুরু করে ৫ বছর বয়সী শিশু। গত বছরের নভেম্বর মাসে নিউমোনিয়ায় ৭৭ জন ও ডায়রিয়ায় ২৫৪ জন, ডিসেম্বর মাসে নিউমোনিয়ায় ৮৭জন ও ডায়রিয়ায় ২৩২জন, চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত নিউমোনিয়ায় ৭৪জন ও ডায়রিয়ায় ২০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। বুধবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১১ জন নিউমোনিয়া রোগী ও ২০ জন ডায়রিয়া রোগী।

সরেজমিন হাসপাতালের আবাসিক ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু শাকিলকে নেবুলাইজার (গ্যাস) দিচ্ছেন তার মা স্বপ্না বেগম। তিনি উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের পশ্চিম সিঙ্গুর গ্রামের বাসিন্দা।

তিনি জানান, গত ৫দিন থেকে ৩ বছর বয়সী শিশু ছেলে শাকিলকে ভর্তি করেছেন কুলাউড়া হাসপাতালে।

রাউৎগাঁও ইউনিয়নের কবিরাজী গ্রামের বাসিন্দা সুমা বেগম জানালেন, ৪দিন থেকে দেড় মাস বয়সী শিশু ছেলেকে ভর্তি করেছেন, একই ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের রায়না বেগম জানান, তিনদিন থেকে ১৩মাস বয়সী শিশু ওমর ফারুক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ধামুলী গ্রামের রিনা বেগম জানান, সপ্তাহ খানেক থেকে দেড় বছর বয়সী শিশু হোসাইন নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ায় প্রাইভেট ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নেয়া হয়েছিলো। তবুও সুস্থ না হওয়ায় সন্তানকে রোববার থেকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এখন তাঁর সন্তান হোসাইন অনেকটা সুস্থ।

উপজেলায় ঠান্ডাজনিত রোগ প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. জাকির হোসেনকে প্রধান করে মেডিকেল অফিসার ডা. সুরভী সেন, মেডিকেল অফিসার ডা. নাজমুস সিয়াম রাফি ও মেডিকেল অফিসার ডা. সুমাইয়া বিনতে জাহানের সমন্বয়ে ৪ সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেলে এই টিমের মাধ্যমে দ্রুত সেবা দেওয়া হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ নুরুল হক বলেন, শীতের প্রকোপে বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিন নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাও বেড়ে চলছে হাসপাতালে। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে এবং এ সময়ে রোগ নিয়ন্ত্রণে ও দ্রুত সেবাদানের জন্য এই টিম সার্বক্ষণিক কাজ করে যাবে।

তিনি আরো বলেন, শীত কমে গেলে এসব রোগের প্রাদুর্ভাবও কমে যাবে। তাছাড়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় স্বাস্থ্য পরিদর্শকদের মাধ্যমেও সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখা হচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত